অনলাইন ডেস্কঃ
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাস। নিজের কলেজপড়ুয়া মেয়েকে অপহরণের অভিযোগে কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন কুতুবদিয়ার বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ বাবুল। তার ১৯ বছর বয়সী মেয়েকে এলাকার পরিচিত কিছু ব্যক্তি অজ্ঞাতনামা কয়েকজনের সহযোগিতায় কলেজ থেকে বাড়িতে ফেরার পথে অপহরণ ও গুম করেছে- মর্মে অভিযোগ করেছিলেন তিনি। আদালত তার অভিযোগটি আমলে নিয়ে মামলার তদন্তভার দেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)।
দীর্ঘ ছয় মাস তদন্তের পর চাঞ্চল্যকর তথ্যসহ অপহরণ কাম গুম হওয়া সেই তরুণীকে ১১ এপ্রিল হাজির করেছে পিবিআই। এতদিন অপহৃত (!) মেয়েটি চট্টগ্রামের স্থানীয় একটি পোশাক কারখানায় কর্মরত ছিলেন। এমনটি জানিয়েছে পিবিআই কর্মকর্তারা।
দীর্ঘ সময়ের তদন্তে পিবিআই জানতে পারে, মেয়েটিকে তার বাবাই পোশাক কারখানায় রেখেছিলেন। মূলত মেয়ের প্রেমিকের পরিবার ও প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই মেয়েকে লুকিয়ে অন্যদের নামে মামলা দায়ের করেছিলেন নুর মোহাম্মদ বাবুল।
পিবিআই কক্সবাজার জেলা ইউনিটের পরিদর্শক মেজবাহ উদ্দিন এসব তথ্য জানিয়েছেন।
সোমবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি জানান, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে নুর মোহাম্মদ বাবুলের দায়ের করা মামলায় (৪৬০/২০১৮ইং) অভিযোগ করা হয়, কুতুবদিয়া মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ছিলেন তার মেয়ে। গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর কলেজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে মো. আলাউদ্দিনসহ মোট জ্ঞাতনামা চারজন ও অজ্ঞাতনামা ৩-৫ জন তার মেয়েকে জোরপূর্বক অপহরণ করে নিয়ে যায়। এরপর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন নুর মোহাম্মদ বাবুলের মেয়ে।
এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত অপহৃত ভিকটিমকে উদ্ধার ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেয়। পিবিআই কক্সবাজার ইউনিট মামলার কপি পেয়ে তদন্তের কাজ দেয় পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক মো. মনির হোসেনকে। তদন্ত কর্মকর্তা তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অপহরণ ও গুম হওয়া সেই তরুণীকে উদ্ধার এবং অবস্থান শনাক্তের কাজ শুরু করেন।
পিবিআইয়ের তদন্তকালে ওই মেয়ের বাবা তার মেয়েকে দ্রুত উদ্ধারের জন্য নানাভাবে পুলিশকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। কিন্তু মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে অপহরণের সেই কথিত ঘটনাস্থল, ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর এবং পরিবারের সদস্যদের কিছু রহস্যজনক আচরণে সন্দেহ হয়। এরপর তিনি গোপনে ওই এলাকায় অনুসন্ধান করে ভিকটিমের পরিবারের সঙ্গে মামলার বাদীর দীর্ঘ দিনের বিরোধের বিষয়টি জানতে পারেন এবং দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর অভিযান পরিচালনা করে গত ১১ এপ্রিল চট্টগ্রাম শহরের কাপ্তাই ইপিজেড এলাকার একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কর্মরত অবস্থায় সেই তরুণীকে উদ্ধার করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওসি মনির জানান, মামলার বাদী নুর মোহাম্মদ বাবুল তার মেয়েকে অপহরণের পর হত্যা করা হতে পারে বলে বারবার চাপ দিচ্ছিলেন। কিন্তু পিবিআই মামলা তদন্তকালেই নিশ্চিত হয়েছিল যে গুম হওয়া ওই তরুণীর সঙ্গে তার পরিবারের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। আর ওই তরুণীকে উদ্ধারের পরে বিষয়টি আরও ভালোভাবে পরিষ্কার হয়।
পিবিআই জানায়, উদ্ধার তরুণীকে স্থানীয় একটি এনজিও সংস্থার নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রের হেফাজতে রাখা হয়েছে। তাকে আদালতে পাঠানো হবে।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে মামলা সংশ্লিষ্ট পিবিআইয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, উদ্ধার হওয়া ওই তরুণীর সঙ্গে মামলার এক নম্বর আসামি আলাউদ্দিনের দীর্ঘ দিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু ওই তরুণীর বাবা আলাউদ্দিনের সঙ্গে তার মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি ছিল না। এই নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে বিরোধ চলছিল। সে কারণে ওই তরুণীর বাবা তার প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজ মেয়েকে অপহরণের মিথ্যা নাটক সাজিয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছি।
পিবিআই কক্সবাজার ইউনিটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমরা এই মামলাটির খুব দ্রুত চার্জশিট প্রদান করবো। মিথ্যা মামলার বিষয়ে আদালত যে ব্যবস্থা নিতে বলবেন সেটি বাস্তবায়ন করবো তড়িতভাবে।
সূত্রঃ জাগোনিউজ