অনলাইন ডেস্কঃ
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা ঠেকাতে সব ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষদের এক হওয়ার আহ্বান এসেছে ঢাকায় এক অনুষ্ঠান থেকে।
‘বাংলাদেশ ইন্টার-রিলিজিয়াস ফোরাম ফর পিস এন্ড হারমনি’ নামের একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে এই আহ্বান আসে।
শনিবার ঢাকার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানে সংগঠনটির লোগো উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী।
অনুষ্ঠানে গওহর রিজভী বলেন, “যারা বদমাস, যারা গুণ্ডা, তাদের কোনো ধর্ম নেই, দেশ নেই। তারা শুধু চায় আমাদের দেশটাকে পিছিয়ে দেওয়ার জন্য। তারা আমাদের উন্নতি পছন্দ করে না।
“তাই সকলকেই একসঙ্গে হয়ে আমাদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে হবে। আর যারা আমাদের বাধা দিচ্ছে, তাদের যেভাবে পারি দমন করার চেষ্টা করতে হবে।”
বাংলার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধে সময় কেউ আমরা বলিনি, আমি মুসলমান, আমি হিন্দু, খ্রিস্টান বা বৌদ্ধ। আমরা সকলেই মাঠে নেমেছি, সংগ্রাম করেছি, রক্ত দিয়েছি, জীবন দিয়েছি।
“আজকে স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছর পরেও এই ধরনের দাঙ্গা-হাঙ্গামা আমাদের দেখতে হচ্ছে? আমরা তো একটি সেক্যুলার, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। ৫০ বছর পর কেন বার বার আমাদের সেক্যুলারিজমের উপর আঘাত করছে?”
এই আঘাত প্রতিহত করতে সবার সক্রিয়তা চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের সবার দায়িত্ব। বিশেষ করে সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের বড় দায়িত্ব। আমাদের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর যেন কেউ হাত তুলতে না পারে।”
অনুষ্ঠানে শোলাকিয়ার ইমাম মো. ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন, “চারদিকে কেবল দূষিত বাতাস। হিংসা, নিপীড়ন, অন্যয্যতার দূষিত বাতাস আধ্যাত্মিক পরিবেশকে বিনষ্ট করছে। নিজেকে শ্রেষ্ঠ আর অপরকে হীন বলার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।”
কুরআনের বাণী উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, “মন্দকে মন্দ দিয়ে প্রতিহত করা যায় না। ভালো দিয়ে ভালোর উন্মেষ ঘটাতে হবে। সমাজকে পরিবর্তন করতে হলে ভালবাসা-প্রেমের প্রসার ঘটাতে হবে।”
ভোলার বোরহানউদ্দিনের ঘটনায় জড়িতদের বিচার বিচার দাবি করে তরীকত ফেডারেশনের সভাপতি, সংসদ সদস্য নজিবুল বাশার মাইজভাণ্ডারী বলেন, “বোরহানউদ্দিনে জল ঘোলা করে এই ঘোলা পানিতে কারা মাছ শিকার করতে চায়, এদের চিহ্নিত করতে হবে।”
বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্ট্রান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, “অধার্মিকের প্রচার-প্ররোচনায় মানুষকে মানুষের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করে কারা এটা বার বার করছে তা চিহ্নিত করার সময় এসেছে।”
সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন ও সংখ্যালঘুদের জন্য কমিশন গঠনের জন্য সরকারের কাছে আহ্বানও জানান এই আইনজীবী।
শান্তি ও সম্প্রীতির জন্যে বাংলাদেশ আন্তঃধর্মীয় ফোরামের সমন্বয়ক সৈয়দ তৈয়াবুল বাশারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ বৌদ্ধ ভিক্ষু মহাসংঘের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনবোধি ভিক্ষু, চার্চ বাংলাদেশের সাবেক মডারেটর বিশপ পল শিশির সরকার, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সামিয়া হক।
নতুন সংগঠনটির সমন্বয়কারী নির্মল কুমার চ্যাটার্জী, নির্মল রোজারিও ও ভিক্ষু সুনন্দ প্রিয়ও বক্তব্য দেন।
অয়োজকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী শক্তির উত্থান এবং স্বাধীনতাবিরোধী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতা এবং সাধারণ মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে সেভ এন্ড সার্ভ ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে গড়ে তোলা হয়েছে বাংলাদেশ ইন্টার-রিলিজিয়াস ফোরাম ফর পিস এন্ড হারমনি।
এই ফোরাম সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে সংযুক্ত করে দেশজুড়ে সংলাপ, কর্মশালা, সমাবেশের আয়োজন করবে।
সূত্রঃ বিডিনিউজ