আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
প্রায় ছয় ঘণ্টা ধরে বন্ধ থাকার পর এক নারীর হৃদযন্ত্র পুনরায় চালু করে তার জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়েছে, যে ঘটনাকে চিকিৎসকরা খুবই বিরল ও বিস্ময়কর বলে বর্ণনা করছেন।
অড্রে স্কুম্যান নামের ওই নারীর বসবাস স্পেনের বার্সেলোনায়। তিনি স্পেনের পাইরেনিস পার্বত্য এলাকায় স্বামীর সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে তুষার ঝড়ের কবলে পড়েন।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তুষার ঝড়ের কবলে পড়ে অড্রে স্কুম্যান মারাত্মক হাইপোথারমিয়ায় আক্রান্ত হন। তার হাঁটতে-চলতে অসুবিধা হচ্ছিল। এক পর্যায়ে তিনি অচেতন হয়ে পড়ে যান। তার হৃদযন্ত্র একদম বন্ধ হয়ে যায়। কোনো হৃদস্পন্দনই পাওয়া যাচ্ছিল না।
অড্রে স্কুম্যানের স্বামী রোহানের ধারণা ছিল- তার স্ত্রী মারা গেছেন। ইমার্জেন্সি সার্ভিসের জন্য যখন তারা অপেক্ষা করছিলেন, তখন তিনি স্ত্রীর পালস পাচ্ছিলেন না। তার স্ত্রী শ্বাস নিচ্ছেন বলেও মনে হচ্ছিল না। হৃদস্পন্দনও বন্ধ ছিল।
দুই ঘণ্টা পর যখন উদ্ধার কর্মীরা তাদের কাছে পৌঁছালেন, অড্রে স্কুম্যানের শরীরের তাপমাত্রা নেমে গেছে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। উদ্ধারকর্মীরা তাকে বার্সেলোনার এক হাসপাতালে নিয়ে যান। তিনি যে বেঁচে আছেন, তার কোনো লক্ষণই পাচ্ছিলেন না তারা।
হাসপাতালের চিকিৎসক এডুয়ার্ড আরগুডো বলছেন, পাহাড়ের যে প্রচণ্ড ঠান্ডার কারণে অড্রে স্কুম্যান অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন সেটাই হয়তো আবার তার জীবন বাঁচিয়ে দিয়েছে।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে আনার পর তাকে দেখে মনে হচ্ছিল তিনি মারা গেছেন। তবে তিনি যেহেতু হাইপোথার্মিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন, আমাদের মনে হচ্ছিল অড্রের বেঁচে ওঠার একটা সম্ভাবনা আছে।’
ড. আরগুডো বলেন, অড্রে স্কুম্যান যখন অচেতন হয়ে পড়েছিলেন তখন হাইপোথার্মিয়াই তার শরীর এবং মস্তিষ্ককে রক্ষা করেছিল। যদিও এই হাইপোথার্মিয়া তাকে প্রায় মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল। যদি স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এত দীর্ঘ সময় তার হৃদযন্ত্র বন্ধ থাকতো, তাহলে কিন্তু তিনি মারা যেতেন।
অড্রে স্কুম্যানকে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা একটি বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করে তার শরীরের রক্ত বের করে এনে তাতে অক্সিজেন সঞ্চালন করেন। এরপর সেই রক্ত পুনরায় তার শরীরে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তার শরীরের তাপমাত্রা যখন ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায় তখন চিকিৎসকরা একটি ‘ডিফিব্রিলেটর’ ব্যবহার করে হৃদপিণ্ড চালু করতে সক্ষম হন। তবে ততক্ষণে প্রায় ছয় ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে।
অড্রে স্কুম্যানকে ১২ দিন পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া হয়। তিনি এখন সুস্থ, তবে হাইপোথার্মিয়ার কারণে তার হাতের অনুভূতিতে কিছু সমস্যা রয়ে গেছে।
ডা. আরগুডো বলেন, অড্রে স্কুম্যানের কিছু স্নায়বিক ক্ষতি হয়ে যায় কি-না সেটা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন ছিলেন। তবে যেভাবে তিনি সুস্থ হয়ে উঠলেন, সেটাকে অস্বাভাবিক ঘটনা বলে বর্ণনা করছেন তিনি। কারও হদযন্ত্র এত দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার পর আবার চালু হওয়ার এরকম ঘটনা আর নেই।
অড্রে স্কুম্যান সুস্থ হয়ে ওঠার পর জানান, যে ছয় ঘণ্টা তার হৃদযন্ত্র কাজ করেনি, সে সময়ের কোনো স্মৃতি তার নেই। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে যখন আমি জেগে উঠি, তখন আমি জানতাম না আগের এক বা দুদিন ধরে কী হচ্ছিল।’
হাসপাতালের চিকিৎসকদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা একটা দৈব ঘটনা, তবে চিকিৎসকদের কারণেই আমি বেঁচে গেছি।’
সূত্রঃ সমকাল