আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
আবারও সন্ত্রাসী হামলার আতঙ্কে শ্রীলংকা। শুক্রবার দিনভর দেশটিতে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। এদিন জুমার নামাজকে কেন্দ্র করে মূলত আতঙ্ক তৈরি হয়। প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে কেউ মসজিদে হামলা চালাতে পারে- এমন আশঙ্কায় সরকারের পক্ষ থেকে বাড়িতে নামাজ আদায় করতে আহ্বান জানানো হয়। বৃহস্পতিবার থেকেই দেশটির বিভিন্ন গির্জায় প্রার্থনা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর আগে দেশটিতে আবারও হামলার আশঙ্কার কথা প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত। এবার সতর্ক করল অস্ট্রেলিয়া ও ব্রিটেন।
এদিকে শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা জানিয়েছেন, ইস্টার সানডের বোমা হামলার প্রধান হোতা জাহরান হাশিম নিজেও সেদিন নিহত হয়েছে। দেশটিতে আইএস সংশ্লিষ্টতায় প্রায় দেড়শ’ নাগরিককে পুলিশ খুঁজছে বলেও জানান তিনি। এছাড়া ওই ঘটনার জন্য খোদ প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের ওপর দায় চাপিয়েছেন প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা। হামলার দায় মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করেছেন দেশটির প্রতিরক্ষা সচিব হেমাসিরি ফেরনান্দো। খবর বিবিসি, এএফপি, রয়টার্স, দ্য গার্ডিয়ান ও এনডিটিভিসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের।
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, শ্রীলংকায় ফের হামলা চালাতে পারে জঙ্গিরা। হামলা হবে এমন স্থানে যেখানে বিদেশিরা ঘুরতে যান বেশি। তাই জরুরি প্রয়োজন না থাকলে শ্রীলংকা সফরে না যেতে নির্দেশনা দিয়েছে দেশটি। অন্যদিকে ব্রিটেনও তাদের নাগরিকদের একই রকম সতর্ক বার্তা দিয়েছে। এর ফলে শ্রীলংকার পর্যটন খাত মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, এ খাতে আয় প্রায় ৩০ শতাংশ হ্রাস পেতে পারে। এর ফলে চলতি বছর প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলার ক্ষতির মুখে পড়বে দেশটি। ইতোমধ্যে বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
এদিকে এক জরুরি বার্তায় শ্রীলংকার মুসলিম ধর্মবিষয়ক মন্ত্রী এম এইচ আবদুল হালিম মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, জুমার নামাজ আদায়ের জন্য মানুষ যেন শুক্রবার মসজিদে না যান। তারা যেন বাসাতেই নামাজ পড়েন। মন্ত্রী বলেন, ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে এবং সন্ত্রাসীদের বর্বর কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে আমি আমার মুসলিম ভাইদের বলব আপনারা শুক্রবারের জুমার নামাজে বাইরে একত্রিত হবেন না। আমাদের মাতৃভূমির শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে আপনারা বাড়িতে নামাজ আদায় করুন। আরও হামলার আশঙ্কায় অন্যান্য ধর্মের লোকজনকেও বাড়িতেই প্রার্থনা করতে আহ্বান জানানো হয়েছে। শুক্রবার কয়েকটি মসজিদে নামাজ হলেও সেখানে ছিল কড়া পুলিশি নিরাপত্তা।
প্রধানমন্ত্রীর ওপর দায় চাপালেন প্রেসিডেন্ট : শ্রীলংকায় হামলার আগাম তথ্য থাকার পরও তা প্রতিহত করতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী নেতৃত্বাধীন সরকারকে দোষারোপ করছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা। তিনি বলেন, বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে আসা সতর্কবার্তা তাকে দেখানো হয়নি। তাই হামলার পরদিন তিনি প্রতিরক্ষা সচিব ও আইজিপিকে পদ ছাড়ার নির্দেশ দেন।
শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের দিকে অভিযোগের আঙুল ?তুলে প্রেসিডেন্ট বলেন, তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে গৃহযুদ্ধের সময়ের যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে সরকার সেনা কর্মকর্তাদের বিচারের উদ্যোগ নেয়ার পর দেশের গোয়েন্দা নজরদারি ব্যবস্থায় দুর্বলতা তৈরি হয়েছে। প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা কিছুদিন আগে বিক্রমাসিংহেকে সরিয়ে অন্য একজনকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছিলেন। পরে সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশে তিনি বিক্রমাসিংহেকে আবার প্রধানমন্ত্রী পদে ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হন।
শ্রীলংকার কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে রয়টার্স লিখেছে, প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর এই দ্বৈরথের ফলে নানা জটিলতা তৈরি হচ্ছে। সিরিসেনা ও বিক্রমাসিংহে প্রায়ই নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করতে চান না। কোনো কিছু ঘটলেই সেজন্য পরস্পরকে দায়ী করেন তারা।
১৪০ জনকে খুঁজছে পুলিশ : মধ্যপ্রাচের জঙ্গি দল আইএসের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে শতাধিক শ্রীলংকান নাগরিককে খুঁজছে দেশটির পুলিশ। প্রসিডেন্ট সিরিসেনা সাংবাদিকদের বলেছেন, শ্রীলংকার কিছু তরুণ ২০১৩ সাল থেকে ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে যুক্ত বলে তথ্য রয়েছে পুলিশের কাছে। এ পর্যন্ত যে তথ্য আমরা পেয়েছি তাতে শ্রীলংকার ১৪০ জন নাগরিক আইএসের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। পুলিশ তাদের খুঁজছে। আইএস ইতিমধ্যে ইস্টার সানডের হামলার দায় স্বীকার করে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে আটজনকে ওই জঙ্গি দলের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে দেখা গেছে। আইএসের দাবি, ওই আটজনই সেদিন আত্মঘাতী হামলায় অংশ নিয়েছিলেন। শ্রীলংকা সরকার বলেছে, হামলায় এক নারীসহ মোট নয়জনের অংশ নেয়ার তথ্য রয়েছে তাদের কাছে, তাদের সবাই শ্রীলংকার নাগরিক।
৬ সন্দেহভাজনের ছবি প্রকাশ : বোমা হামলায় জড়িত সন্দেহে তিন নারীসহ ৬ জনের ছবি প্রকাশ করে তাদের সম্পর্কে তথ্য চেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। বৃহস্পতিবার পুলিশ তাদের নাম প্রকাশ করে। এদিকে শুক্রবার পর্যন্ত হামলায় জড়িত থাকতে পারে সন্দেহে ৭৬ জনকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে ৩৩ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। নয় আত্মঘাতী হামলাকারী আট জায়গায় হামলা চালায়। তারা সবাই স্থানীয় চরমপন্থী দল ন্যাশনাল তাওহীদ জামায়াতের (এনটিজে) সদস্য বলে ধারণা তদন্ত কর্মকর্তাদের।
ভুল ছবি, ক্ষমা চাইল পুলিশ : ইস্টার সানডের হামলায় জড়িত সন্দেহভাজনদের তালিকায় ভুলে যুক্তরাষ্ট্রের এক নারীর ছবি প্রকাশ করে ফেলায় ‘ক্ষমা চেয়েছে’ শ্রীলংকা পুলিশ। লেখক ও সমাজকর্মী ওই নারীর নাম আমারা মজিদ। তিনি ‘দ্য ফরেইনারস’ নামে একটি বই লিখেছেন, যেটিতে ইসলাম সম্পর্কে চলমান ভ্রান্ত ধারণার বিরুদ্ধে তিনি কথা বলেছেন। সন্দেহভাজনদের তালিকায় আমারার ছবি দিয়ে তার নাম ফাতিমা খাদিজা বলা হয়। বাল্টিমোরে জন্ম নেয়া আমারার বাবা-মা শ্রীলংকার নাগরিক।
সূত্রঃ যুগান্তর