আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
ইস্টার সানডের দিন শ্রীলঙ্কায় একযোগে বোমা হামলার সন্দেহভাজন মূল পরিকল্পনাকারী মোহাম্মদ জাহরান হাশিমের বাবা ও তার দুই ভাই নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়েছেন।
নিহতরা হলেন, জাইনি হাশিম, রিলওয়ান হাশিম এবং তাদের বাবা মোহাম্মদ হাশিম।
দুই দিন আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় শ্রীলঙ্কার পূর্ব উপকূলের আমপারা জেলার সাইন্থামারুথুর একটি বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ।
জাহরানের পরিবারের সদস্যরা ওই বাড়িতে আত্মগোপন করে আছে বলে পুলিশের কাছে খবর ছিল। রাতভর গোলাগুলির পর পুলিশ সেখান থেকে ছয় শিশুসহ ১৫ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করে।
পুলিশ জানায়, ওই বাড়িতে অভিযান শুরু হলে ভিতরে থাকা বন্দুকধারীরা গুলি চালায়। গোলাগুলির মধ্যেই তিন ব্যক্তি আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটায়। বিস্ফোরণে তিন শিশু ও তিন নারীও নিহত হন।
আরও তিন জন পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। গোলাগুলির মধ্যে পড়ে এক বেসামরিক ব্যক্তিও নিহত হয়েছেন।
গোলাগুলির সময় আহত এক নারী ও একটি শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।
আহত নারী ও শিশু জাহরানের স্ত্রী ও কন্যা বলে পুলিশকে জানিয়েছে তার বোন হাশিম মাথানিয়া।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে তিন ব্যক্তিকে ‘অবিশ্বাসীদের’ বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণার ডাক দিতে দেখা যায়। সেখানে এক ব্যক্তির কোলে একটি শিশুকেও দেখা যায়, শিশুর কান্নাও শোনা যায়।
ভিডিওতে রিলওয়ান বাবা ও ভাইয়ের পাশে বসে ‘জিহাদের’ ডাক দেন। বলেন, “দেশের সুরক্ষায় আমরা এইসব অবিশ্বাসীদের ধ্বংস করবো। এজন্য আমাদের জিহাদ করতে হবে।
“ওইসব অবিশ্বাসী যারা মুসলমানদের ধ্বংস করছে তাদেরকে যোগ্যশিক্ষা দিতে হবে।”
জাহরানের বোনের স্বামী নিয়াজ শরিফ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে ভিডিওতে থাকা ব্যক্তিদের পরিচয় নিশ্চিত করেছেন; তারা জাহরানের বাবা ও দুই ভাই।
ভিডিওটি কবে প্রকাশ করা হয়েছে তা জানা যায়নি।
ভিডিওতে থাকা তিন ব্যক্তির সঙ্গে শুক্রবারের বন্দুক যু্দ্ধে নিহত তিন জনের চেহারায় মিল আছে বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক কর্মকর্তা।
আইএসের পক্ষ থেকেও শুক্রবার শ্রীলঙ্কার নিরাপত্তাবাহিনীর অভিযানে তাদের তিন সদস্য নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করা হয়েছে।
রোববার আইএসের মুখপত্র ‘আমাক’ নিউজ এজেন্সিতে বলা হয়, শ্রীলঙ্কার পূর্ব উপকূলে পুলিশের সঙ্গে শুক্রবার কয়েক ঘণ্টার বন্দুক যুদ্ধের পর তাদের তিন সদস্য বিস্ফোরক বেল্টের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।
বিস্ফোরণে ১৭ পুলিশ হতাহত হওয়ার দাবিও করেছে আইএস। যদিও শ্রীলঙ্কার নিরাপত্তাবাহিনীর পক্ষ থেকে হতাহতের ওই দাবি উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
গত ২১ এপ্রিল ইস্টার সানডের পরবে শ্রীলঙ্কার তিনটি গির্জা ও চারটি অভিজাত হোটেলে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ২৫৩ জন নিহত হয়, আহত হয় পাঁচ শতাধিক মানুষ।
এক দশক আগে দীর্ঘ ২৬ বছরের গৃহযুদ্ধের অবসানের পর ভারত মহাসাগরের ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্রে একদিনে এত রক্ত ঝরেনি।
হামলার দুইদিন পর মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক জঙ্গি দল ইসলামিক স্টেট (আইএস) ওই হামলার দায় স্বীকার করে একটি ভিডিও প্রকাশ করে । ওই ভিডিওতে জাহরানকে মুখ কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা আরো সাত জনকে আইএস নেতা আবু বকর আল বাগদাদির নামে শপথ পড়াতে দেখা যায়।
সাত দিন আগের ওই হামলার পর শ্রীলঙ্কা জুড়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। দেশজুড়ে মোতায়েন করা হয়েছে প্রায় ১০ হাজার সেনা।
সূত্রঃ বিডিনিউজ