নিউজ ডেস্কঃ
বয়সের সীমানা থেকে খসে জীবনের হালখাতায় যুক্ত হচ্ছে আরও একটি বছর। শনিবার দিনগত রাত পার হলেই সূর্যোদয় ঘটবে ১৪২৬ বঙ্গাব্দের। ইংরেজি নববর্ষের মতো বাংলা এ বর্ষকে বরণ করতে কক্সবাজার জেলার পর্যটন স্পটগুলোতে রং তুলির আঁচড় লেগেছে।
বাঙালির প্রাচীন ঐতিহ্য বৈশাখ উদযান উপলক্ষে কক্সবাজারে আয়োজন করা হচ্ছে মেলাসহ লোকজ নানান সাংস্কৃতিক উৎসবের। রঙ্গীলা পরশের মাঝে গ্রাম বাংলার নানা আলপনায় সাজানো হচ্ছে হোটেল-মোটেল জোনের তারকা হোটেলগুলো। অনেক হোটেল ঘোষণা করেছে অতিথিদের জন্য সাশ্রয়ী নানান প্যাকেজ। বৈশাখ বরণে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বের করা হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা।
ঈদ উৎসবের মতো লোকসমাগমের আশায় বাড়তি নিরাপত্তার লক্ষে তিনস্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে নববর্ষ মিলিয়ে তিন দিনের ছুটি পড়েছে। এ কারণে অন্যবারের চেয়ে জমবে বাংলা বর্ষবরণ। তাই বাংলা বর্ষবরণে কক্সবাজারে আসছেন ভ্রমণ পিপাসুরা। এ লক্ষে তারকা হোটেলসহ গেস্ট হাউস ও কটেজ এবং আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো আগাম বুকিং হয়ে গেছে।
অনেক ব্যবসায়ী ও চাকুরে পরিবার-পরিজন নিয়ে বৃহস্পতিবার কক্সবাজার এসে পৌঁছেছেন। চৈত্রের কাঠফাটা রোদের মাঝেও মেঘ-রুদ্দুর খেলায় সৈকতের ঢেউয়ের আচড় ছুঁয়ে আনন্দ উপভোগ করছেন আগত পর্যটকরা।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক)’র সদস্য ও দিগন্ত ট্যুরিজমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়ার মুহাম্মদ বলেন, বর্ষ হিসেবে এখন পর্যটন মৌসুম শেষ। এ সময়ে চৈত্র-বৈশাখের দাবদাহে কক্সবাজারে পর্যটক সমাগম কমই থাকে। কিন্তু ২০১৭ সালের শেষ সময় হতে পুরো বছর কক্সবাজারে কমবেশি পর্যটক উপস্থিতি রয়েছে।
তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস’র পরিচালক আবদুল কাদের মিশু জানান, ওশান প্যারাডাইস হোটেলই কক্সবাজারে বেসরকারিভাবে সর্বপ্রথম বাংলা নববর্ষ নিয়ে পৃথক অনুষ্ঠানের সূচনা করেছিল। অর্ধযুগ আগের সেই ধারাবাহিকতায় এবারও আগের চেয়ে আলাদা আয়োজন থাকছে। অন্য বছরের মতো, পহেলা বৈশাখের পরিবর্তে চৈত্র সংক্রান্তির দিন থেকে ২রা বৈশাখ তিনদিন বৈশাখী মেলার আয়োজন থাকছে। আয়োজনে আর কি রয়েছে সারপ্রাইজের জন্য রেখে দিয়েছি, অনুষ্ঠানেই তা দেখাতে চান বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আরেক তারকা হোটেল সায়মন বিচ রিসোর্টের ফুডস্ অ্যান্ড বেভারেজ (এফ এন্ড বি) ব্যবস্থাপক ইমরান হোসেন বলেন, বিগত বছরগুলোর ন্যায় বাংলা নববর্ষ বরণ উপলক্ষে এবারও হোটেল প্রাঙ্গণে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকছে। সাশ্রয়ী রেটে ছাড়া হচ্ছে বৈশাখী খাবারের বিশেষ আয়োজন।
‘বাঙালিয়ানার ষোলআনা’ পূর্ণ করতে হোটেলগুলোর আয়োজনে হাড়িভাঙ্গা, বালিশ খেলা এবং বাচ্চাদের ঝুঁড়িতে বল ছুড়া এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবেশনায় নৃত্যসহ লোকজ সংস্কৃতির নানা আয়োজন থাকে। ঘোষণা করা হয়েছে বৈশাখ উপলক্ষে সাশ্রয়ী প্যাকেজ।
এ ছাড়াও পৃথক আয়োজন করছে তারকা হোটেল কক্স-টু-ডে, সী-গাল, লংবীচ, বেস্ট ওয়েস্টার্ন, মারমেডসহ সবকটি বড় হোটেল-মোটেলে। তারকা হোটেলগুলো ইনডোরে নিজেদের মতো উৎসব আয়োজন করলেও অন্যান্য হোটেল গেস্ট হাউসগুলো প্রশাসন আয়োজিত র্যালি ও অনুষ্ঠানে যোগ দেবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
টুয়াক সম্পাদক আসাফ-উদ-দৌলা বলেন, নববর্ষে সপ্তাহিক মিলিয়ে তিন দিনের ছুটি পড়ায় বৃহস্পতিবার রাত থেকে শহর ও সাগরপাড়ের প্রায় হোটেলের কক্ষ আগাম বুকিং হয়ে রয়েছে। অল্প কক্ষ হাতে রেখে ওয়াকিং আসাদের সঙ্গে দরদামে একটু ভালো ব্যবসা করার চেষ্টা করবে হোটেল কর্তৃপক্ষ।
কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার জানান, শহরের আবাসিক হোটেল, গেস্ট হাউস, কটেজ ও সরকারি রেস্ট হাউসে লক্ষাধিক মানুষের রাত যাপনের সুবিধা রয়েছে। বৈশাখী ছুটিতেও কক্সবাজারে পর্যটকদের ভিড় থাকবে বলে আশা করা যায়। সমুদ্র সৈকত ছাড়াও সেন্টমার্টিন, হিমছড়ি, দরিয়ানগর, ইনানী, সাফারি পার্ক ও মহেশখালীর আদিনাথে পর্যটকদের পদচারণা পড়বে বলে আশা করছেন এ হোটেল মালিক।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, পর্যটন সম্ভাবনাময় শিল্প। পর্যটন বিকাশে বৈশাখের বৈচিত্র্যময় আয়োজন এবারও থাকছে কক্সবাজারে। জেলা প্রশাসন বৈশাখ বরণে সকালে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করবে। এরপর শহীদ দৌলত ময়দানে আয়োজন করা হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। এ আয়োজনে সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
সূত্রঃ জাগোনিউজ