অনলাইন ডেস্কঃ
ঢাকার সাবেক মেয়র বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা নিউ ইয়র্কের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সোমবার বেলা পৌনে ৩টায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখনই নিউ ইয়র্ক থেকে আমি টেলিফোনে জেনেছি, আমাদের দলের ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা আর নেই। তিনি মারা গেছেন।”
ক্যান্সারে আক্রান্ত খোকা গত পাঁচ বছর ধরেই নিউ ইয়র্কে অবস্থান করছিলেন। গত ১৮ অক্টোবর থেকে তিনি ভর্তি ছিলেন ম্যানহাটনের মেমোরিয়াল স্লোয়ান ক্যাটারিং ক্যান্সার সেন্টারে। তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর।
শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন ও উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলামও।
তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, ঢাকার এই সাবেক মেয়র ও সংসদ সদস্যের মরদেহ দেশে আনতে সরকার ‘সর্বাত্মক’ সহযোগিতা করবে।
খোকার অবস্থা খারাপের দিকে যাওয়ায় গত সাপ্তাহে ঢাকা থেকে নিউ ইয়র্কে যান তার বড় ছেলে ইশরাক হোসেন। তার মা, ভাই, বোন ও বোনের স্বামী উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালে।
ফেইসবুকে ইশরাক জানিয়েছেন, নিউ ইয়র্কের স্থানীয় সময় রোববার রাত ২টা ৫০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় সোমবার দুপুর ১টা ৫০) তার বাবার মৃত্যু হয়।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেকে রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের ভাইস চেয়ারম্যান খোকার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন। তারা শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
মুক্তিযোদ্ধা খোকা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাপ থেকে বিএনপিতে এসেছিলেন শুরুতেই। ব্রাদার্স ইউনিয়নের সূত্রে বিএনপির ঢাকা মহানগরের সাবেক সভাপতি খোকার ক্রীড়া সংগঠক হিসেবেও পরিচিত রয়েছে।
সাদেক হোসেন খোকা অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত মেয়র এবং খালেদা জিয়ার মন্ত্রিসভার মৎস্য ও পশু সম্পদমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৯১ ও ২০০১ সালে ঢাকার সূত্রাপুর-কোতোয়ালি আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
২০১৪ সালের ১৪ মে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে দেশে কয়েকটি দুর্নীতি মামলা হয় এবং কয়েকটিতে সাজাও দেয় আদালত।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিউ ইয়র্ক সিটির কুইন্সের একটি বাসায় থেকে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। সপ্তাহ তিনেক আগে মুখে ঘা দেখা দিলে এই হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়।
সেখানে ২৭ অক্টোবর খোকার শ্বাসনালীতে অস্ত্রোপচার করে টিউমার অপসারন করা হয়। এরপর তার অবস্থার দ্রুত অবনতি থাকে। এক পর্যায়ে চিকিৎসকরাও হাল ছেড়ে দেন। শেষ পাঁচদিন এই বিএনপি নেতাকে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়।
সোমবার ভোর রাতে খোকার মৃত্যুসংবাদ জানার পর প্রবাসী বিএনপি নেতাকর্মীদের অনেকেই হাসপাতালে ছুটে যান। শোক-সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের সহমর্মিতা জানান তারা।
নিউ ইয়র্ক সময় সোমবার আসরের পর জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে সাদেক হোসেন খোকার জানাজা হবে বলে বিএনপি নেতা গিয়াসউদ্দিন জানান।
২০১৭ সালে পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর আদালতের দৃষ্টিতে পলাতক খোকা এবং তার পরিবারের কয়েকজন সদস্যের পাসপোর্ট আর নবায়ন করা হয়নি। এ কারণে রোববারও এক দোয়া মাহফিল থেকে খোকাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানায় বিএনপি।
খোকার বিশেষ সহকারী সিদ্দিকুর রহমান মান্না আমাদের নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধিকে বলেন, একাত্তরের এই মুক্তিযোদ্ধার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তার লাশ দেশে পাঠানো হবে।
বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসাও বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধা খোকার লাশ দেশে পাঠানোর অনুমতি দেওয়া হবে। তার স্ত্রীকেও ট্র্যাভেল ডক্যুমেন্ট দেওয়া হবে, এ নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না।
সূত্রঃ বিডিনিউজ