আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
দীর্ঘ ২৬ বছরের গৃহযুদ্ধের অবসানের পর ধীরে ধীরে শান্তি ফিরেছিল শ্রীলঙ্কায়। কিন্তু ইস্টার সানডের দিন তিনটি গির্জা ও চারটি অভিজাত হোটেলে একযোগে বোমা হামলা আবারো রক্তাক্ত করেছে দেশটিকে।
এদিন হামলায় অন্তত ২০৭ জন নিহত এবং চার শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বিবিসি’কে ভয়াবহ ওই হামলার বর্ণনা দিয়েছেন।
জুলিয়ান ইমানুয়েল:
শ্রীলঙ্কায় বেড়ে ওঠা ৪৮ বছরের চিকিৎসক জুলিয়ান ইমানুয়েল বর্তমানে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে যুক্তরাজ্যে বাস করেন।
স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে এ সপ্তাহেই তারা কলম্বোয় যান, ওঠেন ‘সিনামন গ্র্যান্ড হোটেলে’; যেখানে রোববার বোমা হামলা হয়েছে।
ইমান্যুয়েল বলেন, “বিকট বিস্ফোরণের সময় আমরা শয়নকক্ষেই ছিলাম। বিস্ফোরণের ধাক্কায় আমাদের কক্ষ কেঁপে উঠেছিল, খুব সম্ভবত তখন সাড়ে ৮টা বাজে। আমাদেরকে হোটেলের লাউঞ্জে আনা হয় এবং পেছন দিক দিয়ে পালিয়ে যেতে বলা হয়। সেখানে আমরা কয়েকজন হতাহতকে দেখতে পাই, তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।”
নিজের স্ত্রী-সন্তানদের দুরাবস্থা নিয়ে দারুণ উদ্বিগ্ন এই চিকিৎসক আরো বলেন, “আমি জীবনের প্রথম ১৮ বছর শ্রীলঙ্কায় কাটিয়েছি। ওই সময়ে আমি গৃহযুদ্ধ ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা দেখেছি। কিন্তু আমার সন্তানরা; তাদের বয়স মাত্র ১১ ও সাত। তারা কখনো যুদ্ধ দেখেনি, এমনকি আমার স্ত্রীও না। তাদের জন্য এ এক ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা।
“এটা সত্যিই খুব দুঃখের। আমি ভেবেছিলাল শ্রীলঙ্কা এ সব লড়াই-সংঘাত পেছনে ফেলে এসেছে। কিন্তু এখন দুঃখ হল, তা আবার ফিরে এসেছে।”
উসমান আলি:
কলম্বোর বাসিন্দা উসমান আলি তার বাড়ির কাছের গির্জা থেকে লোকজনকে দৌড়ে বেরিয়ে যেতে দেখে বুঝেছিলেন কিছু একটা খারাপ ঘটনা ঘটেছে।
তার বাড়ির সামনের সড়কে অনেক অ্যাম্বুলেন্স ভিড় করতে দেখে কারণ বুঝতে তিনি দ্রুত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রবেশ করেন। সেখানে হামলার রক্তাক্ত ছবি ও ভিডিও দেখতে পান। সেখান আহতদের জন্য রক্ত দেওয়ার আবেদন করা হয়।
তা দেখে তিনি ন্যাশনাল ব্লাড সেন্টারে যান। যেখানে প্রচুর মানুষ ভিড় করেছে।
কিরণ আরাসারাত্নাম:
ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক কিরণ আরাসারাত্নাম কয়েক দিন আগে শ্রীলঙ্কায় যান। ওঠেন শাংরি-লা হোটেলে। যেটির তৃতীয় তলার রেস্তোরাঁয় বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে।
শরণার্থী হিসেবে ৩০ বছর আগে শ্রীলঙ্কা থেকে যুক্তরাজ্য যান কিরণ। একটি সামাজিক উদ্যোগের উদ্বোধন করতে তিনি কলম্বোয় গিয়েছিলেন।
যখন শাংরি লা হোটেলের রেস্তোরাঁয় বিস্ফোরণ হয় তখন তিনি নিজের কক্ষে ছিলেন।
তিনি বলেন, “এত জোরে শব্দ হয়েছিল যে আমি বজ্রপাত ভেবেছিলাম। সবাই আতঙ্কে ছুটোছুটি শুরু করে। আমি ডানের একটি কক্ষের দিকে তাকাই, সেখানে সব জায়গায় রক্ত দেখতে পেয়েছি।
“সবাই দৌড়াতে শুরু করে, বেশিভাগ মানুষ বুঝতেই পারেনি আসলে কি হয়েছে। আমি লোকজনের শার্টে রক্ত দেখতে পাই, একজন একটি ছোট মেয়েকে অ্যাম্বুলেন্সে তুলছিলেন। দেয়াল ও মেঝে রক্তে ভেসে যাচ্ছিল।”
সকালের নাশতা খেতে যেতে তার সামান্য দেরি হয়েছিল বলে প্রাণে বেঁচে গেছেন, বলেন ৪১ বছরের এই অধ্যাপক।
“কিছু একটা আমাকে বিভ্রান্ত করেছিল। যে কারণে আমি আমার কক্ষে ফিরে যাই এবং আমার ডেবিট কার্ডটা হাতে নেই, পর্দা খুলে দেই এবং ‘বিরক্ত করবেন না’ সাইন বন্ধ করে দেই….তারপরই বিকট বিস্ফোরণের আওয়াজ পাই।”
এখন তিনি একটি জরুরি আশ্রয় কেন্দ্রে আছেন জানিয়ে বলেন, “আমি এখানে সর্বত্র বাতাসে রক্তের গন্ধ পাচ্ছি।
“রক্তাক্ত শিশুদের কাঁদতে দেখা ভীষণ ভয়ঙ্কর। আমি ৩০ বছর আগে শরণার্থী হিসেবে শ্রীলঙ্কা ছেড়ে ছিলাম। কখনো ভাবিনি আমাকে আবারও এসব দেখতে হবে।”
সূত্রঃ বিডিনিউজ