অনলাইন ডেস্কঃ
ধর্ম ত্যাগ করে মুসলিম বাঙালি ছেলেকে বিয়ে করেছিলেন খাগড়াছড়ির চাকমা জনগোষ্ঠীর ডালিয়া; সেই স্বামীর ‘নির্যাতন সইতে না পেরে’ ঘর ছেড়ে ঢাকায় এসে আশ্রয় নেওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের এই শিক্ষার্থী সম্প্রতি চট্টগ্রাম থেকে গোপনে ঢাকায় আসার পর তাকে ইউপিডিএফ সদস্যরা অপহরণ করেছে দাবি করে কয়েকটি পত্রিকায় খবর প্রকাশ হয়।
শনিবার ডালিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “খবরটি ভিত্তিহীন। আমাকে কেউ অপহরণ করেনি। নিজে ঢাকায় এসে এক পরিচিতের বাসায় উঠেছি।”
পাশাপাশি স্বামী শাহাদত হোসেন জিসানের হাত থেকে বাঁচতে পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে একটি জিডি করেছেন তিনি।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানার ওসি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মেয়েটিকে সব ধরনের আইনি সহযোগিতা দেওয়া হবে।”
গত বৃহস্পতিবার থানায় দায়ের করা ওই জিডিতে বলা হয়, ডালিয়ার বাড়ি খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার পেড়াছড়া গ্রামে। একই জেলার শালবন পশ্চিম জিয়া নগর এলাকার শাহাদত হোসেন জিসানের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক ধরে ২০১২ সালে গোপনে বিয়ে হয়।
বিয়ের আগে নিজ ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করেন ডালিয়া। বিয়ের পর থেকেই জিসান তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়ে আসছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
এই অত্যাচারের কারণে প্রায় তিন মাস আগে ডালিয়া ‘তালাক’ দিয়ে স্বামীর ঘর ছেড়ে চলে আসার পর তাকে নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও জিডিতে বলা হয়েছে।
তুলে নিয়ে যাবে, তুলে নিয়ে বড় ধরনের ক্ষতি করা হবে, কোথাও কাজ করতে দেওয়া হবে না- এমন সব হুমকির কথা জিডিতে লিখেছেন ডালিয়া।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি প্রথম বর্ষে পড়ার সময় জিসানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। জিসানও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছা্ত্র।
বিয়ের খবর জানাজানি হওয়ার পর দুই পরিবারের কেউ তাদের মেনে নেননি। পরে হাটহাজারীতে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে সংসার জীবন শুরু করেন তারা।
ডালিয়ার অভিযোগ, জিসান তাকে বাসা থেকে বের হতে দিতেন না। কারও সঙ্গে মিশতে দেওয়া হত না। ক্লাসেও যেতে বাধা দিতেন। প্রতিবাদ করলে গায়ে হাত তুলতেন।
“মেরে মুখের চোয়াল ভেঙে দিয়েছে। বাণিজ্য মেলায় প্রকাশ্যে মারধর করেছে।”
তিনি বলেন, “জিসান বাসায় বন্ধুদের সাথে জুয়া ও মাদকের আড্ডা বসাত। এ সময় তার রান্নাঘরের বাইরে আসা বারণ ছিল। বাইরে থেকে রান্নাঘরের দরজা লাগিয়ে রাখত। বন্ধুরা চলে গেলে দরজা খুলে দিত। তখন বাসা থাকত এক নরক।”
এসব কারণে তার লেখাপড়া ব্যাহত হয় জানিয়ে ডালিয়া বলেন, “এক প্রকার সংগ্রাম করে লেখাপড়া চালিয়ে যাই এবং সময় সুযোগ মতো গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব বজায় রাখতে পরীক্ষা দিয়ে অনার্স পাশ করি। এরমধ্যেই আমার দুই বছর ড্রপ হয়।”
ডালিয়া জানান, তাকে অপহরণ করা হয়েছে বলে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর পাহাড়িদের সংগঠন ইউপিডিএফের সদস্যরা তাদের বাসায় হামলা চালিয়ে তার বাবাকে মারধর করেছে।
স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ঢাকায় এসেছেন জানিয়ে ডালিয়া বলেন, “ধর্ম ত্যাগ করে বিয়ে করায় বাবা-মা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছি। সমাজও আমাকে অন্য দৃষ্টিতে দেখে। এ অবস্থায় আমি এখন পুরোপুরি একা।
“এখন আমার নিরাপত্তা প্রয়োজন, জিসান যে কোনো সময় আমার ক্ষতি করতে পারে।”
ডালিয়ার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে জিসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিকে বলেন, এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। ডালিয়া অন্য কারও প্ররোচনায় এসব করছে।
“তাকে কখনও শারীরিকভাবে নির্যাতন করিনি। তবে অন্য ধর্ম থেকে আসায় চলাচলের ক্ষেত্রে তাকে নিয়ন্ত্রণ করা হত। এটাকে সে ‘ডমিনেট করা’ হিসাবে ভাবতে পারে।”
ডালিয়ার বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিষয়ে বৃহস্পতিবারই প্রথম শুনেছেন তিনি।
“সে যদি চলে যেতে চায় চলে যাবে, আসলে তাকে গ্রহণ করা হবে।”
সূত্রঃ বিডিনিউজ