অনলাইন ডেস্কঃ
১০ বছর আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশের মধ্যে বিরাট ব্যবধান বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বর্তমান সরকারের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি একথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটেছে। ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। এদেশের মানুষ ভালো-কিছুর স্বপ্ন দেখা ভুলেই গিয়েছিল। মানুষ আজ স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন দেখে উন্নত জীবনের। স্বপ্ন দেখে সুন্দরভাবে বাঁচার। সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, পদ্মা নদীর ওপর সেতু নির্মিত হবে আর সেই সেতু দিয়ে গাড়ি বা ট্রেনে সরাসরি পারাপার করতে পারবে- এটা ছিল মানুষের স্বপ্নেরও অতীত। আমরা সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে চলেছি। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে। তিন ভাগের দুই-ভাগেরও বেশি কাজ শেষ হয়েছে। পদ্মা সেতুর প্রায় অর্ধেকাংশ এখন দৃশ্যমান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজধানীর যানজট নিরসনে মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। পাতালরেল নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজও দ্রুত এগিয়ে চলছে। চট্টগ্রামে কর্ণফুলি নদীর তলদেশ দিয়ে দেশের প্রথম টানেল নির্মাণ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-চন্দ্রা মহাসড়ক চার-লেনে উন্নীত করার পর চন্দ্রা-বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব স্টেশন, বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম স্টেশন-রংপুর এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। নতুন রেলপথ নির্মাণ, নতুন কোচ ও ইঞ্জিন সংযুক্তি, ই-টিকিটিং এবং নতুন নতুন ট্রেন চালুর ফলে রেলপথ যোগাযোগে নব দিগন্তের সূচনা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত ৪০১ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। ১২২টি নতুন ট্রেন চালু করা হয়েছে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন থেকেই সেতুর ওপর দিয়ে রেল চলাচল শুরু হবে বলে আশা করছি। দেশের সব জেলাকে রেল যোগাযোগের আওতায় আনা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমান বহরে ৬টি নতুন ড্রিমলাইনার যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিজস্ব উড়োজাহাজের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি গ্রামে শহরের সুবিধা পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৯৫ শতাংশ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে গেছে। ৯৭ ভাগ মানুষ উন্নত স্যানিটেশন সুবিধার আওতায় এসেছেন। টেকসই বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য রামপাল, মাতারবাড়ি, পায়রা ও মহেশখালীতে মেগা বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে মহেশখালীতে এলএনজি টার্মিনাল থেকে দৈনিক ৬৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে। কিশোর ও যুব সম্প্রদায়ের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য প্রতিটি উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম এবং অডিটোরিয়াম নির্মাণ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সাড়ে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে স্বাস্থসেবা আজ সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায়। উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে শয্যাসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়ানো হয়েছে সুযোগ সুবিধা। স্থাপন করার হয়েছে হৃদরোগ, কিডনি, ক্যানসার, নিউরো, চক্ষু, বার্ন, নাক-কান-গলাসহ বিভিন্ন বিশেষায়িত ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। অব্যাহত নার্সের চাহিদা মেটাতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে নার্সিং ইনস্টিটিউট।
গত ১১ বছরে ২০ হাজার ১০২ জন নতুন চিকিৎসক এবং ২১ হাজার ৬৯৭ জন নার্স নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রতিটি জেলায় কমপক্ষে একটি করে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপনের কাজ চলছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, খাদ্যশস্য, মাছ এবং মাংস উৎপাদনে আমরা স্বয়ং-সম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। চাল উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান চতুর্থ এবং মাছ ও সবজি উৎপাদনে তৃতীয়। কৃষি উপকরণের দাম কয়েকদফা হ্রাস করা হয়েছে। সর্বশেষ গতমাসে ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট বা ডিএপি সারের দাম কেজি প্রতি ৯ টাকা কমিয়ে কৃষক পর্যায়ে ১৬ টাকা করা হয়েছে। ভর্তুকি মূল্যে কৃষকদের মধ্যে কৃষি উপকরণ ও যন্ত্রপাতি বিতরণ করা হচ্ছে।
সরকার প্রধান বলেন, প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যায় পর্যন্ত প্রতি বছর ২ কোটি ৩ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থীকে বৃত্তি, উপ-বৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। ২০১০ সাল থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বছরের প্রথম দিনে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক দেয়া হচ্ছে। আমরা এ পর্যন্ত ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৬৮৫টি মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজ জাতীয়করণ করেছি। ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত ৪ হাজার ৬৬১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে শিক্ষার হার ৭৩ শতাংশ অতিক্রম করেছে।
তিনি বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল মাত্র ৩৭৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এই বরাদ্দের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৪ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৫ কোটি ১০ লাখ মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। কেউ যাতে গৃহহীন না থাকে সেজন্য আমরা একাধিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছি। জমি আছে ঘর নেই – এমন পরিবারের জন্য ঘর নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ভূমিহীন, নদীভাঙনে উদ্বাস্তুদের জন্যও ঘর নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে। এ জন্য বাজেটে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে পনের কোটিরও বেশি সিম ব্যবহৃত হচ্ছে। আর ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৯ কোটি। দেশের ৩ হাজার ৫০০-এর বেশি ইউনিয়নে ব্রডব্যান্ড সংযোগ দেয়া হয়েছে। আমরা ফোর-জির পর ফাইভ-জি প্রযুক্তি চালুর উদ্যোগ নিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের প্রধান লক্ষ্য তরুণ সমাজের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা। চলতি মেয়াদে আমরা দেড় কোটি কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে ১৫টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিপুল সংখ্যক দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের জন্য আসছেন।
তিনি বলেন, সারাদেশে দুই ডজনের বেশি হাইটেক পার্ক এবং আইটি ভিলেজ নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। দক্ষ জনশক্তি তৈরির জন্য সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে সারাদেশে ভোকেশনাল এবং কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হচ্ছে। ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যেই ৬ লাখেরও বেশি ফ্রিল্যান্সার আইটি খাতে নিজেদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন। পাশাপাশি কৃষি, মৎস্য, পশুপালন, পর্যটন, সেবাখাতসহ অন্যান্য খাতে আত্ম-কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
সূত্রঃ জাগোনিউজ