অনলাইন ডেস্কঃ
সাম্প্রতিক সময়ে দেশে নারী-শিশুর ওপর ধর্ষণসহ সব ধরনের যৌন সহিংসতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ঘরে-বাইরে, রাস্তাঘাট, যানবাহন, কর্মক্ষেত্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নারীরা প্রতিনিয়ত যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। পত্রিকার হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১,২৫৩ নারী।
সোমবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে এক প্রতীকী অনশন কর্মসূচিতে এসব তথ্য জানানো হয়। বাংলাদেশের প্রথম সারির ৯টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার খবর পর্যালোচনা করে এ তথ্য বের করা হয়েছে। ‘ধর্ষণ ও সকল যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে আমরা’ ব্যানারে এ কর্মসূচির আয়োজন করে নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা ‘আমরাই পারি, পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোট’। কর্মসূচিতে ‘নিজেরা করি’ ও ‘নারীপক্ষ’ সংহতি প্রকাশ করে।
শহীদ মিনারে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দুটি ভাগে প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালিত হয়। এ ছাড়াও ধর্ষণের বিরুদ্ধে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়। অনশন কর্মসূচিতে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে একাদশ সংসদ নির্বাচনের দিন নির্যাতনের শিকার সেই গৃহবধূ, গণপরিবহনে নির্যাতনের শিকার নিহত রূপার ভাই, ঢাকার শ্বশুরবাড়িতে মৃত পিংকির পরিবার, সাতক্ষীরার মুক্তির ভাই, দিনাজপুরের নিহত আঁখি মনি’র বাবা আসাদুজ্জামান সংহতি প্রকাশ করেন।
কর্মসূচি শেষে নারী ও শিশুর ওপর যৌন সহিংসতা বন্ধে উদ্যোগ নিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে গণস্বাক্ষর ও ৯ দফা দাবি সংবলিত একটি স্মারকলিপি প্রদান করার কথা। অনশন কর্মসূচিতে আয়োজক সংগঠনের সমন্বয়কারী জিনাত আরা হক স্মারকলিপি পড়ে শোনান।
পত্রিকার খবরের বরাতে বলা হয়, গত ১০ মাসে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ২০০ নারীকে, যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ২২১ নারী, দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ২৫১ জন, ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৬২ জনকে, আত্মহত্যা করেছেন ১০ জন, ধর্ষণের প্রতিবাদ করায় হত্যার শিকার হয়েছেন ৩ নারী ও ২ পুরুষ, ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৭৬৭ শিশু, ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ১৩৫ শিশুকে, যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছে ৮০ মেয়ে ও ২৬ ছেলে শিশু।
পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোটের চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল বলেন, ‘দেশে যেসব নারী যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে, তার মধ্যে অল্পকিছু মানুষ অনশনে এসেছে। প্রতীকী অনশন করে জানান দিতে চাই- নারী সহিংসতার ঘটনায় আমরা বিক্ষুব্ধ ও দুঃখ-ভারাক্রান্ত। নারী নির্যাতনের গভীরের কারণ হলো সমাজে সমঅধিকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া। নারীর ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠিত না হওয়া।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এমন সামাজিক-রাজনৈতিক পরিবেশে বাস করছি যেখানে কোনো জবাবদিহি নেই। বিচারহীনতার সমাজে বাস করছি বলেই বারবার নারীদের পের যৌন সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।’
সূত্রঃ সমকাল