অনলাইন ডেস্কঃ
বাংলাদেশে মাদকের বিস্তার নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেছেন, প্রতি বছর মাদকের পেছনে এক লাখ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার চট্টগ্রামের ভেটেরিনারি আ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন শিক্ষার্থীদের নিয়ে অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “এখন বলা হচ্ছে, ৭০ থেকে ৮০ লাখ লোক মাদকাসক্ত। ইউরোপের অনেক দেশ আছে যেখানে ৮০ লাখ জনসংখ্যা নাই। আমরা রাইজিং দেশ, আমরা হিসেব করে দেখেছি এক লাখ কোটি টাকার মাদকের অর্থনীতি।”
মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবায় আসক্তি বন্ধে তরুণদের সহযোগিতা চেয়ে বেনজীর আহমেদ বলেন, “আমরা কেন প্রতি বছর এক লাখ কোটি টাকা নষ্ট করব? মিয়ানমার থেকে কোটি কোটি টাকার মাদক এই রুট দিয়ে আমাদের দেশে ঢুকছে। কই মিয়ানমারের লোক তো ইয়াবা খাচ্ছে না। আমরা কেন খাব? যুব সমাজের কাছে আমার প্রশ্ন।”
তিনি বলেন, “আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সাপ্লাইটা আটকাচ্ছে। কিন্তু ডিমান্ড থাকলে কোনো না কোনোভাবে সাপ্লাইয়ের ব্যবস্থা হবে। সেজন্য আমাদের ডিমান্ড আটকাতে হবে।”
বেনজীর আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে মদ-গাঁজার অস্তিত্ব কয়েকশ বছর আগে পাওয়া গেলেও এসব কখনোই সমাজে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।
“কারণ আমাদের দেশের মানুষ কখনও সেগুলোকে অ্যাপ্রুভ করেনি। কেউ এগুলোকে ভালো চোখে দেখত না। সে কারণে এক শ্রেণির মানুষ যারা গাঁজা-ভাং খেত তাদের সমাজ থেকে আলাদা করে দেখা হত। তারা ছিল সমাজবিচ্যুত লোক। তারা নেশা করলে আড়ালে লুকিয়ে করত।”
বক্তব্যে সোশাল মিডিয়ার ইতি ও নেতিবাচকতা এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নিয়েও কথা বলেন র্যাবের মহাপরিচালক।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সব কিছু বিশ্বাস না করার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষার্থীদের তিনি বলেন, “দেশ যেমন এগোচ্ছে তেমনি অপরাধের ধরণ পাল্টেছে। এখন হচ্ছে সাইবার ক্রাইম। সোশাল মিডিয়াতে আসছে ফেইক নিউজ, গুজব। সোশাল মিডিয়ার ক্ষেত্রে ‘সিইং ইজ নট বিলিভিং’। তোমরা যা দেখ তা বিশ্বাস করার দরকার নাই, ভেরিফাই করে দেখবে।”
এই সমস্যা বাংলাদেশের মতো আরও অনেক দেশকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে জানিয়ে বেনজীর বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুফল থাকলেও তা আজকে অনেক ‘চ্যালেঞ্জ’ তৈরি করেছে।
“জঙ্গিবাদ ছড়ানোর অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে সোশাল মিডিয়া।”
তবে সেজন্য সোশাল মিডিয়া বন্ধ না রাখার পক্ষে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন তিনি।
জঙ্গিবাদ রোধে ইসলামী চিন্তাবিদ ও দার্শনিকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বেনজীর বলেন, “জঙ্গিবাদ ছড়ানো হচ্ছে ইসলামের নামে। কিন্তু ইসলাম কোনোভাবেই জঙ্গিবাদ সমর্থন করে না। তাদের কথা হচ্ছে, যে মুসলমান না সে- ই কাফের। যে কাফের তাকে হত্যা করে।
“কিন্তু আইএসের হাতে যতজন মারা গেছে তার ৯০ শতাংশই মুসলমান। একজন মুসলমান অন্য একজন মুসলমানকে হত্যা করতে পারে না। বিনা কারণে নিরাপরাধ ব্যক্তিকে হত্যা করা ইসলামে হারাম বলা হয়েছে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গৌতম বুদ্ধ দাশের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান, বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. নূরুল আবছার খান ও ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবদুল আহাদ।
সূত্রঃ বিডিনিউজ