ক্রীড়া ডেস্কঃ
সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে করা হয়েছে আসন্ন বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের স্কোয়াড ঘোষণা। বড় চমক হিসেবে স্কোয়াডে রয়েছে অনভিষিক্ত পেসার আবু জায়েদ রাহী, অফস্পিনিং অলরাউন্ডার মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত এবং পেস বোলিং অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দীন।
এ তিনজন প্রথমবারের মতো খেলতে যাচ্ছেন ওয়ানডে বিশ্বকাপে। এছাড়াও মেহেদি হাসান মিরাজ, লিটন কুমার দাস, মোহাম্মদ মিঠুন এবং মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতসহ মোট ৭ জন ক্রিকেটারই প্রথমবারের মতো খেলতে নামবেন ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আসরে।
চলুন দেখে নেয়া যাক এ সাত ক্রিকেটারের আদ্যোপান্ত:
লিটন কুমার দাস
দিনাজপুরের ২৪ বছর বয়সী উইকেটরক্ষক এ ব্যাটসম্যান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নাম লিখিয়েছেন ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের পরপরই। ভারতীয় ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফরে টেস্ট ও ওয়ানডে অভিষেক হয় তার। এখনো পর্যন্ত জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন ২৭টি ওয়ানডে। ১টি করে ফিফটি ও সেঞ্চুরিতে ৫০৮ রান করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। ব্যাটিং পরিসংখ্যান খুব ভালো না হলেও ২০১৮ সালের এশিয়া কাপ ফাইনালে ১২১ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলা লিটন এরই মধ্যে প্রমাণ করেছেন তার সামর্থ্য রয়েছে বড় কিছু করার। তাই সুযোগ পেয়ে গেছেন ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে।
মোহাম্মদ মিঠুন
অমিত সম্ভাবনা নিয়ে ২০০৬ সালে বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে নাম লিখিয়েছেন মোহাম্মদ মিঠুন আলি। লিটন দাসের মতো তিনিও একজন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলকে প্রতিনিধিত্ব করা মিঠুন শুরুতে নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারেননি। তাই তো ২০১৪ সালে ওয়ানডে অভিষেকের পরেও জাতীয় দলে থিতু হতে পেরিয়ে যায় প্রায় ৪ বছর।
২০১৮ সালে বদলে যায় মিঠুনের ক্যারিয়ারের গতিবিধি। গতবছর নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টানা দুই ম্যাচে ফিফটি এবং এশিয়া কাপের মতো বড় আসরে ২টি ফিফটি হাঁকিয়ে জাতীয় দলের নিজের স্থান পাকাপোক্ত করেন মিঠুন। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ স্কোয়াডেও সুযোগ পেলেন ২৮ বছর বয়সী এ মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান।
মেহেদি হাসান মিরাজ
বাংলাদেশের ক্রিকেটে উজ্জ্বল তারকার মতো আগমন তরুণ তারকা মেহেদি হাসান মিরাজের। ২০১৬ সালে ঘরের মাঠে হওয়া অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দেয়ার পাশাপাশি জিতেছিলেন টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার। সে বছরই ডাক পেয়ে যান টেস্ট ক্রিকেটে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজে ১৯ উইকেট নিয়ে গড়েন বিশ্বরেকর্ড।
সে ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালে ওয়ানডে দলেও ডাক পেয়ে যান মিরাজ। শুরুতে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে নিজের জায়গা পাকা করতে খানিক ভুগলেও ক্রমেই নিজেকে ‘অটো চয়েজ’ হিসেবে পরিণত করেছেন তিনি। এখনো পর্যন্ত ২৫টি ওয়ানডেতে ১ ফিফটিতে ২৯১ রান এবং ৪.৪০ ইকোনমি রেটে ২৬টি উইকেট শিকার করেছেন ২১ বছর বয়সী এ অলরাউন্ডার।
মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত
মোহাম্মদ মিঠুনের মতোই আরেক সম্ভাবনাময় তারকা মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। তবে নিজেকে সে অর্থে মেলে ধরতে পারেননি তিনিও। তাই তো বিশ্বকাপ দলে সৈকতের অন্তর্ভুক্তি একপ্রকার চমক হিসেবেই গণ্য করা হচ্ছে। ২০১৬ সালে ওয়ানডে অভিষেকের পর থেকে এখনো পর্যন্ত ২৪ ম্যাচ খেলে ব্যাট হাতে ১ ফিফটিতে ৩৪১ রান এবং বল হাতে ৫.০২ ইকোনমি রেটে ১১ উইকেট শিকার করেছেন মোসাদ্দেক।
মোস্তাফিজুর রহমান
বাংলাদেশ তথা বিশ্ব ক্রিকেটে বিস্ময় বালক হিসেবেই আবির্ভাব বাঁহাতি কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমানের। ২০১৫ সালে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেকের সিরিজেই প্রথম দুই ম্যাচে ১১ উইকেট নিয়ে গড়েন বিশ্বরেকর্ড। সে বছর মাত্র ৯ ম্যাচে ২৬ উইকেট শিকার করেন তিনি।
কাঁধের ইনজুরির কারণে সাম্প্রতিক সময়ে গতি এবং সুইংয়ে খানিক পরিবর্তন আসলেও এখনো প্রতিপক্ষের বুকে কাঁপন ধরাতে পারেন সাতক্ষীরার ২৩ বছর বয়সী এ পেসার। এখনো পর্যন্ত ৪৩টি ওয়ানডে খেলে ৩ বার পাঁচ উইকেট ও ২ বার চার উইকেটসহ মোট ৭৭ উইকেট শিকার করেছেন মোস্তাফিজ।
মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন
জাতীয় দলের দীর্ঘদিনের পেস বোলিং অলরাউন্ডারের অভাব মোচন হয়েছে ফেনীর ২২ বছর বয়সী তরুণ মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের আগমনের পরই। ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নাম লিখিয়ে এখনো পর্যন্ত ১০টি ওয়ানডে খেলেছেন সাইফ। ব্যাট হাতে ১ ফিফটিতে করেছেন ১৭৫ রান, বল হাতে রয়েছে ৭টি উইকেট। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দুর্দান্ত সুইং বোলিংয়ে নিজের কার্যকরিতা আরও বাড়িয়েছেন সাইফউদ্দিন।
আবু জায়েদ রাহী
বিশ্বকাপ স্কোয়াডের সবচেয়ে বড় চমক আবু জায়েদ রাহী। এখনো পর্যন্ত ওয়ানডে অভিষেকই হয়নি সিলেটের ২৫ বছর বয়সী এ পেসারের। গতবছর টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি খেলেছেন তিনি। ৫ টেস্টে তার ঝুলিতে রয়েছে ১১ উইকেট, ৩ টি-টোয়েন্টিতে রয়েছে ৪ উইকেট। তবে কন্ডিশনভেদে দুর্দান্ত সুইং বোলিং করতে পারেন বলেই বিশ্বকাপের স্কোয়াডে জায়গা পেয়ে গেছেন ডানহাতি এ পেসার।
সূত্রঃ জাগোনিউজ