আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
রাখাইনে রোহিঙ্গা গণকবর এবং নৃশংসতা নিয়ে তদন্তে নতুন তথ্য পাওয়ার পর জড়িত সেনা সদস্যদের সামরিক আদালতে বিচারের (কোর্ট মার্শাল) ঘোষণা দিয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।
শনিবার মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ অং হ্লাইংয়ের কার্যালয়ের ওয়েবসাইটে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
বলা হয়, একটি সামরিক আদালত উত্তরের রাখাইন রাজ্যে তদন্ত করতে গিয়ে ‘একটি গ্রামে কয়েকটি ঘটনায় সেনাদের নির্দেশ পালনে অবহেলার’ প্রমাণ পেয়েছে। ওই গ্রামে রোহিঙ্গাদের উপর গণহত্যা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
২০১৮ সালের ফেব্রয়ারিতে বার্তা সংস্থা এপি’র একটি প্রতিবেদনে রাখাইনের বুথিডাং পৌরসভার গুতারপাইন নামের ওই গ্রামটিতে রোহিঙ্গাদের অন্তত পাঁচটি গণকবর রয়েছে বলে জানানো হয়েছিল।
তবে তখন মিয়ানমার সরকার গ্রামটিতে কোনো গণকবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছিল। সরকার পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সেখানে লড়াইয়ে ১৯ জন ‘জঙ্গি’ মারা গেছে এবং তাদের যথা নিয়মে ‘কবর দেওয়া হয়েছে’।
গত শনিবারই সেনাবাহিনী তাদের ওয়েবসাইটে গ্রামটিতে সেনাদের নির্দেশ ঠিকমত পালন না করার কথা জানাল। তবে এ ব্যাপারে সেনাবাহিনী বিস্তারিত আর কিছু জানায়নি।
ওয়েবসাইটে দোষী সেনাদের কোর্ট মার্শালের ঘোষণা আসার পর বার্তা সংস্থা রয়টার্স টেলিফোনে তদন্ত নিয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে চাইলে সেনা মুখপাত্র তুন তুন নেই বলেন, এ তদন্ত প্রতিবেদন অত্যন্ত গোপনীয়।
“ওটা সম্পর্কে জানার এখতিয়ার আমাদের নেই। তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ হলে এ বিষয়ে আরকটি বিবৃতি দেওয়া হবে।”
জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর গণহত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিকাণ্ডের অভিযোগ তোলার ভিত্তিতে ঘটনাটি তদন্তে গত মার্চে একজন মেজর-জেনারেল ও দুইজন কর্নেলের সমন্বয়ে ওই সামরিক আদালত গঠন করা হয়। তদন্ত কাজে গত দুই মাসে তারা দুই বার রাখাইনে গেছেন।
২০১৭ সালের অগাস্টে রাখাইনে কয়েকটি সীমান্ত পুলিশ পোস্টে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীদের’ হামলায় নয় পুলিশ নিহত হওয়ার পর রাজ্যে বিশেষ করে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে সেনা অভিযান শুরু হয়।
প্রাণ বাঁচাতে সেখানকার প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্র পেরিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশ আশ্রয় নেয়। পালিয়ে আসা ওইসব রোহিঙ্গাদের অনেকেই গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বা শরীরে পোড় ক্ষত নিয়ে আসেন। নারীদের শরীরে গণধর্ষণের শিকার হওয়ার চিহ্ন স্পষ্ট ছিল।
পালিয়ে আসা ওই সব মানুষদের অভিযোগ ছিল, সেনাবাহিনী গ্রামের পর গ্রামে নির্বিচারে গুলি চালায় এবং বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। নারী ও শিশুদের ধর্ষণ করছে। অভিযোগ তদন্তের জন্য ওই বছরই জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল বিভিন্ন দেশের তদন্ত কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি স্বাধীন তদন্তদল গঠন করে।
গত মাসে ওই তদন্তদল তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যাতে বলা হয়, সংখ্যালঘু মুসলমানদের নির্মূল করতে গণহত্যার অভিপ্রায় থেকেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের ধর্ষণ এবং যৌন নিপীড়ন করেছে।
তার আগে গত বছর জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন রাখাইনে রোহিঙ্গা মুলসমানদের উপর ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ চালানোর অভিযোগ তুলে মিয়ানমার সেনাপ্রধান মিন অং হলাইং এবং আরো পাঁচ জেনারেলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইনে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু করতে বলেছিল।
তখন মিয়ানমার ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করে।
যদিও গত মাসে মিন অং হলাইং বেশ কয়েকজন সেনাসদস্য রাখাইনে সাধারণ মানুষের উপর নিপীড়ন চালিয়েছে বলে স্বীকার করেন।
রাখাইনে সেনা অভিযানের নামে দমন-পীড়নের অভিযোগের তদন্ত করে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে মিয়ানমার সরকারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে।
সূত্রঃ বিডিনিউজ