সঞ্জীব দ্রংঃ
নানা উৎসব আর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে বর্ণময় আদিবাসী জীবনধারা। বিশ্বব্যাপী আদিবাসী জীবনে মূল অবলম্বন হলো ভূমি। তাই আদিবাসী পাহাড়িদের স্বপ্ন, সুখ, দুঃখ, আনন্দ, গান, নাচ, উৎসব সবকিছুই এই ভূমিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। বিশ্বজুড়ে ভূমি আদিবাসীদের কাছে পবিত্র। আদিবাসীরা বলে, আকাশ, বাতাস, সমুদ্র, নদী পাহাড়-পর্বত, ভূমি ও প্রকৃতির সাথে রয়েছে আদিবাসীদের নিবিড় সম্পর্ক। তাদের সংস্কৃতিতে ভূমি হলো মা, অরণ্যের মধ্যে তারা জননীর প্রাণের সন্ধান করে বেড়ায়, তারা প্রকৃতি-বৃক্ষকে অনুভব করতে পারে, তারা বন ও সম্পদকে কোনদিন বেচাকেনা বিষয় হিসেবে দেখে না, জীবনের অংশ হিসেবে দেখে। কিন্তু আধুনিক সভ্যতা বন, সম্পদ, প্রকৃতি, সবকিছু ভোগ ও বাণিজ্যিক দৃষ্টিতে দেখে। তাই আদিবাসীরা বলে, অরণ্য নেই তো জীবন নেই। বিশ্বের আদিবাসীরা এখন বন ও বনের সম্পদকে বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গিতে না দেখে জীবনের অংশ হিসেবে দেখার আহ্বান জানিয়ে আসছে।
আদিবাসীদের সংস্কৃতির মধ্যে প্রকৃতি, মানুষ ও পৃথিবী সম্পর্কে তাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়। বাংলাদেশে আদিবাসীরা ভূমি, বন, প্রকৃতি, গাছপালা, সহায়-সম্পদ সম্পর্কে একই দৃষ্টিভঙ্গী পোষণ করে। এই যে আমরা আদিবাসীদের উৎসবের কথা বলছি তার প্রায় সবটাই ভূমি, বন ও প্রকৃতিকে ঘিরে। চাকমাদের একটি গান আছে নববর্ষ উৎসবের আনন্দ নিয়ে। গানটি এরকম, ‘কোকিল দাগে কুউক কুউক, বিজু পেক্কু দাগে বিজু বিজু, কাত্তোল পাগোক্ক দাগে কাত্তোল পাগোক, কুইয়েৎ পেক্কো দগরে গরবা এত্তোক, তুরির ফুলুর দুব রঙানি, রেবেক ফুলর তুম বাচানি, ম-মনান গরের সুরি, নসাং যেবার এ জাগান ছাড়ি, ইদু আগৎ জনমান বুরি, এ জাগাগান রইয়েদে ম-মনান জুরি।’
চাকমা এ গানের ভাবার্থ এরকম : ‘অনেক পাখি ডাকা, ফুলে ফলে, রূপে রঙে ভরা এ জুম পাহাড়ের প্রকৃতি, আমার জন্মভূমি ছেড়ে আমি যাব না কোথাও।’ এ গানটির মধ্যে পাহাড়-পর্বত-অরণ্য-প্রকৃতির প্রতি পাহাড়ি আদিবাসীদের মমতা ও ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে।
আদিবাসীদের একটি প্রবাদ আছে- ‘ধরিত্রীকে যত্ন করো, এটি তোমার জন্য তোমার পিতামাতা বা পূর্বপুরুষের দান বা উপহার নয়, বরং এটি তোমার সন্তানের কাছে তোমার ঋণ।’ অর্থাৎ আদিবাসীদের কাছে এ পৃথিবীর ভূমি-মাটি-নদ-নদী-আকাশ-বন প্রকৃতি সব গুরুত্বপূর্ণ এবং তাদের দায়িত্ব রয়েছে এসব যত্ন করে ভবিষ্যত বংশধরদের জন্য রেখে যাবার। এরকম ভাবনা থেকেই আদিবাসী জীবনে বিভিন্ন পূজাপার্বণ এবং উৎসব পালিত হয়। পুরাতনকে সম্মান জানিয়ে, কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ধন্যবাদের সাথে বিদায় জানানো এবং নতুনকে আনন্দ ও উৎসবের মাধ্যমে বরণ করে নেয়ার এই সংস্কৃতি আদিবাসী সমাজে এখনও বহমান।
পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি আদিবাসীদের বাইরে সমতলের আদিবাসীদের মধ্যে বাংলা নববর্ষ এখন আগের মতো বড় করে পালন করা হয় না। অনেক আগে গারোসহ আদিবাসীরা চৈত্র মাসের শেষ দিনে সংক্রান্তি উৎসব পালন করতো। কৃষিজীবী আদিবাসীরা সেদিন জমিতে কোনো কাজ করতো না। আগে থেকেই জমির ধান দিয়ে চিড়া-মুড়ি-খই প্রস্তুত করে রাখা হতো পরিবারে। গরু ও মহিষের দই ঘরে তৈরি করে রাখা হতো। তখন আদিবাসী সমাজে ঘরে ঘরে অনেক গরু-মহিষ ছিল। তাই দুধ ও দইয়ের অভাব ছিল না। সেদিন গরু-মহিষকে বিশ্রাম দেয়া হতো, হালচাষ হতো না। সকাল বেলা ঘরের মালিক নদীতে বা পুকুরে গরু-মহিষ নিয়ে যেত এবং স্নান করিয়ে এবং গায়ে রং মেখে গবাদিপশুকে রাঙাতো। গবাদিপশু নানা রঙে রাঙানোর অর্থ হলো ওদের প্রতি সারা বছরের পরিশ্রমের জন্য কৃতজ্ঞতা জানানো। চৈত্রসংক্রান্তির দিনে আদিবাসী কৃষক পরিবার মনে রাখতো সারা বছর গবাদিপশু তাদের উপকার করেছে। এছাড়া আদিবাসী কৃষক জমি চাষের জন্য ব্যবহৃত লাঙ্গল, জোয়াল, অন্যান্য কৃষিকাজে ব্যবহৃত সামগ্রী ধুয়েমুছে পরিষ্কার করতো এবং এসবের গায়েও রং মাখিয়ে দিত। আদিবাসী কৃষি জীবনে এক ধরনের কৃতজ্ঞতাবোধ প্রকাশিত হতো এসবের ফলে। চৈত্রসংক্রান্তির দিনে আদিবাসীরা নানা ধরনের সবজি রান্না করে থাকে, বিশেষ করে তিতা জাতীয় সবজি। এমন কিছু তিতা জাতীয় সবজি এখনও আদিবাসীরা খায়, যা অন্য সমাজের লোকেরা খায় না। যেমন আপলকা, খুমখা, আলৎ, মিচেং ইত্যাদি। করলা জাতীয় সবজি ছাড়াও এরকম সবজি সংক্রান্তি ও নববর্ষের দিনে আদিবাসীরা রান্না করে।
বৃহত্তর ময়মনসিংহের অন্যতম হাজং জাতি। হাজংরাও কৃষিজীবী সমাজ। টংক আন্দোলন ও হাতিখেদা আন্দোলনসহ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের জন্য হাজং জাতি বিখ্যাত। হাজংরা নববর্ষকে বলে তাদের ভাষায় ‘হংঅরানী’।
চৈত্রসংক্রান্তির আগের দিন থেকে শুরু করে পহেলা বৈশাখে এই উৎসব পালিত হয়। হাজংদের উৎসব শুরু হয় বাড়ি, ঘর, উঠান, গোয়াল-ঘর, আসবাবপত্র সামগ্রী, হাঁড়ি-পাতিল, থালা-বাসন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার মধ্য দিয়ে। এ সময় তারা ঘর-দোর নানা রং দিয়ে রাঙিয়ে তোলে। গবাদিপশুকে স্নান করিয়ে তাতে আবির মেখে দেয়। এদিন প্রতি পরিবার তাদের ঘরের দরজায় এক ধরনের ছনজাতীয় গাছের পাতা দিয়ে বেঁধে রাখে। এ ছনকে তারা টিপা বলে। টিপার গোছা নিয়ে নববর্ষ উৎসবের দিন হাজংরা দল বেঁধে নদীতে স্নান করতে যায় পবিত্র হওয়ার জন্য। তখন পানিতে ডুব দিয়ে প্রত্যেকে টিপা কাঁদায় পুঁতে দেয়। হাজংদের বিশ্বাস, পানির নিচে ছন জাতীয় পাতা পুঁতে রাখার মানে ফেলে আসা পুরনো বছরের সকল দুঃখ-গ্লানি-হতাশা পানিতে বিসর্জন দেয়া। স্নান শেষে তারা নতুন বছরের কল্যাণ ও সুখের জন্য প্রার্থনা করে। পরে গ্রামে পিঠা, পায়েস, চিড়া ইত্যাদি খাওয়ার উৎসব চলে। সন্ধ্যাবেলা বাড়ি বাড়ি মঙ্গল প্রদীপ জ্বালানো হয় পুরাতনকে বিদায় জানিয়ে নতুনকে বরণ করার জন্য, মানব সমাজের মঙ্গলের জন্য।
আদিবাসী সাঁওতালরা নানারকম নাচ ও গানের মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করে। এ সময় আম গাছে ছোট ছোট ফল ধরে। কোথাও কোথাও আম গাছে কিছু ফুল থাকে তখনও। আদিবাসীরা এসব গাছের গোড়ায় নতুন মাটি দেয়। এর মূল ভাবনা হলো, গাছে যেন ভালো ফল ধরে, বৈশাখী ঝড়ে যেন সমস্ত আম্র্রমুকুল ঝরে না যায়। শুধু তাই বাড়িভিটার আশেপাশে যত ফলজ গাছপালা আছে, তাতে আদিবাসীরা নতুন মাটি দেয়। এমনকি লাউয়ের গোড়ায় তারা নতুন মাটির ঢেলা জমা করে রাখে। সংক্রান্তির দিনে আদিবাসী কৃষক পুরাতন বছরের সকল উপকারের জন্য সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানায়, প্রণতি জানায়। পাশাপাশি নতুন বছরে যেন ক্ষেতে ফসল ভালো হয়, ঠিকমতো যেন বৃষ্টি নামে, রোদ ওঠে, পোকামাকড় যেন ফসলের ক্ষতি না করে, খরায় যেন মাঠ খা খা না করে, পাড়া-পড়শি যেন রোগবালাই থেকে দূরে থাকে, এসব মঙ্গল কামনা করে সংক্রান্তি ও নববর্ষ পালিত হয়। অনেক গ্রামে আদিবাসীরা নিজেদের ঘরে তৈরি ‘পানীয় মদ’ পান করে এবং আনন্দ-ফুর্তির মধ্য দিয়ে দিনটি পার করে দেয়। আদিবাসীরা চৈত্রসংক্রান্তি ও নববর্ষের দিনে সাধ্যমতো ভালো খাবার আয়োজনে সচেষ্ট হয়।
গারো আদিবাসীরা একটি গান গায় নতুন বছরের আগের রাতে। গারো ভাষায় গানটি এরকম, ‘বিলসি গিৎচাম রিয়াংজক, বিলসি গিত্তাল রেবাংজক, দাআ সালদে সালসা মামাং খুশি অংয়ে রফানা, ও সংনি মা-ফারাং মাইখো দাকজক নাসিমাং।’ এর বাংলা অর্থ এরকম : ‘পুরাতন বছর চলে যাচ্ছে, নতুন বছরের নতুন দিন আসছে, আসুন আজ একত্রে আনন্দ উৎসব করি, ও গ্রামের প্রধানগণ, তোমরা নতুন দিনে কী আয়োজন করেছ?’ এ গানের মধ্যে এটি পরিষ্কার যে, আদিবাসীরা নতুন বছর নিয়ে নানা ভাবনা ও আয়োজনে মেতে থাকে। তবে সবকিছুর মূলে রয়েছে তাদের পাহাড়-অরণ্যের কৃষিনির্ভর জীবনে যেন মঙ্গল হয়, প্রকৃতি যেন তাদের প্রতি দয়াশীল হয় এবং কোনোরকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানুষের জীবনে নেমে না আসে। আদিবাসীদের মধ্যে সবচেয়ে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে নববর্ষ পালিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রামে। এখানে ১৪টি আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা প্রভৃতি সম্প্রদায় মহাসমারোহে নববর্ষ পালন করে। চাকমারা নববর্ষ উৎসবকে বলে বিজু, মারমারা সাংগ্রাই, ত্রিপুরারা বৈষু এবং ও তঞ্চঙ্গ্যারা বিষু। রাঙামাটিতে বেশ কিছু পরিবারে অহম জাতির মানুষ আছে। তারা নববর্ষের দিনে বিহু উৎসব পালন করে। বিজু, সাংগ্রাই, বৈষু, বিষু, বিহু উৎসবের সময় বর্তমানে নানা আয়োজন চলে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায়।
চাকমা সমাজে কমপক্ষে তিন দিনব্যাপী বিজু উৎসব পালিত হয়। এটি তাদের প্রধানতম বার্ষিক উৎসব। চাকমা সমাজে চৈত্র মাসের শেষ দুইদিনকে ফুলবিজু ও মূলবিজু বলা হয়। আর পহেলা বৈশাখকে তারা বলে গয্যাপয্যা দিন। আজকাল বিজু উৎসবের সময় পাহাড়ে নানা ধরনের অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। তার মধ্যে নাটক, সংস্কৃতি মেলা, চিত্র প্রদর্শনী, বিভিন্ন সভা-সমাবেশ অন্যতম। অতীতে বিজুর সময় আদিবাসী তরুণ-তরুণীরা দল বেঁধে পবিত্র বৌদ্ধ মন্দিরে গিয়ে মোমবাতি জ্বালাতো, প্রার্থনা করতো এবং ভগবান বুদ্ধের কাছে মঙ্গল প্রার্থনা উৎসব হতো বৌদ্ধ মন্দিরকেন্দ্রিক। পাহাড়ি আদিবাসীরা বিজুর দিনে একে অন্যের বাড়িতে বেড়াতে যায়, শিশু-কিশোর-তরুণরা বয়স্কদের কাছ থেকে আশীর্বাদ প্রার্থনা করে। বাড়িতে বাড়িতে এ সময় ভালো খাবার রান্না হয়। বিভিন্ন ধরনের সবজি মিশিয়ে রান্না হয় বেশি, অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয় নানা ধরনের পিঠা ও খাবার দিয়ে। অনেকে নিজেদের ঘরে তৈরি পানীয় বা দু’চুয়ানি খায় ও আনন্দ করে। বিজুর দিনে পারিবারিক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, সমাজ ও দেশের কল্যাণ কামনা করা হয়।
মারমাদের নববর্ষ বা সংগ্রাই উৎসব অনেক পরিচিত এখন। পুরাতন বছরকে বিদায় এবং নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর এ অনুষ্ঠান মূলত বান্দরবান শহরের আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান। এ সময় বান্দরবানের পাহাড়ি মানুষ আনন্দ উৎসবে মুখরিত হয়ে ওঠে। এ দিন মারমারা পরস্পরের প্রতি পানি ছিটিয়ে পুরাতন সব জীর্ণ, জরা, কালিমা দূর করে। বান্দরবান শহরে মারমা তরুণ-তরুণীরা ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে একে অপরের প্রতি রঙিন পানি ছিটিয়ে নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় করে। একে কেউ কেউ নববর্ষের পানিখেলা বলে। সাংগ্রাইয়ের সময় রাতেও মারমারা নতুন বছরের সমস্ত দিন শুভ ও কল্যাণকর হোক, এ কামনায় ভগবান বুদ্ধের কাছে প্রার্থনা করে এবং নৃত্যের আয়োজন করে। এ ছাড়াও বান্দরবানের বোমাং রাজার মাঠে কয়েক দিনব্যাপী আদিবাসী মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
নববর্ষকে ত্রিপুরা ভাষায় বলে বৈষু। চৈত্র মাসের শেষ দিনে এই উৎসব পালিত হয়। অবশ্য এর আগের দিন থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে পুরাতন বছরকে বিদায় জানানোর আয়োজন চলতে থাকে। সংক্রান্তির আগের দিনকে ওরা বলে হারিবিষু। এদিন ত্রিপুরারা ওদের দেবতা গরায়ার উদ্দেশ্যে পূজা অর্চনা করে। বৈষুর দিন ত্রিপুরাদের গরাইয়া নৃত্য খ্যাতি অর্জন করেছে। ত্রিপুরা শিল্পীরা তাদের ঐতিহ্যমণ্ডিত পোশাক পরে দল বেঁধে এ নৃত্য পরিবেশন করে। প্রতিটি ঘরে ঘুরে ঘুরে ত্রিপুরা শিল্পীরা দলীয় নাচ পরিবেশন করে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো নতুন বছর সবার জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধি বয়ে আনুক। এছাড়া পুরাতন বছরের দুঃখ-কষ্ট ভুলে নতুনের সম্ভাবনার কথাও শিল্পীরা জানিয়ে যায়। নতুন বছরে জুমের ক্ষেতে যাতে ফসল ভালো হয়, শাক-সবজি, ফলমূলের বাগান যাতে পরিপুষ্ট হয়, পরিমিত বৃষ্টি যেন হয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ যাতে আদিবাসীদের কৃষি ও জুমিয়া জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে, সকলের শরীর-স্বাস্থ্য যেন ভালো থাকে, এসবের জন্য মঙ্গল কামনা করা হয়। গরাইয়া নৃত্যের বৈশিষ্ট্য হলো, যে বাড়ি থেকে এ নৃত্যের সূচনা হয়, গ্রাম ঘুরে শেষে নাচের দলটি সেই বাড়িতে ফিরে আসে।
বর্তমানে আদিবাসী পাহাড়ি সমাজেও নববর্ষ উদযাপনের মধ্যে ভিন্নমাত্রা যোগ হয়েছে। আদিবাসীদের মধ্যে অনেকে এখন শহরমুখী হয়েছেন জীবনের বাস্তবতায়। অনেক ছাত্রছাত্রী এলাকার বাইরে পড়াশোনা করছে। এদের মধ্যে সময় পেলে অনেকেই বিজু বা নববর্ষের সময় চৈত্রসংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করে এবং এলাকার মানুষের সঙ্গে নববর্ষ উদযাপনের জন্য সচেষ্ট হয়। আজকাল আদিবাসী সংগঠনসমূহ নববর্ষকে সামনে রেখে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খেলাধুলা ইত্যাদির আয়োজন করছে। মঙ্গল শোভাযাত্রাও অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে নববর্ষ পালনের মূল যে কথা, পুরাতনকে বিদায় জানানো, যা জীর্ণ ও পুরাতন, দুঃখ ও গ্লানিকর, তাকে বিদায় জানানো এবং নতুনকে সাদরে বরণ করে নেয়া- এটি অভিন্ন রয়ে গেছে।