জ্যোতিআর্য ভিক্ষু, ব্যাংকক (থাইল্যান্ড) থেকে :
বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার মাননীয় উপসংঘরাজ, বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ২১শে পদকে ভূষিত, দক্ষিণ চট্টলার আঞ্চলিক সংঘনায়ক, মায়ানমার সরকার কর্তৃক অগ্গহাসদ্ধম্মজ্যোতিকধজ উপাধি প্রাপ্ত, রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহারের পূজ্য অধ্যক্ষ, বিনয়াচার্য, সর্বজন শ্রদ্ধেয়, পন্ডিত ভদন্ত সত্যপ্রিয় মহাথের (বড়ভান্তের) মহোদয়ের পারলৌকিক নির্বাণ শান্তি-সুখ কামনায় পুণ্যরাশি দান উপলক্ষে “মহাসংঘদান ও স্মৃতিচারণ সভা” ব্যাংককের ওয়াট তং চালানাম বিহারে উক্ত বিহারের অধ্যক্ষের সভাপতিত্বে, অত্যন্ত ভাব গাম্ভীর্য পরিবেশের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) থাইল্যান্ডের ব্যাংককের ওয়াট তং চালানাম বৌদ্ধ বিহার প্রাঙ্গণে এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
থাইল্যান্ডের ব্যাংকক শহরে অবস্থানরত বেশিরভাগ বাংলাদেশী বৌদ্ধ ভিক্ষু-সংঘ উপস্থিত হয়ে অনুষ্ঠানকে সুন্দর ও সার্থক করে তুলেন। অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য ও স্মৃতিচারণ করেন ভদন্ত ডক্টর ধর্মরক্ষিত থের। স্মৃতি চারণে তিনি ছোটবেলায় ভদন্ত সত্যপ্রিয় মহাথের’র স্মৃতি বিজড়িত মুহূর্ত গুলো তুলে ধরেন এবং পুণ্যরাশি দান করেন।
পরম শ্রদ্ধেয় ভদন্ত সত্যপ্রিয় মহাথেরকে স্মরণ করে আরও স্মৃতি চারণে অংশ নেন ভদন্ত মিলনজ্যোতি থের, তিনি বিগত ২০১২ সালের ২৯শে সেপ্টেম্বর যখন রামুর বৌদ্ধ বিহার গুলোতে হামলা লুটপাট করা হচ্ছিল তখন সেখানে স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন এবং তার দেখা অভিজ্ঞতা গুলো শেয়ার করেন।
এছাড়াও আলোচনায় অংশ গ্রহণ করেন, ভদন্ত অনিমেষ থের মহোদয়। তিনি তার বক্তব্যে পূজনীয় ব্যক্তিকে পূজা করা উত্তম মংঙ্গল বলে মন্তব্য করেছেন। এছাড়াও পূজনীয় উপসংঘরাজ ভদন্ত সত্যপ্রিয় মহাথের ভারত-বাংলায় ও তাঁর সহোদর বড় ভাই ভদন্ত জিনবোধি মহাথের মহোদয় মায়ানমারে বুদ্ধ শাসন ও সমাজের জন্য আত্মোৎসর্গ করে বিশ্ব বৌদ্ধ সমাজের কল্যাণ সাধন করেছেন বলে মন্তব্য করেন।
আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মহাচুলালংকরণ রাজা বিদ্যালায়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পিস ডিপার্টমেন্টে শান্তি বিষয়ে পিএইচডি অধ্যয়নরত ভদন্ত থিরাসাতু ভিক্ষু (লাভলু ভান্তে) বলেন, ভদন্ত সত্যপ্রিয় মহাথের একজন মৈত্রীর সাধক ছিলেন। তিনি সকলের প্রতি সমানভাবে মৈত্রী ধর্ম রক্ষা করতেন। সত্যপ্রিয় মহাথেরকে একটা মানবিক বৃক্ষ হিসেবে তুলনা করেছেন তিনি। ভদন্ত সত্যপ্রিয় মহাথের’র মৃত্যুর সাথে সাথে সেটা আবারো প্রকাশ পেল, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল স্তরের মানুষ একত্রিত হয়ে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে তৎপর। যতবার তিনি ভান্তেকে পরিদর্শন করেছেন ততবারই তিনি সহাস্যে উজ্জল বদনে আলাপচারিতায় রত হতেন। সত্যিই একজন আলোকিত সংঘপুরোধা হিসেবে উল্লেখ করেন।
আলোচনায় অংশ গ্রহন করেন, ভদন্ত নন্দবংশ মহাথের। উপস্থিতি ছিলেন ভারতীয় বৌদ্ধ ভিক্ষু পবিত্র চাকমা ভিক্ষু্ ও প্রায় ৩২জন বাংলাদেশী ভিক্ষুসংঘ ও একজন থাই অধ্যক্ষ ভিক্ষু অংশ গ্রহণ করেন। এছাড়াও থাই-বাংলাদেশী ধর্মপ্রাণ উপাসক -উপাসিকাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাবু বিমল কান্তি বড়ুয়া ও তার সহধর্মিণী লতিকা রাণী বড়ুয়া, বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইনসের থাইল্যান্ডের কাউন্টি ম্যানেজার মিস্টার সজল বড়ুয়া, থাই উপাসিকা শ্রীমতি মায়ুরী মানুত্তাম, জয়ন্ত চাকমা, রামুর উত্থায় রাখাইন, হিমেল বড়ুয়া, থাই উপাসিকা মিসেস চেন।
সার্বিক সহযোগিতা করেন, ভিক্ষু রতনানন্দের (ছোটন) ধর্মীয় মাতা থাই উপাসিকা। ওয়াট তং সালানাম বিহারের অধ্যক্ষ মহোদয় ও ছোটন বড়ুয়া।
শুরু থেকে যথেষ্ট উৎসাহ ও সহযোগিতা করেন, ডক্টর সঞ্জয় বড়ুয়া চৌধুরী, মৃদুল বড়ুয়া, জ্যোতিসার থের ফ্রান্স, ভদন্ত সত্যজিৎ থের, ইন্টারন্যাশনাল বুড্ডিস্ট কলেজ, হাতযাই, (IBC)।
মহতি পুণ্যানুষ্ঠানের আয়োজক যথাক্রমে, জ্যোতিআর্য ভিক্ষু, মৈত্রী রতন ভিক্ষু (সিমু), ছোটন বড়ুয়া, ইমপেল বড়ুয়া, পূর্ণ বড়ুয়া, ধাম্মাসেন ভিক্ষু, সঞ্জীব বড়ুয়া, অয়ন বড়ুয়া, সোহেল বড়ুয়া ও অন্যান্যরা।
সমগ্র অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন, জ্যোতিআর্য ভিক্ষু।
উক্ত স্মৃতিচারণ সভা ও মহান সংঘদান অনুষ্ঠান আয়োজন করেন শ্রদ্ধেয় উপসংঘরাজ ভদন্ত সত্যপ্রিয় মহাথেরর থাইল্যান্ডে অবস্থানরত শিষ্য-প্রশিষ্য ও ভক্ত ও শুভানুধ্যায়ীগণ। পরিশেষে সংঘদানানুষ্ঠান দান দিয়ে পূজনীয় উপসংঘরাজ ভদন্ত সত্যপ্রিয় মহাথের’র নির্বাণ শান্তি কামনায় জল ঢেলে পুণ্যরাশি বিতরণ করা হয়।