নিউজ ডেস্কঃ
সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে দেশের ও বিশ্বের সকল মানুষকে দল-মত নির্বিশেষে সচেতন ও সোচ্চার হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার জাতীয় সংসদে প্রবীণ সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ কার্যপ্রণালীর ১৪৭ বিধির আওতায় একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। সেই আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রস্তাবে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের মসজিদ, শ্রীলঙ্কার গির্জা ও হোটেলে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি শেখ ফজলুল করিম সেলিমের নাতির মৃত্যু এবং বাংলাদেশে ফেনীর সোনাগাজীতে মাদরাসাছাত্রী নুসরাতকে যৌন নিপীড়ন ও পুড়িয়ে মারার ঘটনায় গভীর ঘৃণা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছে এবং এ সকল সন্ত্রাসী, যৌন নিপীড়নের ঘটনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল দেশের সংসদ, সরকার ও নাগরিকদের প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, নিউজিল্যান্ডের মসজিদে, শ্রীলঙ্কার চার্চে এবং হোটেলে- এই ধরনের ঘটনার আমরা নিন্দা জানাই। এই সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি জনগণকে আহ্বান জানাব, সকলকে এ ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। আমাদের দেশেও চেষ্টা করা হয়েছিল, হোলি আর্টিজানের ঘটনা। আমরা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এই ঘটনা দমন করতে সক্ষম হই।
তিনি বলেন, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ এখন শুধু বাংলাদেশ না সারা বিশ্বব্যাপী একটা সমস্যা। কাজেই এটা যেমন আমাদের দেশে মোকাবেলা করতে হবে আবার বিশ্বব্যাপী একটা জনমত সৃষ্টি করা এবং এই ধরনের ঘটনার যেন না ঘটে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই যে মেয়েদের ওপর যে অত্যাচার নির্যাতন। সেই শিক্ষক যদি রক্ষক হয়ে ভক্ষক হয় এর থেকে লজ্জার আর কিছু নেই। আর সেটাও মাদরাসার। যারাই এই ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকবে, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেব। দল-মত আমি দেখব না। কে আমি দেখব না, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস দমনে যা যা করণীয় আমরা তা করব। এই ধরনের যৌন নিপীড়ন যারা করবে তাদেরও ক্ষমা নেই। অনেক সংসদ সদস্য বলেছেন এর জন্য একটা কঠোর আইন করা দরকার। আমরা ইতোমধ্যেই মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বিচারের ব্যবস্থা করেছি। আমাদের গোয়েন্দা তদারকি বৃদ্ধি করেছি। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রয়োজনে এর জন্য যদি কঠোর আইন করতে হয় অবশ্যই আমরা কঠোর আইন করব। যারা এই ধরনের যৌন নিপীড়ন করবে তাদের যেন সর্বোচ্চ শাস্তি হয়। সেই ব্যবস্থা আমরা করব।
তিনি বলেন, যারা এই ধরনের (জঙ্গি হামলা) ঘটনা ঘটায় আসলে তাদের কোনো ধর্ম নেই। কোনো মুসলমান যদি এই ধরনের জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড করে আর ঈদের জামায়াতে আক্রমণ করার চিন্তা করতে পারে বা আক্রমণ করে তাহলে সে আবার কীসের মুসলমান?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের রোহিঙ্গাদের ওপর যে অত্যাচার বুদ্ধিস্টরা করলো, মিয়ানমারে। তাহলে যারা এই ধরনের ঘটনা করে তারা তো নিজের ধর্মও মানে না।
তিনি বলেন, একাত্তর সালে যেভাবে মেয়েদের ওপর অত্যাচার হয়েছে, নির্যাতন হয়েছে। ঠিক ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর মেয়েদের ওপর রেপ হয়েছে, অত্যাচার হয়েছে। খুন করেছে, হাত কেটে দিয়েছে। চোখ তুলে দিয়েছে। হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করেছে। এরপর আমরা ২০১৫ সালে দেখেছি অগ্নিসন্ত্রাসের ভয়াবহ রূপ।
শেখ হাসিনা বলেন, আজকে নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যা, এইভাবে যদি একটি রাজনৈতিক দল অগ্নিসন্ত্রাস না করতো তাহলে যদি পুড়িয়ে মানুষ হত্যা না করতো তাহলে হয়তো নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যা মাথায় আসতো না। আজকে সকলকেই এই জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস-অগ্নিসন্ত্রাস, রেপ বা যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে সকলকেই সোচ্চার হতে হবে। সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা সেটাই চাই। এখানে দল-মত নির্বিশেষে সকলকে মানবতার কথা বলবে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির সংসদ সদস্যদের শপথ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, অবশেষে রামের সুমতি হয়েছে।
আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, আইএসের পেছনের যারা পৃষ্ঠপোষক তার অধিকাংশই অমুসলিম। সিরিয়াতে দীর্ঘদিন গুপ্তচর হিসেবে কাজ করেছে তারাই হচ্ছে আজকে আইএসের পৃষ্ঠপোষক। এর মধ্য দিয়ে প্রমাণিত যে আইএস নামে যারা ধর্মের দোহাই দিয়ে এই সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে এটা মূলত ধর্মের জন্য নয়। এটা মূলত ইসলাম ধর্মকে বিতর্কিত করার জন্য এই ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা করা হচ্ছে এবং ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।