ক্রীড়া ডেস্কঃ
ঘড়ির কাঁটা রাত ১২টা অতিক্রমের সঙ্গে সঙ্গেই কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে আরেকটি বছর। সকালে লাল সূর্যোদয়ের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে নতুন বছরের প্রথম দিন। স্বাগতম ২০২০।
সময় এবং নদীর স্রোত কারও জন্য থেমে থাকে না- এ বেদবাক্য মেনেই সেকেন্ড, মিনিট আর ঘণ্টার কাঁটা ঘুরেঘুরে পার করে দিয়েছে আরেকটি বছর। দিন, সপ্তাহ মাস করে বিদায় নিয়েছে ২০১৯ সাল। পুরোনো জরাজীর্ণতা কালের স্রোতে ভাসিয়ে বিশ্বব্যাপী মানুষ বরণ করে নিয়েছেন নতুনকে। আশা-নিরাশা, পাওয়া-না পাওয়া এবং আনন্দ-বেদনার ২০১৯ এখন অতীত। সুন্দর ভবিষ্যতের আশায় নতুন করে চাকা ঘোরা শুরু মানুষের জীবনের।
নতুন সূর্যোদয়, নতুন দিন এবং নতুন বছর মানেই নতুন করে সবকিছু ভাবা। সমাজের অন্যসব ক্ষেত্রের মতো সেই নতুন ভাবনায় যাত্রা শুরু হবে ক্রীড়াঙ্গনেরও। বিদায়ী বছরে কী হলো আর নতুন বছরে কী হবে- তা নিয়ে শুরু হয়েছে বিশ্লেষণ।
নতুন বছর মানে নতুন করে শুরু। এবার সেটা বাংলাদেশের জন্য ব্যতিক্রম। ২০২০ সালটা দারুণ উৎসব আর আনন্দঘন পরিবেশের মধ্যেই পার করবে বাংলাদেশের মানুষ। কারণ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী।
২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ সময়-কে ‘মুজিববর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ঘটা করেই উদযাপন করবে সরকার। চলছে সে প্রস্তুতিও।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে সরকার বছরব্যাপী নানা কর্মসূচি আয়োজনের যে পরিকল্পনা তৈরি করছে, তার মধ্যে অন্যতম আকর্ষণীয় হবে খেলাধুলা। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় খেলাধুলার নানা কর্মসূচি পালনের জন্য ৩০৬ কোটি ২৪ লাখ টাকার খসড়া বাজেটও তৈরি করেছে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মিলিয়ে একশ’র মতো আয়োজন থাকছে বছরব্যাপী। এর মধ্যে প্রায় ৪০টির মতো থাকছে আন্তর্জাতিক আয়োজন।
সবচেয়ে বেশি তিনটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট থাকছে ফুটবলে। টুর্নামেন্টের পাশাপাশি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) আর্জেন্টিনার কিংবদন্তী ফুটবলার দিয়েগো ম্যারাডোনাকে দুদিনের সফরে ঢাকা আনার উদ্যোগও নিয়েছে। ইতোমধ্যে ম্যারাডোনার দিক থেকে সবুজ সংকেতও পেয়েছে দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থাটি। তাইতো ম্যারাডোনাকে আনার আনুষ্ঠানিক ঘোষণাও দিয়েছে তারা।
তবে ম্যারাডোনা ঠিক কবে আসছেন তা এখনও নির্ধারিত নয়। ম্যারাডোনার ঢাকা সফরের কর্মসূচির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ। যে কারণে, ম্যারাডোনার আসার তারিখ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়ের ওপরও নির্ভর করছে। সেই সঙ্গে ১৯৮৬ বিশ্বকাপ জয়ের নায়কের সূচি মেলানোর বিষয়ও থাকছে। সবকিছু সমন্বয় করেই ম্যারাডোনাকে ঢাকায় আনবে বাফুফে।
ব্রাজিলের কিংবদন্তী ফুটবলার পেলেসহ আরও অনেক বিশ্বতারকার ঢাকায় আনার খবর আগে ছড়িয়েছে। খবর উড়েছে বড়বড় ফুটবল দলকে ঢাকায় নিয়ে আসারও; কিন্তু আবার তা হারিয়ে গেছে আলোচনা থেকে। ম্যারাডোনার বিষয়টি তেমন হবে কিনা সেটা সময়ই বলে দেবে।
তবে এ ঘোষণাটা বাফুফে সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন বেশ আত্মবিশ্বাস নিয়েই দিয়েছেন। ‘ম্যারাডোনা আসবেন’- শব্দ দুটি বলার সময় কাজী মো. সালাউদ্দিনের আত্মবিশ্বাস দেখে মনে হয়েছে হয়তো বাংলাদেশে পা পড়বে এ ‘ফুটবল কিংবদন্তি’র। তাহলে নতুন বছরে ক্রীড়াঙ্গনে সেটাই হবে সবচেয়ে বড় চমক।
বাফুফের নিয়মিত আয়োজনের অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ হওয়ার কথা ছিল গত নভেম্বরে। তারিখ ঠিকঠাক করেও হঠাৎ করেই টুর্নামেন্ট পিছিয়ে নতুন বছরে নিয়ে আসে বাফুফে। আগামী ১৫ থেকে ২৫ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বসবে জাতির পিতার নামের এ আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্ট।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে খেলাধুলার যত আয়োজন হবে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপকে তার সূচনা টুর্নামেন্ট হিসেবেই নিয়েছে সরকার। ১০ জানুয়ারি জাতির জনকের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে শুরু হচ্ছে মুজিববর্ষের কাউন্টডাউন। তার ঠিক পাঁচদিন পর বাঁশি বাজবে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টের।
জানুয়ারির টুর্নামেন্ট ছাড়াও ২০২০ সালে আরেকটি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপ আয়োজন করবে বাফুফে। সেটা হবে বছরের শেষের দিকে। এ বছরই আছে দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। টুর্নামেন্ট ঢাকায় হবে।
সাফের প্রেসিডেন্ট কাজী মো. সালাউদ্দিন আগেই এ টুর্নামেন্ট বঙ্গবন্ধুর নামে করার অনুমোদন নিয়েছেন। সব মিলিয়ে তিনটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট এবং ম্যারাডোনার সফরে ২০২০ সালের ফুটবল হয়ে উঠবে উৎসবমুখর।
দেশের আরেক বড় খেলা ক্রিকেটেও মুজিববর্ষে দুটি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ আয়োজন করবে। দুটিই হবে এশিয়া বনাম বিশ্ব একাদশের মধ্যে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) আয়োজিত আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দুটির প্রথমটি ১৯ মার্চ এবং পরেরটি ২১ মার্চ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এশিয়া ও বিশ্ব একাদশে সেরা খেলোয়াড়রাই অংশ নেবেন এ দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে।
অন্য খেলাগুলোর মধ্যে দুটি করে আন্তর্জাতিক আয়োজন থাকছে দাবা, বাস্কেটবল ও কুস্তিতে। বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশন দুটি গ্র্যান্ডমাস্টার টুর্নামেন্ট আয়োজন করবে বঙ্গবন্ধুর নামে। এখন পর্যন্ত যে সিদ্ধান্ত তাতে একটি গ্র্যান্ডমাস্টার টুর্নামেন্ট হবে ঢাকায়, আরেকটি চট্টগ্রামে।
জানুয়ারির বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ছাড়া খেলার বাকি সব আন্তর্জাতিক আয়োজনই হওয়ার কথা এ ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে পরের বছর ১৭ মার্চ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে। যে কারণে টুর্নামেন্টগুলোর কবে কোনটি হবে তা এখনও পুরোপুরি চূড়ান্ত নয়। সব ফেডারেশনের সঙ্গে সমন্বয় করেই টুর্নামেন্টগুলোর দিনক্ষণ নির্ধারণ করবে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন প্রথমবারের মতো এশিয়া অনূর্ধ্ব-২১ চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজন করতে যাচ্ছে। জুনে মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে হবে ১২ জাতির এ টুর্নামেন্ট। এশিয়ার এ টুর্নামেন্ট জাতির জনকের নামে আয়োজন করতে এশিয়ান হকি ফেডারেশনের কাছ থেকে স্বত্ব কিনেছে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন।
বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন জাতির পিতার নামে আয়োজন করবে সাফ অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপ, বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশন বিশ্বকাপের আয়োজক হওয়ার চেষ্টা করছে।
বাংলাদেশ ভলিবল ফেডারেশন মার্চে বঙ্গবন্ধুর নামে আয়োজন করবে আন্তর্জাতিক ভলিবল টুর্নামেন্ট, রোলার স্কেটিং ফেডারেশন আয়োজন করবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক রোলবল গোল্ডকাপ, ডিসেম্বরে বঙ্গবন্ধু ওপেন আন্তর্জাতিক ব্যাডমিন্টন আয়োজন করবে বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন, হ্যান্ডবল ফেডারেশন জুলাইয়ে আয়োজন করবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক হ্যান্ডবল টুর্নামেন্ট।
শুটিং ফেডারেশন জুনে আয়োজন করবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক এয়ারগান চ্যাম্পিয়নশিপ, সাঁতার ফেডারেশন আয়োজন করবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক জুনিয়র সাঁতার প্রতিযোগিতা। আরচারি ফেডারেশনের সূচিতে আছে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক আরচারি চ্যাম্পিয়নশিপ।
বাংলাদেশ বাস্কেটবল ফেডারেশন দুটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট আয়োজন করবে মুজিববর্ষে। সেপ্টেম্বরে হবে আন্তর্জাতিক মহিলা প্রতিযোগিতা, ডিসেম্বরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক থ্রি অন থ্রি (বিচ) বাস্কেটবল চ্যাম্পিয়নশিপ। টেবিল টেনিস ফেডারেশন এপ্রিলে আয়োজন করবে একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা। টেনিস ফেডারেশনও সুবিধাজনক সময়ে বঙ্গবন্ধুর নামে একটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট আয়োজন করবে।
এ ছাড়া জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশন, রোইং ফেডারেশন, বক্সিং ফেডারেশন, ইয়োগা অ্যাসোসিয়েশন, তায়কোয়ানদো ফেডারেশন, খো খো ফেডারেশন, কারাতে ফেডারেশন, জুডো ফেডারেশন, মার্শাল আর্ট কনফেডারেশন, ভারোত্তোলন ফেডারেশন, কিক বক্সিং অ্যাসোসিয়েশন, প্যারালিম্পিক, জুজুৎসু এসোসিয়েশন, শরীর গঠন ফেডারেশনও একটি করে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট আয়োজন করবে বঙ্গবন্ধুর নামে। কুস্তি ফেডারেশনের সূচিতে আছে দুটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট।
যে সব আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট আয়োজন নিয়ে ফেডারেশনগুলো কাজ শুরু করেছে সেগুলো পর্যায়ক্রমে হলে ‘মুজিববর্ষ’ খেলাধুলায় মুখরিত থাকবে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে নতুন বছরটি যেন ভরপুর থাকবে আন্তর্জাতিক খেলাধুলায়ও।
সূত্রঃ জাগোনিউজ