অনলাইন ডেস্কঃ
দেশে ডায়াবেটিস ও ডায়াবেটিসজনিত অন্যান্য অসুখে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশনের নিবন্ধন অনুযায়ী, দেশে ডায়াবেটিস রোগী ৮৪ লাখ। তবে বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা ৯০ লাখ, বছরে বাড়ছে আরও ১ লাখ করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যায় ২০৪৫ সালের মধ্যে বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশের একটা হবে বাংলাদেশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অসংক্রামক এই রোগের চিকিৎসা বেশ ব্যয়বহুল। ফলে চিকিৎসাব্যয় মেটাতে অসচ্ছল হয়ে পড়ছে অনেক মানুষ। এছাড়া রোগীর কর্মক্ষমতা কমছে। ফলে উৎপাদনশীলতা কমে তা প্রভাব ফেলছে অর্থনীতিতেও।
এক হিসাবে দেখা গেছে, চিকিৎসাবাবদ ডায়াবেটিস রোগীর প্রতিমাসে গড়ে খরচ দুই হাজার টাকা। সেই হিসাবে এই রোগের চিকিৎসায় প্রতিমাসে দেশে খরচ হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ বছরে খরচ হচ্ছে ২১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডায়াবেটিস অন্য আরও নানা ধরনের রোগ ডেকে আনে। হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনির সমস্যা, অন্ধত্ব ইত্যাদি ডায়াবেটিসজনিত রোগে চিকিৎসাব্যয় বাড়তেই থাকে। ফলে ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় আর্থিক চাপ যেমন বাড়ছে।
ডব্লিউএইচও’র হিসাবে, ১৯৮০ সালে বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ছিল প্রায় ১১ কোটি। ২০০০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭ কোটিতে (বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় ৩ শতাংশ)। আগামী ২০৩০ সালে এ সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হবে। বর্তমানে বিশ্বে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা ৪২ কোটি। প্রতিবছর ১০ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয় এ রোগে।
ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশন বলছে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্কদের ৮০ শতাংশই মধ্য ও নিম্ন আয়ের দেশের মানুষ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রায় সব দেশের মতো বাংলাদেশেও স্বাস্থ্য কার্যক্রমের অগ্রাধিকারের তালিকায় ডায়াবেটিসের স্থান অনেক নিচে। ফলে এসব দেশে ডায়াবেটিস স্বাস্থ্য পরিচর্যা কর্মসূচি সন্তোষজনকভাবে গড়ে ওঠেনি। সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হয় ঠিকই, কিন্তু রোগীকে ইনসুলিন দেওয়া হয় শুধু হাসপাতালে ভর্তি হলেই।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. রিজওয়ানুল করিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ডায়াবেটিস যেহেতু একটি দীর্ঘমেয়াদি অসুখ সে কারণে এর চিকিৎসাব্যয় অনেক বেশি। ‘আউট অব পকেট এক্সপেনডেচার’ অর্থ্যাৎ হিসাবের বাইরে যে খরচ তার ৬৭ ভাগ যায় ডায়াবেটিসসহ অসংক্রামক রোগের জন্য।
তিনি বলেন, আমাদের যে চতুর্থ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা তাতে এই ৬৭ শতাংশকে ৪০ ভাগে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে লক্ষ্যেই পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাকে ধরেই কাজ করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ বলেন, দেশে এইডস, যক্ষ্মা ও ম্যালেরিয়ায় যত মানুষ আক্রান্ত হয় তার চেয়েও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয় কেবল ডায়াবেটিসে। তার দাবি, এর চিকিৎসায় যে পরিমাণ খরচ, তা জোগাতে মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাচ্ছে।
গ্রিন লাইফ মেডিক্যাল কলেজের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. তানজিনা হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ কারণে বেশি চিন্তিত যে এই অসুখে খরচ আনলিমিটেড। কারও ডায়াবেটিস হলে আজীবন খরচ করতে হয়। জীবনভর ওষুধ খেতে হয়, ইনসুলিন নিতে হয়। আর ডায়াবেটিসের কারণে কিডনি, চোখ বা পায়ের সমস্যা হলে খরচ বাড়তেই থাকে।
ডায়াবেটিস হলেও জটিলতা এড়ানোর ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, প্রিভেনশনের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। অর্থাৎ ডায়াবেটিস হওয়ার আগেই ব্যবস্থা নিতে হবে। এ জন্য শৈশব থেকে হেলথি লাইফে অভ্যস্ত হতে হবে। রিচ ফুড না খাওয়া, কায়িক পরিশ্রম বাড়াতে হবে। পার্কে, ফুটপাতে হাঁটার জায়গা করতে হবে, স্কুলগুলোতে খেলার মাঠের ব্যবস্থা করতে হবে।
অসংক্রামক রোগের কারণগুলোর দিকে সরকারের মনোযোগ দেওয়া উচিত মন্তব্য করে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, দরকার অনুযায়ী অবকাঠামো নির্মাণের ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে এটা আর সামাল দেওয়া যাবে না।
সূত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন