অনলাইন ডেস্কঃ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্নীতিবাজ উইপোকারা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের অর্থ লুটে নিচ্ছে। দেশের উন্নয়নের জন্য জনগণের কষ্টার্জিত অর্থের প্রতিটি পয়সার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে আমাদের এসব উইপোকাকে আটক করতে হবে।
বুধবার (২ অক্টোবর) রাজধানীর একটি হোটেলে দেশের প্রথম কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১-এর মাধ্যমে সব দেশীয় টেলিভিশন চ্যানেলের বাণিজ্যিক ট্রান্সমিশন উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলমান অভিযান অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমরা চলতি বাজেটে ১৭৩ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছি। কিন্তু, দুর্নীতিবাজ উইপোকারা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নকালে অর্থ লুটে নিচ্ছে। দেশের উন্নয়নের জন্য জনগণের কষ্টার্জিত অর্থের প্রতিটি পয়সার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতের জন্য আমাদের ওইসব উইপোকাকে আটক করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলমান অভিযান অব্যাহত রাখবো। এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকলে দল, পরিবার নির্বিশেষে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। আমি দেশের দরিদ্র মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন পূরণ করতে চাই।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় কোনও ধরনের প্রপাগান্ডা বা অপপ্রচার না করার জন্য গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, অপপ্রচারগুলো সরকারের বিরোধিতার নামে মানুষের মধ্যে অনাস্থা সৃষ্টির পাশাপাশি দেশে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আপনাদের কাছে আরেকটি আবেদন রাখতে চাই। আপনারা সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড তুলে ধরুন, যাতে দেশবাসীর মনে সরকারের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা তৈরি হয় এবং তারাও উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখতে পারে।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত গণমাধ্যম ব্যক্তিদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা বিরুদ্ধে বলেন, বিরোধিতা করেন, আমার তাতে কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু মিথ্যা বা অপপ্রচার যেন না হয় সে ব্যাপারে দয়া করে একটু সতর্ক থাকবেন।’
তিনি বলেন, ‘অপপ্রচার বা যা দেশ এবং মানুষের মনে অযথা সন্দেহ বা সংঘাত সৃষ্টি করে সে ধরনের সম্প্রচারের বিষয়ে আপনাদের একটু সতর্ক থাকতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিছু না হোক গোটা ১০ বছরে কিছু কাজ তো আমরা করেছি, সেটাকে তো আর অস্বীকার করা যাবে না। সেটাও একটু প্রচার করবেন, সেটাও আমরা চাই। কারণ, আপনি কাজের মধ্য দিয়ে তখনই সফলতা অর্জন করতে পারবেন যখন দেশের মানুষের মাঝে আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠবে।’
‘কাজেই এমন কিছু করা ঠিক হবে না যাতে মানুষ আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে, দিশেহারা হয়ে যায়। যেটুকু ভালো কাজ করেছি সেটুকুর প্রচার অন্তত আমি দাবি করি,’-যোগ করেন তিনি।
তার সরকার জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা ২০১৪ প্রণয়ন করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তথ্য কমিশন গঠনের পাশাপাশি নতুন নতুন বেসরকারি টিভি চ্যানেল এবং রেডিওকে অনুমতি দিয়েছি। কাজেই ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি দেশের উন্নয়নের তথ্যগুলো দয়া করে মানুষের কাছে একটু পৌঁছে দেবেন।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১-এর মাধ্যমে বাণিজ্যিক সম্প্রচারের জন্য বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো চুক্তিবদ্ধ হওয়ায় মালিকদের ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা।
বিদেশি স্যাটেলাইট ভাড়া করে অতীতে সম্প্রচারের জন্য যে পরিমাণ টাকা খরচ হতো এখন তা বেঁচে যাওয়ায় সেই অর্থ তারা কী কাজে লাগাবেন সে প্রশ্ন উত্থাপন করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কল্যাণে এর কিছু অংশ ব্যয় করারও পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দুর্যোগ মোকাবিলা, দুর্গম পাহাড় বা চর অঞ্চল বা হাওর অঞ্চলের মানুষের কাছে টেলিমেডিসিন সেবা পৌঁছে দেওয়া, শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ই-এডুকেশন পদ্ধতি চালুর কথাও তুলে ধরেন।
নিজস্ব স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ এর মাধমে সম্প্রচার শুরু হওয়ায় ইলেকট্রনিক সম্প্রচার মাধ্যমগুলোর অনেক বাধা দূর হবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এর মাধ্যমে পরনির্ভরশীলতা থাকবে না। আমরা নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সুযোগ পেলাম।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা আশপাশের দেশগুলোর কাছেও অফার করেছি। তারাও চাইলে এর ট্রান্সপন্ডার ভাড়া নিতে পারবে। এখান থেকেও আমরা অর্থ উপার্জন করতে পারবো। এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেক সহজে বার্তা পৌঁছাবে।’
দ্বিতীয় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণেও দেশ তৈরি হচ্ছে আভাস দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘একটা স্যাটেলাইটের নির্দিষ্ট সময় থাকে ১৫ বছর। এরমধ্যে আরেকটা আমাদের আনতে হবে। এরমধ্যে পাঁচ বছর হয়ে গেছে। দ্বিতীয়টা তৈরি করা শুরু করেছি, সময় থাকতে নিয়ে আসবো। সেটা আমরা একটু বড় আকারে করতে চাই।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে তার সন্তান এবং তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়েরও কৃতিত্ব তুলে ধরেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ ডিজিটাল। আমি বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী, ডিজিটাল শব্দটি আমি জানতাম না। এটা আমাকে দিয়েছিল সজীব ওয়াজেদ জয়।’
’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর বেসরকারি খাতে টেলিভিশনকে উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তখন অনেকেই এত অভিজ্ঞ ছিল না, অতটা সাড়াও পাইনি। কিন্তু যারা চেয়েছিল তাদের সকলকেই টেলিভিশন চ্যানেলের অনুমতি দিয়ে দেই।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘দায়িত্ব নেওয়ার পর একটাই কর্তব্য মনে করি, সেটা হচ্ছে আমার বাবা এই দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন, এ দেশের শোষিত-বঞ্চিত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন। সেই দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোটাই হচ্ছে আমার একমাত্র কর্তব্য।’
ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ বিনির্মাণে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ ও পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ নিজের পায়ে দাঁড়াবে। কারও কাছে হাত পেতে চলবে না। আজকে আমাদের বাজেটের সমস্ত অর্থ আমাদের নিজস্ব সোর্স থেকে আসে। আর বিদেশি কিছু ঋণ সহযোগিতা থাকে, সেটা ১০ থেকে ১৪ শতাংশের বেশি নয়।
তিনি বলেন, এই নিজস্ব অর্থে নিজের পায়ে দাঁড়াবার যে সক্ষমতা আমরা অর্জন করেছি তা আমাদের ধরে রাখতে হবে।
দেশব্যাপী একশ’ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় তার সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আসবে, মানুষের কর্মসংস্থান হবে, উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, রফতানি বৃদ্ধি পাবে। কাজেই এই রফতানিকে আমরা বহুমুখী করতে চাই। কোনও একটা পণ্যের ওপর নির্ভরশীল থাকতে চাই না।’ বাসস
সূত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন