টানা ১০ দিনের বেশি কোনো শিক্ষার্থী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকলে তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জানাতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া পড়ালেখার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের অন্যান্য কার্যক্রমের দিকেও খেয়াল রাখতে শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
রোববার সকালে সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়কালে মন্ত্রী শিক্ষকদের প্রতি এ আহ্বান জানান।
নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘আমরা আজকেই আমাদের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কতগুলো নির্দেশনা পাঠাব। এ বিষয়ে কাজ করার জন্য আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। সেখানে আমরা কী করতে পারি, আমাদের কী করা উচিত সে ব্যাপারে তারা মত দিয়েছেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘প্রথমে আমরা সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের জানাচ্ছি যে, তাদের প্রতিষ্ঠানে কোনো ছাত্র ১০ দিন বা তার অধিক অনুপস্থিত আছে কি না, তা যেন দ্রুত জানানো হয়। এজন্য আমরা তাদের ঠিকানা দিয়ে দিচ্ছি। দেখতে হবে আমাদের ছেলেমেয়েদের মধ্যে কোনো অস্বাভাবিকতা আছে কি না, যেটি হয়তো আগে কেউ খেয়াল করেনি।’
পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে একটি অফিস আদেশও জারি করে। ওই আদেশে বলা হয়, কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টানা ১০ দিনের বেশি শিক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকলে তার তালিকা করে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে হবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষকে। পরে সেই তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন শিক্ষা কর্মকর্তারা।
সম্প্রতি বাড়ি পালিয়ে জঙ্গিবাদে জড়ানোর বেশ কয়েকটি ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দশ দিনের বেশি অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের তালিকা চেয়েছে সরকার। তার প্রেক্ষাপটেই এ আদেশ জারি হলো।
গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার পর কমান্ডো অভিযানে নিহত ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনের ছবি আইএস প্রকাশ করেছিল, যারা সবাই গত কয়েক মাস নিখোঁজ ছিলেন বা পরিবারের যোগাযোগের বাইরে ছিলেন বলে স্বজনরা জানিয়েছেন।
এরপর ঈদের দিন শোলাকিয়ায় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় পুলিশের গুলিতে নিহত যুবকও গত মার্চ থেকে নিখোঁজ ছিলেন বলে পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় জিডি করা হয়।
এই ছয়জনের মধ্যে চারজনই বিভিন্ন ব্যয়বহুল ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে লেখাপড়া করেছেন। তাদের দুজন ঢাকার খ্যাতনামা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছিলেন, একজন ছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।
সাম্প্রতিক সময়ে উচ্চবিত্ত পরিবারের বহু ছেলে এভাবে বাড়ি ছেড়ে জঙ্গিবাদে ঝুঁকছে বলে ইতিমধ্যে অভিভাবকদের সতর্ক করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ বিষয়ে অভিভাবকদের তথ্য দিতে অনুরোধ করেছেন।
সম্প্রতি আরো ১০ যুবকের সন্ধান চেয়ে তাদের প্রতি ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছে তাদের অভিভাবকরা। এরা হলেন- ঢাকার তেজগাঁওয়ের মোহাম্মদ বাসারুজ্জামান, বাড্ডার জুনায়েদ খান (পাসপোর্ট নম্বর- এ এফ ৭৪৯৩৩৭৮), চাপাইনবাবগঞ্জের নজিবুল্লাহ আনসারী, ঢাকার আশরাফ মোহাম্মদ ইসলাম (পাসপোর্ট নম্বর-৫২৫৮৪১৬২৫), সিলেটের তামিম আহমেদ চৌধুরী (পাসপোর্ট নম্বর-এল ০৬৩৩৪৭৮), ঢাকার ইব্রাহিম হাসান খান (পাসপোর্ট নম্বর-এ এফ ৭৪৯৩৩৭৮), লক্ষ্মীপুরের এ টি এম তাজউদ্দিন (পাসপোর্ট নম্বর- এফ ০৫৮৫৫৬৮), ঢাকার ধানমণ্ডির জুবায়েদুর রহিম (পাসপোর্ট নম্বর-ই ১০৪৭৭১৯), সিলেটের মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ ওজাকি (পাসপোর্ট নম্বর-টি কে ৮০৯৯৮৬০) ও জুন্নুন শিকদার (পাসপোর্ট নম্বর-বি ই ০৯৪৯১৭২)।
[রাইজিংবিডি]