খালেদ শহীদ, রামুঃ
হাজার হাজার ক্রীড়ামোদির বাঁধভাঙা আনন্দ-উচ্ছাসের মধ্যদিয়ে কক্সবাজারের রামুর বাঁকখালী নদীতে শেষ হয়েছে গ্রাম বাংলার সবচেয়েলোকপ্রিয় খেলা নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা। তিনদিন ব্যাপী এ খেলার শেষদিন বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) বাঁকখালী নদীর দু’পাড় মুখর ছিল ‘মারো মারো, আরও জোরে, আরও জোরে’ ধ্বনিতে। গ্রামীণ জনপ্রিয় এ খেলাকে ঘিরে দুপুর থেকে সন্ধ্যাপর্যন্ত রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের তেমুহনী-অফিসেরচর পয়েন্টের বাঁকখালী নদীতীরের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বসেছিল হাজারো ক্রীড়ামোদির মিলনমেলা।ফাইনাল খেলায় জোয়ারিয়ানালা’র পশ্চিম নোনাছড়ি ভাই ভাই সমিতি নৌকা বাইচ দল চ্যাম্পিয়ন,নোনাছড়ি যৌথ বাহিনী তালেব মেম্বার নৌকা বাইচ দল রানার্সআপ ও ইয়ং টাইগার স্পোটিং ক্লাব শ্রীমুরানৌকা বাইচ দল তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে। অতিথিরা বিজয়ী নৌকা বাইচ দলের খেলোয়াড়ের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ¦ সাইমুম সরওয়ার কমল নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি’র বক্তৃতা করেন। রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদের আয়োজনে এ খেলা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান অতিথি সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি বলেন, মানুষের মাঝে সম্প্রীতি সৃষ্টি করতেই পূর্বপুরুষেরা রামুর বাঁকখালী নদীতে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা আয়োজন করতো। রামুর লোকজ ঐতিহ্য নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে। হাজারো ক্রীড়ামোদির বাঁধভাঙা আনন্দ-উচ্ছ্বাসে আমরা আনন্দ ভাগ করতে চাই। আমরা শিক্ষার পক্ষে, সম্প্রীতির পক্ষে, ঐক্যের পক্ষে।
ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফরিদুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, ৩০ বিজিবি’র সহকারি পরিচালক মাসুদ রানা, রামু থানা অফিসার ইনচার্জ মো. আবুল খায়ের, ওসি (তদন্ত) এসএম মিজানুর রহমান,কক্সবাজার জেলা পরিষদ সদস্য নুরুল হক, জেলা আওয়ামীলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক আবু তাহের আজাদ, চাকমারকুল ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সিকদার,রাজাকুল ইউপি চেয়ারম্যান মুফিজুর রহমান, কাউয়ারখোপ ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ, রশিদনগর ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আলম, গর্জনিয়া ইউপি চেয়ারম্যানছৈয়দ নজরুল ইসলাম, কচ্ছপিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবু ইসমাঈল মো. নোমান, জোয়ারিয়ানালা ইউপি চেয়ারম্যান কামাল শামশুদ্দিন আহমেদ প্রিন্স, খুনিয়াপালং ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মাবুদ, ঈদগড় ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমদ ভ‚ট্টো, দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইউনুচ ভ‚ট্টো, ক্রীড়া সংগঠক গিয়াস উদ্দিন, উপজেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদকনীতিশ বড়–য়া, উপজেলা স্বেচ্ছা সেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক তপন মল্লিকপ্রমুখ।পুরষ্কার বিতরনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় করেন, ওমর ফারুক মাসুম।
রামু কেন্দ্রীয় নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা পরিচালনা পরিষদ সভাপতি ও ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফরিদুল আলম জানান, কক্সবাজার সদর, চকরিয়া ও রামু উপজেলার ২৬টি নৌকা বাইচদল এ বারের প্রতিযোগিতায় অংশনিয়েছে। গত ৩ অক্টোবর প্রতিযোগীতার উদ্বোধন ও ১৭ অক্টোবর দ্বিতীয় দিনের খেলা অনুষ্ঠিত হয়। বাঁকখালী নদীতে আবহমান বাংলার লক্ষ জনতার প্রাণের উচ্ছাসে শত বছরের ধারবাহিকতায় ঐতিহ্যবাহী রামু কেন্দ্রীয় নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি বলেন, রামু গ্রামীণ লোকজ ঐতিহ্য নৌকা বাইচ খেলা। শত বছর আগে রামুর বাঁকখালী নদীতে রাখাইনরা নৌকা বাইচ খেলা শুরু করেন। কালক্রমে এ খেলা রামুবাসীর ক্রীড়া-সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। হাজারো মানুষের সম্মিলন দেখেই মনে হয়, নৌকা বাইচই এখনো গ্রাম বাংলার সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। নৌকা বাইচ খেলার এ আয়োজন রামু উপজেলার হাজার বছরের সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি আরো সুদৃঢ় হবে।
রামু কেন্দ্রীয় নৌকা বাইচ উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আবুল বশর জানান, গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ এখনও মানুষকে নির্মল আনন্দ দেয়। তাই নৌকাবাইচ উপভোগ করতে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রামুর বাঁকখালী নদীর পাড়ে শিশু-কিশোর, নারী, যুবক-বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষ ছুটে যান। মাঝিমাল্লা ও দর্শনার্থীর ‘মারো মারো, আরও জোরে, আরও জোরে, হেইয়ো হেইয়ো’ ধ্বনিতে মুখরিত ছিল। বাঁধভাঙা উল্লাস ও নির্মল আনন্দে ছিল উত্তেজনা।
মাঝিমাল্লারা তাদের পেশীশক্তি ও কৌশলগত পারদর্শিতা দেখিয়ে সব নৌকা বাইচ দলকে ছাড়িয়ে সুশৃংখল নৌকা বাইচ দলের পুরস্কার জিতে নেন, চকরিয়ার ১০ নং চিরিঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ আশরাফুজ্জান নৌকা বাইচ দল এবং শ্রেষ্ট বেত টানার পুরস্কার জিতে নেন, চাকমরারকুল কলঘরের এরশাদ মাঝি।
খেলা পরিচালনায় ছিলেন, আবুল বশর মেম্বার,এড. তানভীর শাহ ও গোপাল নাথ। বিচারকের দায়িত্বে ছিলেন, ছিদ্দিক আহমদ, হাজি মহিউদ্দিন, আবদুর রহিম। সার্বিক পরিচালনায় ছিলেন, আমান উল্লাহ, আছাদ উল্লাহ, জাফর আলম মেম্বার, সাইফুল ইসলাম মেম্বার সহ ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা।