অনলাইন ডেস্কঃ
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বাংলাদেশকে ধ্বংস করে দিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল। কারণ, ঘাতকরা বুঝেছিল, এই বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে হলে শুধু বঙ্গবন্ধু নয়, বঙ্গবন্ধু পরিবারের সবাইকে মেরে ফেলতে হবে। এমনকি ১০ বছরের শিশু শেখ রাসেলকেও। তার কারণ হলো- তারা বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ বেঁচে থাকবে। বঙ্গবন্ধুর রক্তের ধারা শেখ হাসিনা (বেঁচে থাকায়) ক্ষমতা গ্রহণ করে দেশকে বাঁচিয়ে দেয়ার মাধ্যমে এটি প্রমাণিত হয়েছে।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সম্প্রীতি বাংলাদেশ আয়োজিত ‘শোকের মাস, ষড়যন্ত্রের মাস আগস্ট’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি।
আইনমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়। এই ইমডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারির অর্থই হলো বঙ্গবন্ধু হত্যার কোনো বিচার হতে পারবে না।
তিনি বলেন, তাদের ষড়যন্ত্র, ২১ বছরের শাসন এবং তাদের আদর্শকে তারা কতটা গভীরে নিয়ে গিয়েছিল, তা বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা করতে গিয়ে আমরা দেখেছি। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার পেতে হাইকোর্টেও বেগ পেতে হয়েছে। হাইকোর্ট বিভাগের সাতজন বিচারক এই মামলার আপিল শুনতে বিব্রতবোধ করেছিলেন।
আনিসুল হক বলেন, জিয়াউর রহমান এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তদন্তের সময়ই তার জড়িত থাকার তথ্যটি পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু জিয়াউর রহমান তখন বেঁচে না থাকায় আইনানুযায়ী তাকে অভিযোগপত্রে আসামি হিসেবে দেখানো যায়নি। একই কারণে, খন্দকার মোশতাককেও বাদ দেয়া হয়েছিল।
আইনমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পেছনে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রও ছিল। জিয়াউর রহমান সরকার গঠনের পর শাহ আজিজুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী করেছিলেন। তিনি পাকিস্তানের দোসরদের নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করেছিলেন। এতেই প্রমাণিত হয় যে, জিয়াউর রহমান আর যাই হোক, তিনি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। তিনি বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেননি। এসব কর্মকাণ্ড থেকে আমাদের বুঝে নিতে হবে যে, সেইদিন বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের ১৭ জন সদস্যকে হত্যা করা হয়েছিল বাংলাদেশকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হবে না, এমন ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আগামী প্রজন্ম জানতে চায়, কেন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল। তার হত্যার বিচারের জন্য কেন ২১ বছর দেশকে অপেক্ষা করতে হয়েছে। কেন নেপথ্যের মানুষদের এখন পর্যন্ত বিচার হয়নি। এ জন্য অবশ্যই একটি কমিশন গঠিত হবে।
তিনি বলেন, দেশের জনককে হত্যার নেপথ্যে যারা ছিল, তাদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেয়ার সুযোগ আমরা পেয়েছি। আমরা সেই সুযোগ ছেড়ে দেব না। আমরা এই কমিশন ইনশা-আল্লাহ গঠন করবই।
মন্ত্রী বলেন, কমিশন গঠন অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। অনেকেই বলছেন যে, এই কমিশনকে দিয়ে অন্যান্য যে হত্যাকাণ্ড হয়েছে সেগুলোকেও তদন্ত করতে হবে। আমি মনে করি, এই কমিশনকে শুধু বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যের লোকজনকে চিহ্নিত করতে কাজ করার সুযোগ দেয়া উচিত হবে।
মন্ত্রী বলেন, এরশাদের সময়, খালেদা জিয়ার সময় দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র বানানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। এই ষড়যন্ত্র থেকে আমরা উঠে এসেছি। এখন শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোলমডেলে পরিণত করেছেন। তিনি বাংলাদেশকে একটা মর্যাদার আসনে বসিয়েছেন। এটাই ছিল তার পিতার কাছে অঙ্গীকার। তার স্বপ্নই হচ্ছে তার পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর কাছে সব প্রজন্মের ঋণ আছে। এই ঋণ কিছুটা হলেও শোধ করতে হবে। এই ঋণ হচ্ছে- তিনি আমাদের একটি দেশ, একটি পতাকা, একটি সংবিধান ও একটি স্বপ্ন দিয়ে গেছেন। তার এই ঋণ শোধ করার জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনার পাশে থেকে তার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে। জননেত্রী শেখ হাসিনার ভিশন-২০২১, ভিশন-২০৪১ এবং ভিশন-২১০০ বাস্তবায়ন করতে পারলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হবে। বঙ্গবন্ধুর কাছে আমাদের যে ঋণ তা কিছুটা হলেও আমরা শোধ করতে পারব।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার কলঙ্ক থেকে মুক্ত হওয়ার দিন গুণছে বাঙালি জাতি। তাই যারা এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ছিল, তাদের চিহ্নিত করতে হবে।
সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক পীযুষ বন্দোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে সভায় বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান, সাবেক রাষ্ট্রদূত আতিকুর রহমান, সাবেক সচিব নাসির উদ্দিন, মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার, সংগঠনের সদস্য সচিব প্রফেসর ডা. মামুন আল মাহতাব প্রমুখ আলোচনা করেন।
সূত্রঃ জাগোনিউজ