লাইফস্টাইল ডেস্কঃ
ফুসফুস ও হৃদপিণ্ড ছাড়াও সিগারেট চোখেরও ক্ষতি করে।
ধূমপানের কারণে ফুসফুস ও হৃদযন্ত্রের কী ক্ষতি হয় তা জানেন না এমন ধূমপায়ী খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তারপরেও ছাড়া হচ্ছে না এই বদভ্যাস।
তবে এবার গবেষকরা বলছেন, “ফুসফুস, হৃদযন্ত্র তো আছেই, দৃষ্টিশক্তিও নষ্ট হতে পারে ধূমপানের কারণে।”
ভারতের হায়দ্রাবাদে অবস্থিত এল. ভি. প্রসাদ আই ইনস্টিটিউট’য়ের প্রধান রাজা নারায়ানান বলেন, “চোখের পেছনে থাকে আলোর প্রতি সংবেদনশীল টিস্যু ‘রেটিনা’, যার মস্তিষ্কে প্রেরণ করা সংকেতের মাধ্যমে আমরা দেখতে পাই। অনেকটা ক্যামেরার ফিল্মের মতো কাজ করে এটি, ‘রেটিনা’য় পড়া আলোকরশ্মিকে কম্পনে রূপান্তরিত করে আমাদের দেখতে সাহায্য করে। আর এই পদ্ধতিকে নষ্ট করে দেয় ধূমপান।”
কীভাবে? নারায়ানান বলেন, “ধূমপানের কারণে রক্তে রাসায়নিক উপাদানের মাত্রা বেড়ে যায়, ফলে ‘রেটিনা’য় রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ কমে। এ কারণে ধূমপায়ীরা বয়সজনীত কারণে দৃষ্টিশক্তি হারান দ্রুত অর্থাৎ অল্প বয়সেই ‘রেটিনা’ ক্ষয়ে যায়। ডাক্তারি ভাষায় একে বলা হয় ‘এইজ রিলেটেড ম্যাকুলার ডিজেনারেশন (এএমডি)।”
‘সাইকায়াট্রি রিসার্চ’ শীর্ষক এক জার্নালে প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক গবেষণা মতে, ধূমপায়ীদের মধ্যে লাল-সবুজ এবং নীল-হলুদ রং দেখায় সমস্যা দেখা দেয়। এ থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, ‘নিউরোটক্সিক কেমিকেল’ যু্ক্ত উপাদান গ্রহণে এই দৃষ্টিশক্তি লোপ পাওয়া সমস্যা দেখা দেয়।
‘ক্যাটার্যাক্ট’, ‘গ্লুকোমা’ ইত্যাদি চোখের রোগের পেছনে ধূমপানের ভূমিকা রয়েছে। চোখের সামনের অংশে হওয়া রোগ সহজেই দেখা যায়, তবে ‘এএমডি’ ও ‘ডায়াবেটিক ম্যাকুলার ডিজিজ (ডিএমই)’র মতো ‘রেটিনা’র রোগ নীরবে বাড়তে থাকে এবং এক সময় দৃষ্টিশক্তি হারান রোগী।
মুম্বাই রেটিনা সেন্টার’য়ের চক্ষুবিশেষজ্ঞ অজয় দাদানি বলেন, “‘রেটিনা’র রোগের কারণে লোপ পাওয়া দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয় না। তবে প্রাথমিক অবস্থায় রোগ সনাক্ত করা গেলে তা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। উপসর্গ চিনতে পারাই প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয়ের প্রধান উপায়। তবে এই রোগের উপসর্গগুলোকে অনেকেই বার্ধক্যজনীত সমস্যা বলে অবহেলা করেন।”
যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চলতে হবে। কারণ ‘ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি’তে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তাদেরই সবচাইতে বেশি।
দাদানি বলেন, “বর্তমানে এই ধরনের রোগের অগ্রগতি মন্থর বা থামিয়ে দেওয়ার চিকিৎসা রয়েছে। এমন কিছু চিকিৎসা হল, ‘লেজার ফটোকোয়াগুলেশন’, ‘অ্যান্টি-ভাস্কুলার এন্ডোথেলিয়াল গ্রোথ ফ্যাক্টর ইঞ্জেকশন’ এবং দুই পদ্ধতির মিশ্র চিকিৎসা পদ্ধতি।”
ধূমপানের পাশাপাশি অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাসের সমস্যা, মানসিক চাপ, বৈদ্যুতিক পর্দার দিকে দীর্ঘক্ষণ চেয়ে থাকা, ইত্যাদির কারণে জনগনের মাঝে ‘রেটিনাল ডিজিজ’ও চোখের অন্যান্য রোগ ক্রমেই বাড়ছে।
নারায়ানান বলেন, “ধূমপান ত্যাগের জন্য চিকিৎসক কিংবা কোনো বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মাফিক চলতে পারেন। খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট-যুক্ত উজ্জ্বল রংয়ের ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়া ‘রেটিনা’র জন্য উপকারী। গাঢ় সবুজ রংয়ের পত্রল সবজি যেমন লেটুস পাতা, পালংশাক ইত্যাদিতে থাকে ‘লুটিইন’ এবং ‘জিয়াক্সানথিন’, দুটোই চোখের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। এছাড়া ভিটামিন ‘সি’ এবং ‘এ’ চোখের জন্য আবশ্যক।