অনলাইন ডেস্কঃ
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) রাত ১২টা বাজলেই বিদায় নেবে ২০১৯ সাল। শুরু হবে নতুন বছরের সূর্যোদয়ের প্রতিক্ষার পালা। সূর্য ডোবার রাতেই পৃথিবীর হালখাতা থেকে স্মৃতি হয়ে যাবে ২০১৯ সাল নামের আরও একটি বছর।
পথচলা শুরু হবে ২০২০ সালের। বিদায়ের বেদনার মাঝেও ৩৬৫ দিনের সফলতা-ব্যর্থতার হিসাব পেছনে ফেলে সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায় ৩১ ডিসেম্বর রাতে ২০২০ সালকে স্বাগত জানিয়ে পালন করা হবে থার্টি ফার্স্ট নাইট।
বিগত দুই বছরের মতো এবারও থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন নিয়ে সৈকতের বালিয়াড়ি বা উন্মুক্ত কোনো স্থানে অনুষ্ঠান হচ্ছে না কক্সবাজারে। কিন্তু নিয়মরক্ষায় তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইজ, সায়মন বিচ রিসোর্ট ও কক্স-টু-ডে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ইনডোর প্রোগ্রামের আয়োজন করেছে। হোটেলের অতিথি, বিদেশি পর্যটক এবং বিশেষ অতিথি ব্যতীত এসব অনুষ্ঠানে অন্যদের অংশগ্রহণের সুযোগ নেই।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনে কোনো আতশবাজি, পটকা ফুটানো বা কোনো উন্মুক্ত স্থানে অনুষ্ঠান করা যাবে না। পাশাপাশি রাত ১২টার পর উচ্চস্বরে কোনো মাইক কিংবা সাউন্ড বাজানো যাবে না। থার্টি ফার্স্ট নাইট ও নতুন বছরকে বরণকে কেন্দ্র করে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সোমবার সকাল থেকে জেলা পুলিশের বিশেষ নিরাপত্তা শুরু হয়েছে; যা অব্যাহত থাকবে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত।
পর্যটন সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রতি বছর থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন উপলক্ষে পর্যটন নগরী কক্সবাজার লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। বিগত দেড় দশক এমন চিত্রই দিয়েছে বালিয়াড়ি। এবারও থার্টি ফার্স্ট এবং বছরের শেষ সূর্যাস্ত দেখতে কক্সবাজার সৈকত ও আশপাশের পর্যটন এলাকায় অতিথি ও স্থানীয় মিলিয়ে কয়েক লাখ পর্যটক সমাগম হয়েছে। তবে কোনো আয়োজন না থাকায় এবারও থার্টি ফার্স্ট নাইট বা নতুন বছর বরণকে ‘প্রাণহীন’ উল্লেখ করেছেন পর্যটকরা।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. কামাল হোসেন বলেন, ২০১৭ সালে বিপুল রোহিঙ্গা আশ্রয়ের পর থেকে কক্সবাজারের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ‘থার্টি ফার্স্ট নাইটে’ বিচে ওপেন অনুষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকরা চাইলে গভীর রাত পর্যন্ত বিচে ঘুরতে পারবেন। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বেশ কয়েকটি টিম মাঠে থাকবে। কিন্তু রাত ১০টার পর হোটেলের সব বার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া আছে।
জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুসা নাসের চৌধুরী বলেন, তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইজ, সায়মন বিচ রিসোর্ট ও কক্স-টু-ডে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ইনডোর প্রোগ্রামের অনুমতি নিয়েছে। রাত ২টা পর্যন্ত তাদের অনুষ্ঠান করার অনুমতি দেয়া আছে।
ট্যুর অপারেটর সমিতির সদস্য ইয়ার মুহাম্মদ বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে থার্টি ফার্স্ট নাইট উৎসবের আগেই বড়দিন, বিজয় দিবস ও শীতকালীন ছুটিকে উপলক্ষ্য করে পর্যটকে ভরে গেছে কক্সবাজার। সমানতালে পর্যটকরা ভিড় জমাচ্ছেন প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন, টেকনাফ, শাহ পরীরদ্বীপ, ইনানী, হিমছড়ি, রামুর বৌদ্ধপল্লী, চকরিয়ার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, মহেশখালীর আদিনাথ, সোনাদিয়াসহ পুরো জেলার পর্যটন স্পটে। পর্যটক আকৃষ্ট করতে সাজানো হয়েছে সব স্থান। ইংরেজি নতুন বছর ২০২০ সালকে স্বাগত জানাতে প্রায় চার লাখ পর্যটকের মিলন ঘটবে এখানে। সৈকত তীরের প্রায় সাড়ে ৪০০ হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউস বুকিং হয়ে গেছে। এ ধারাবাহিকতা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত থাকবে।
কক্সবাজারের তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইসের পরিচালক আবদুল কাদের মিশু বলেন, বিশ্বমানের পর্যটন বিকাশে আমরা শুরু থেকেই বাংলা নববর্ষ, থার্টি ফার্স্ট নাইটসহ নানা দিবসকে পর্যটকদের কাছে উপভোগ্য করে তুলি। পর্যটক চাহিদার কারণে এবারও বলরুমে ইনহাউজ গেস্টদের জন্য পড়শীকে দিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ডিজে পার্টির আয়োজন হচ্ছে।
সায়মন বিচ রিসোর্টের ফুডস অ্যান্ড বেভারেজ ম্যানেজার ইমরান হোসেন বলেন, কণ্ঠশিলী তাহসানকে নিয়ে অভ্যন্তরীণ গেস্টদের জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকছে আমাদের।
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যান নুর আহমদ বলেন, থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনে ৭-৮ হাজার পর্যটক দ্বীপে এসেছেন। অনেকেই হোটেল-কটেজে জায়গা না পেয়ে ‘তাবু’ ভাড়া নিয়েছেন। বালিয়াডিতে রাত কাটিয়ে নতুন বছরকে স্মরণীয় করে রাখতে চান তারা।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, সেন্ট মার্টিনে পর্যটকদের অবস্থান নির্বিঘ্ন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পর্যটকদের সুবিধার্থে আমাদের পাশাপাশি বাড়তি নজরদারি রাখতে জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশনা দেয়া রয়েছে।
সূত্রঃ জাগোনিউজ