ক্রীড়া ডেস্কঃ
তার কিপিং নিয়ে আগে থেকেই নানা কথা। প্রায় প্রতি ম্যাচে তার কোন না কোন ভুল কিংবা ব্যর্থতা দলকে ডোবাচ্ছে। দলের ব্যর্থতার কারণ হয়ে দেখা দিচ্ছে। ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালের আগে শেষ সংবাদ সম্মেলনেও উঠলো এই প্রশ্ন। কোচ রাসেল ডোমিঙ্গোকে জিজ্ঞাসা করা হলো, ফাইনালে কি মুশফিকুর রহীমই কিপিং করবেন? না অন্য কেউ গ্লাভস হাতে উইকেটের পিছনে দাঁড়াবেন?
কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো তার মত করে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। কিপার মুশফিককে নিয়েই অনেক কথা। সে অর্থে ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহীমকে নিয়ে তেমন কথা নেই; কিন্তু কিপিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহীমেরও যে অবস্থা বিশেষ ভাল নয়! তার ব্যাটে রান নেই। মুশফিক নিজের মত খেলতে পারছেন না। বিশেষ করে তার ব্যাট যে টি-টায়েন্টি ফরম্যাটে রীতিমত ফ্লপ, তার খেয়াল কি কেউ রেখেছেন।
যে মুশফিক ওয়ানডেতে বাংলাদেশের অন্যতম নির্ভরতার প্রতীক। টেস্টে কি পরিপাটি সাজানো-গোছানো ব্যাটিং শৈলি! একদম গাণিতিক ও ব্যাকরণ সন্মত ব্যাটিং যার সজহাত বৈশিষ্ট্য। ওয়ানডেতে তিনি আরও আত্মবিশ্বাসী। যার বিপক্ষে, যেখানেই খেলা হোক না কেন প্রথম বল থেকেই শতভাগ আত্মবিশ্বাসী। প্রথম বল থেকে মাঝ ব্যাটে খেলে খেলে রান করা।
সেই মুশফিক টি টোয়েন্টিতে কেমন যেন ছন্নছাড়া। অগোছালো। অতিবড় মুশফিক বিরোধীও মানেন, তার ব্যাটিং টেকনিক অনেক সাজানো-গোছানো। টেস্ট এবং ওয়ানডেতে তার বেসিক ভালো। ব্যাট ও প্যাডের মাঝে ফাঁক কম। বলের পিছনে শরীর ও বাঁ-পা নিয়ে খেলার অভ্যাসটাও আছে।
সবচেয়ে বড় কথা ওয়ানডে এবং টেস্টে মুশফিক অনেক বেশি গাণিতিক ব্যাটিং করেন। ব্যাকরণ মেনে যতটা সম্ভব ‘ভি’তে (উইকেটের সামনে কভার, এক্সট্রা কভার, মিড অফ, মিন অন, মিড উইকেট ওয়াইড মিড অন) খেলার চেষ্টা করেন। ওই দুই ফরম্যাটে তার শটস সিলেকশনটাও বেশ ভাল। ভাল বলকে সমীহ দেখিয়ে আলগা ডেলিভারির বিপক্ষে অনেক বেশি সচল এবং রান তুলে নেয়ার দিকেই মনোযোগী থাকেন।
কিন্তু সেই মুশফিকই ২০ ওভারের ফরম্যাটে যেন কেমন? উইকেটে গিয়ে অযথা ছটফট করেন। মারার বল না পেলেও গিয়ে উচ্চভিলাসি শটস খেলার চেষ্টা করেন। উইকেট সোজা ডেলিভারিতে পা বাড়িয়ে সোজা ব্যাটে খেলা বাদি দিয়ে রিভার্স সুইপ, স্কুপ আর স্লগ সুইপ করে বসেন। এভাবে অকাতরে অনেকবার উইকেটও দিয়ে এসেছেন।
এ কারণেই টেস্ট আর ওয়ানডে ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ টি-টোয়েন্টিতে আজকাল রীতিমত রান খরায় ভুগছেন। ২০১৮ সালের ১০ ও ১৪ মার্চ কলম্বো আর প্রেমাদাসায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জোড়া ফিফটি (প্রথম ম্যাচে ৩৫ বলে ৭২* আর পরের ম্যাচে ৫৫ বলে ৭২*)। এরপর থেকেই আর রান নেই তার ব্যাটে।
পরের ১৫ ম্যাচে তার ব্যাট থেকে এসেছে মোটে (২৮+৯+২০+২২+৪৬+১৫+৪+১২+৫+১+১+০+৫+৩২+২৬) = ২২৫ রান। যার মধ্যে একবার ছাড়া বাকি ১৪ বার ২০-এর ঘর পার হয়ে তিরিশের ঘরেও পৌঁছাতে পারেননি।
৭ বার আউট হয়েছেন দশের নিচে। চলতি আসরেও প্রথম দুই ম্যাচে (০ + ৫) দু’অংকেই পা রাখতে পারেননি। দ্বিতীয় ম্যাচে উইকেটে এসে মিড অফ, কভার, পয়েন্ট ফিল্ডার থাকার পরও কভার ড্রাইভে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ঠির পরের বলে রিভার্স খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন। আর শেষ দুই ম্যাচে ওয়েল সেট হয়েও (৩২ ও ২৬) বাজে শট খেলে ফিরে গেছেন।
রান কম করার পাশাপাশি মুশফিকের আউট হবার ধরণগুলোও তার মানের সাথে ঠিক মানানসই মনে হয় না। ২০ ওভারের ফরম্যাটে মুশফিকের বেশিরভাগ আউট হওয়ার দৃশ্য অতিবড় মুশফিক ভক্তকেও কষ্ট দেয়। দেখতেও বড্ড খাপছাড়া লাগে। যা মুশফিকের মেধা ও সত্যিকার মানের সাথে মেলে না। যায় না।
এই যে খাপছাড়া আউট এবং কম রানে আউট হওয়া, সেটা শুধু যে তার নিজের পরিসংখ্যানকে জীর্ণ-শীর্ণ করছে, তাই নয়। বাংলাদেশ দলকেও ভোগাচ্ছে। সাকিব যত বড় ‘চ্যাস্পিয়ন’ প্লেয়ারই হোক না কেন, সন্দেহ নেই মুশফিুর রহীম বাংলাদেশের অন্যতম ব্যাটিং স্তম্ভ। তার জ্বলে ওঠা, রান এবং লম্বা ইনিংস খেলার ওপর বাংলাদেশের ব্যাটিং সাফল্য-ব্যর্থতার অনেকাংশ নির্ভর করে।
এক কথায় মুশফিক রান না করলে দলের ক্ষতি হয়। সে ক্ষতি পোষাণোর মত মিডল অর্ডার পারফরমার দলে নেই। থাকলেও তারা মুশফিকের মত করে দলের প্রয়োজন মেটাতে পারেন না। কাজেই মুশফিকের ভাল খেলাও জরুরি।
বছর দুয়েক আগে মুশফিকের টি-টোয়েন্টি ব্যাটিং দেখে জাতীয় দলের সাবেক কোচ সারোয়ার ইমরান বলেছিলেন, ‘মুশফিক সোজা ব্যাটে খেললেই তো রান পায়। সে অযথা ক্রিকেটের সবচেয়ে ছোট ফরম্যাটে বেশি সাইড শট খেলে। তেড়েফুঁড়ে যাকে তাকে মারতে যায়। রিভার্স, স্কুপ আর স্লগ সুইপ খেলতে যায়। তার তো বেসিক অনেক ভাল। সে ক্রিকেটের ব্যাকরণ মেনে ‘ভি’তে খেলে খেলেও ১২০ থেকে ১২৫/১৩০ স্ট্রাইকরেটে রান তুলতে পারে।
তার অযথা উদ্ভাবনী ব্যাটিং করার দরকার কি? আর যদিও বা এদিক ওদিক ব্যাট ঘোরান, সেটা একদম শেষ দিকে বা ‘ডেড ওভারে’ গিয়ে হলেও ক্ষতি নেই। মুশফিকের এ সত্য উপলব্ধি যে খুব জরুরি!
সূত্রঃ জাগোনিউজ