অনলাইন ডেস্কঃ
অর্পিত সম্পত্তির অস্থায়ী ইজারার সালামির হার বাড়াল সরকার। সালামির হার সর্বোচ্চ সাতগুণ বাড়িয়ে গত ৩ ডিসেম্বর ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে পরিপত্র জারি করা হয়েছে।
‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন, ২০০১’ অনুযায়ী, ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যেসব পাকিস্তানি নাগরিক পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে চলে গিয়েছিলেন, তাদের স্থাবর সম্পত্তির নাম ছিল পাকিস্তান আমলে ‘শত্রু সম্পত্তি’ এবং বাংলাদেশের সময় ‘অর্পিত সম্পত্তি’। আইনানুযায়ী, অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত সম্পত্তি বাংলাদেশি মূল মালিক বা তার বাংলাদেশি উত্তরাধিকারী বা ওই মূল মালিক বা উত্তরাধিকারীর বাংলাদেশি স্বার্থাধিকারীর কাছে ফেরত (প্রত্যর্পণ) দেয়া যাবে।
সম্পত্তি প্রত্যর্পণ না হওয়া পর্যন্ত তা জেলা প্রশাসকের নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং তিনি প্রচলিত আইন অনুযায়ী এ সম্পত্তি ইজারা দেবেন বলে আইনে উল্লেখ করা হয়েছে।
ভূমি সচিব মো. মাক্ছুদুর রহমান পাটোয়ারী এ প্রসঙ্গে জাগো নিউজকে বলেন, ‘১৯৯৪ সালের পর অর্পিত সম্পত্তির ইজারার সালামির হার আর বাড়ানো হয়নি। এ বিষয়ে আমরা অর্থ বিভাগের মতামতও নিয়েছি। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গেও আলোচনা করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান ব্যবস্থায় ইজারার মাধ্যমে মানুষ যেভাবে অর্পিত সম্পত্তি ভোগ করছেন তাতে ফি খুবই কম। এতে ব্যক্তি লাভবান হচ্ছেন, কিন্তু সরকার আর্থিকভাবে লুজার হচ্ছে। এজন্য ইজারার সালামির হার পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।’
ফি পুনর্নির্ধারণের কারণে এ সংক্রান্ত যেসব মামলা-মোকদ্দমা রয়েছে সেগুলো আরও ভালোভাবে পরিচালনা করা যাবে বলেও জানান ভূমি সচিব।
বর্ধিত সালামির হার গত ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে বলে পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
২০০১ সালে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন হওয়ার আগে থেকেই অর্পিত সম্পত্তি অস্থায়ী ইজারা দেয়া হচ্ছে জানিয়ে পরিপত্রে বলা হয়েছে, দীর্ঘ ২৪ বছরের অর্পিত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা ব্যয় ক্রমশ বৃদ্ধি পেলেও এখন পর্যন্ত সালামির হার বাড়ানো হয়নি। এজন্য সালামির হার সময়োপযোগী, বাস্তবভিত্তিক বাজার মূল্য ও ক্রমবর্ধমান ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বৃদ্ধির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতর বা সংস্থাপ্রধান, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে ইতিবাচক মতামত পাওয়া যায়। ২০১৭ সালের জেলা প্রশাসক সম্মেলনে সালামির হার বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়।
এ বিষয়ে গত ২৫ জুন ভূমিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এক পর্যালোচনা সভায় বিস্তারিত আলোচনার পর জমির শ্রেণি ব্যবহার ও অবস্থানভেদে অর্পিত সম্পত্তির ইজারা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়।
উপজেলা এলাকা (সিটি কর্পোরেশন পৌর এলাকা ছাড়া), পৌর এলাকা (সিটি কর্পোরেশন ছাড়া), সিটি কর্পোরেশন এলাকা (ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ছাড়া) এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকা- ইজারার ক্ষেত্রে এ চার ক্যাটাগরিতে অর্পিত সম্পত্তির সালামি নির্ধারণ করা হয়।
প্রতি শতক কৃষিজমির ইজারার ক্ষেত্রে উপজেলা এলাকায় সালামির হার আগে পাঁচ টাকা থাকলেও এখন তা ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। পৌর এলাকায় হার ১০ টাকার স্থলে ৫০ টাকা।
প্রতি শতক অকৃষি জমির ক্ষেত্রে সালামির হার উপজেলা এলাকায় ২০ টাকার পরিবর্তে ৮০ টাকা, পৌর এলাকার হার ৪০ টাকার জায়গায় ২০০ টাকা, সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৬৪ টাকার পরিবর্তে ৩৮৪ টাকা এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৮০ টাকার পরিবর্তে ৫৬০ টাকা নির্ধারণ হয়েছে।
শিল্প বা বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রতি শতক জমির সালামি হবে উপজেলা এলাকায় ৩০ টাকার পরিবর্তে ১২০ টাকা, পৌর এলাকায় ৫০ টাকার পরিবর্তে ২৫০ টাকা, সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৮০ টাকার পরিবর্তে ৪৮০ টাকা এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ১০০ টাকার পরিবর্তে ৭০০ টাকা।
আবাসিক ঘর ও কাঁচাঘর (মেঝে কাঁচা, টিনের দেয়াল ও ছাদ) ইজারার ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটের সালামি উপজেলা এলাকায় এক টাকার পরিবর্তে চার টাকা, পৌর এলাকায় তিন টাকার পরিবর্তে ১৫ টাকা, সিটি কর্পোরেশন এলাকায় চার টাকা ৮০ পয়সার পরিবর্তে ২৯ টাকা, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ছয় টাকার পরিবর্তে ৪২ টাকা।
আবাসিক ঘর ও আধাপাকা ঘরের (মেঝে পাকা, দেয়াল পাকা, টিনের ছাদ) প্রতি বর্গফুট ইজারার ক্ষেত্রে উপজেলা এলাকায় এক টাকা ৫০ পয়সার পরিবর্তে ছয় টাকা, পৌর এলাকায় চার টাকার পরিবর্তে ১৬ টাকা, সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ছয় টাকা ৪০ পয়সার পরিবর্তে ৩৯ টাকা এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় আট টাকার পরিবর্তে ৫৬ টাকা সালামি দিতে হবে।
আবাসিক ঘর ও পাকাঘর (দালান) প্রতি বর্গফুটের সালামি উপজেলায় ১৪ টাকা, পৌর এলাকায় ৩০ টাকা, সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৪৮ টাকা এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৭০ টাকা। আগে এ হার ছিল যথাক্রমে তিন টাকা ৫০ পয়সা, ছয় টাকা, আট টাকা ও ১০ টাকা।
শিল্প বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের ক্ষেত্রে (টিনের ঘর বা কাঁচাঘর) প্রতি বর্গফুটের সালামি উপজেলা এলাকায় চার টাকার পরিবর্তে ১৬ টাকা, পৌর এলাকায় আট টাকার পরিবর্তে ৪০ টাকা, সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ১৬ টাকার পরিবর্তে ৯৬ টাকা, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ২০ টাকার পরিবর্তে ১৪০ টাকা।
শিল্প বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের ক্ষেত্রে (আধাপাকা ঘর বা পাকাঘর) প্রতি বর্গফুটের সালামি উপজেলা এলাকায় চার টাকার পরিবর্তে ১৬ টাকা, পৌর এলাকায় ১২ টাকার পরিবর্তে ৬০ টাকা, সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ২০ টাকার পরিবর্তে ১২০ টাকা এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ২৫ টাকার পরিবর্তে ১৭৫ টাকা।
ফুল বা ফলের বাগান বছরভিত্তিক এবং পুকুর-দীঘি-বিল-ঝিল প্রতি তিন বছরভিত্তিক নিলাম ডাকের মধ্যেমে ইজারা দেয়া হবে বলে পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
পরিপত্রে আরও বলা হয়েছে, অস্থায়ী ইজারা দেয়া প্রত্যর্পণযোগ্য অর্পিত সম্পত্তি মেরামতের ক্ষেত্রে এখন থেকে লিজগ্রহীতা জেলা প্রশাসক বা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে অবকাঠামোগত পরিবর্তন না করে বা কোনো নতুন স্থাপনা নির্মাণ না করে, নিজ ব্যয়ে বর্তমান স্থাপনার প্রয়োজনীয় মেরামতের ব্যয় সালামির অর্থের সঙ্গে সমন্বয় করা যাবে না।
অস্থায়ী ইজারা দেয়া সম্পত্তির ভূমি উন্নয়ন কর অর্পিত সম্পত্তির তহবিল থেকে পরিশোধ করা হবে।
এতে বলা হয়, পৌরকর, ইউপি ট্যাক্স, স্যুয়ারেজ বিল, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল ইত্যাদি লিজগ্রহীতার পরিশোধ করতে হবে। এসব কর বা বিল পরিশোধ সংক্রান্ত ভাউচার রশিদ সংশ্লিষ্ট ভূমির মালিকানা প্রমাণক হিসেবে গণ্য হবে না।
পুকুর বা জলাশয়ের একাংশ অর্পিত সম্পত্তি এবং অপর অংশ ব্যক্তিমালিকানাধীন থাকলে অর্পিত অংশের ইজারা প্রদানে মামলা-মোকদ্দমা সংক্রান্ত জটিলতা এড়ানোর ক্ষেত্রে প্রচলিত নীতিমালা শিথিল করে অংশমালিককে ন্যায্যমূল্যে ইজারা দেয়া যাবে। পুকুরটি কোনো অর্পিত সম্পত্তির বাড়ির অংশ হলে তা সংশ্লিষ্ট বাড়ির সঙ্গেই কৃষিজমির নিয়মে ইজারা দেয়ার নিয়ম বহাল থাকবে বলে পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
সূত্রঃ জাগোনিউজ