অনলাইন ডেস্কঃ
প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলে বিনিয়োগ সুবিধার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নিতে ব্রুনেইয়ের ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ব্রুনেইয়ের রাজধানী বন্দর সেরি বেগওয়ানের এম্পায়ার হোটেল ও কান্ট্রি ক্লাবে সোমবার ‘ব্রুনেই দারুস সালাম-বাংলাদেশ বিজনেস ফোরাম’ আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তার এ আহ্বান আসে।
দুই দেশের মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও ব্যবসায়ী ফোরামের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন খাতের বিনিয়োগকারীরা উপস্থিত ছিলেন এ অনুষ্ঠানে।
বাংলাদেশের দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতির নানা দিক এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছানোর লক্ষ্যের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, জিডিপির ভিত্তিতে বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় এবং বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ।
“সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীল ভিত্তি, গতিশীল বেসরকারি খাত এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্রমবর্ধনশীল ধারার ভেতর দিয়ে বিকশিত হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সাফল্যের নেপথ্যে কাজ করছে সামষ্টিক অর্থনীতির সতর্ক ব্যবস্থাপনা, বেসরকারি উদ্যোক্তাদের টেকসই নীতি প্রণোদনা এবং ভৌত অবকাঠামো ও মানবসম্পদ খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ।
চলতি অর্থবছরে রেকর্ড আট দশমিক ১৩ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির আশা করছে বাংলাদেশ সরকার। মাথাপিছু আয় পৌঁছেছে ১৯০৭ ডলারে।
পাঁচ বছরে রপ্তানি আয় দ্বিগুণ হওয়ার পাশাপাশি কৃষি ও সেবা খাতে দৃঢ় প্রবৃদ্ধি অর্থনীতিকে আরও স্থিতিশীল করেছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি হল বেসরকারি খাত। আমরা দেশি-বিদেশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিচ্ছি।
“দেশের বিভিন্নস্থানে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। পাশাপাশি তথ্য-প্রযুক্তি খাতে গুরুত্ব দিয়ে বেশকিছু আইটি পার্ক তৈরি করা হচ্ছে।”
স্বল্প খরচ, মানবসম্পদ, অভ্যন্তরীণ বাজারের আকার, বিশ্ব বাজারে পণ্যের প্রবেশাধিকার, বানিজ্য সুবিধা, বিনিয়োগ সুরক্ষা এবং সামাজিক-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার বিচারে বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগের উদার নীতির দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান এখন সামনের কাতারে।
আইন দিয়ে বিদেশি বিনিয়োগের সুরক্ষার ব্যবস্থা করা, কর সুবিধা, যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক সুবিধা, শতভাগ বিদেশি ইক্যুইটির সুবিধা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, জাপানের মত বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের অগ্রাধিকারমূলক প্রবেশাধিকারের সুবিধার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
“তৈরি পোশাক খাতে আমাদের সফলতা বিশ্ববাসীর জানা আছে। আমরা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। গুণগত মানসম্পন্ন ওষুধের হাব হিসেবে বিশ্বে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অষ্ট্রেলিয়াসহ শতাধিক দেশে ওষুধ রপ্তানি করছি আমরা।
“বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পও বিশ্বের নজর কেড়েছে। ইউরোপের দেশসহ বিশ্বের ১৪টি দেশে বাংলাদেশ থেকে পণ্য ও যাত্রীবাহী জাহাজ রপ্তানি হচ্ছে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের আরেকটি প্রতিশ্রুতিশীল খাত হল সফটওয়্যার। দেশের ৮০০ আইটি ও সফটওয়্যার কোম্পানির মধ্যে ১৫০টির বেশি কোম্পানি বিদেশি গ্রাহকদের সেবা দিচ্ছে। ২০ হাজারে বেশি বাংলাদেশি আইটি পেশাদার বিশ্বের নামকরা কোম্পানি যেমন – মাইক্রোসফট, ইনটেল, আইবিএমে কাজ করছে।”
এছাড়া বাংলাদেশের তৈরি কৃষিভিত্তিক পণ্য, হালকা প্রকৌশল পণ্য এবং ইলেকট্রনিক গেজেটও বিশ্ব বাজারের নজরে রয়েছে।
বাংলাদেশের পরিবেশবান্ধব পাটপণ্যের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, দ্য ম্যাকেঞ্জি অ্যান্ড কোম্পানি বাংলাদেশকে ‘দ্রুত বর্ধনশীল সোর্সিং কান্ট্রি, পণ্য উৎপাদন ও বিতরণ হাব এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা সৃষ্টি হওয়া’ অর্থনীতির দেশ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
এসব বিষয় বিবেচনা করে ব্রুনেইয়ের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যৌথ অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন রেটিং সংস্থার তথ্য অনুষ্ঠানে উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
২০১৮ সালে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ৬৭ দশমিক ৯ শতাংশ বাড়ার তথ্য তুলে ধরে তিনি ব্রুনেইয়ের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ বাজার, জিও স্ট্র্যাটেজিক গেটওয়ে, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য প্রবেশ সুবিধা, অবকাঠামো সুবিধা, শ্রম শক্তির প্রতুলতা, কম খরচে ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও শেখ হাসিনার মত ‘দূরদর্শী নেতৃত্ব’ ক্ষমতায় থাকাসহ ১০টি কারণ সালমান এফ রহমান তুলে ধরেন, যে কারণে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করা যেতে পারে।
অন্যদের মধ্যে ব্রুনেইয়ের জ্বালানি, জনশক্তি ও শিল্পমন্ত্রী হাজী মাত সানি, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন
এ অনুষ্ঠানে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এবং ন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ ব্রুনেইয়ের মধ্যে একটি সহযোগিতামূলক চুক্তি হয়।
ব্রুনেইয়ের গানিম ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন এসডিএন বিএইচডি ও বাংলাদেশের নাজিম গ্রুপ অব কোম্পানির মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
এছাড়া পেট্রোলিয়াম জিওসায়েন্স বিষয়ে পেশাদারি দক্ষতার উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণের বিষয়ে ব্রুনেইয়ের ডাইমেনশন স্ট্রাটা সেনডিরিয়ান বিএইচডি এবং বাংলাদেশের গ্রিন পাওয়ার লিমিটেড ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের মধ্যে আরেকটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয় এ অনুষ্ঠানে।
সূত্রঃ বিডিনিউজ