লাইফস্টাইল ডেস্কঃ
কারণ জানা থাকলে উচ্চ রক্ত চাপের সমস্যা থেকে নিজেকে দূরে রাখা সম্ভব হতে পারে।
অনেক মানুষই ভুগছে উচ্চ রক্ত চাপে। এমনকি ২৫ বছর বয়সেও মানুষও এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এখন। আর তা থেকে দেখা দিচ্ছে একাধিক মারাত্বক প্রাণঘাতি রোগ। তাই প্রত্যেকের উচিত নিজেদের জীবনাযাত্রা নিয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া।
উচ্চ রক্ত চাপ থেকে সুরক্ষিত থাকতে হলে রোগটি সম্পর্কে জানতে হবে। স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনের আলোকে জানানো হল উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য।
উচ্চ রক্তচাপ কী:
প্রতিবার হৃদস্পন্দনের মাধ্যমে রক্তকে ধাক্কা দিয়ে ধমনীর মাধ্যমে হৃদযন্ত্র শরীরে সবখানে রক্ত, অক্সিজেন ও পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে। রক্তের চাপ যখন ১৪০/৯০ এমএমএইচজি, তখন রক্ত সরবরাহ করতে হৃদযন্ত্রকে বেগ পেতে হয়। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে দীর্ঘমেয়াদে ধমন ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং হৃদরোগের আশঙ্কা বাড়ে।
উচ্চ রক্তচাপের কারণ
সারাদিন বসে থাকা:
দিনের বেশিরভাগ সময় চেয়ারে বসে থাকাই হল উচ্চ রক্তচাপের প্রধান কারণ। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে শরীরে চর্বি জমে, ওজন বাড়ে এবং ফলাফলে দেখা দেয় উচ্চ রক্ত চাপ। হৃদযন্ত্রও একটি পেশি, যা অলস বসে থাকলে নিজের কার্যকারিতা হারায় ক্রমেই। তাই সপ্তাহে ছয় দিন কমপক্ষে এক ঘণ্টা শরীরচর্চার পেছনে সময় দিতে হবে। তা হতে পারে সাঁতার কাটা, দৌড়ানো, হাঁটা, সাইকেল চালানো ইত্যাদি। এতে রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে।
মদ্যপান:
নিয়মিত মদ্যপান করার কারণে রক্তচাপ বাড়ে। তাই এই বদভ্যাস নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে এবং চেষ্টা করতে হবে পুরোপুরি বাদ দেওয়ার।
অতিরিক্ত লবণ:
প্রক্রিয়াজাত, প্যাকেটজাত খাবারে প্রচুর পরিমাণে লবণ বা ‘সোডিয়াম’ থাকে। এই খাবারগুলো আমরা সবাই কমবেশি খাই যা যকৃত সামাল দেয় পানি ধরে রাখার মাধ্যমে। ফলে রক্তপ্রবাহে তরলের মাত্রা বাড়ে এবং সেই সঙ্গে বাড়ে চাপ। তাই যথাসম্ভব এই ধরনের খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক লবণ গ্রহণের নিরাপদ মাত্রা হল পাঁচ গ্রাম।
ওষুধের প্রভাব:
বয়স বাড়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে রোগবালাই মানুষের নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠছে। সেই সঙ্গে ওষুধও। এই ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া থেকেও রক্তচাপ বাড়তে পারে। প্রদাহনাশক, ‘ডিকনজেসট্যান্ট’, ‘অ্যান্টি-ডিপ্রেস্যান্ট’, হরমোন নিয়ন্ত্রণ জন্ম বিরতিকরণ ওষুধ ইত্যাদি শরীরের পানি ধরে রাখার মাত্রা বাড়িয়ে রক্তচাপ বাড়াতে ভূমিকা রাখে। তাই নিয়মিত কোনো ওষুধ খেতে শুরু করলে চিকিৎসকের কাছ থেকে এদের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। আর তা এড়াতে করণীয় সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে।
মানসিক চাপ:
বর্তমান যুগে প্রতিটি মানুষই মানসিক চাপে দিন পার করছেন। মানসিক চাপের কারণে ‘অ্যাড্রেনাল’ গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয় এমন হরমোন যা রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। আবার শরীরের ‘ফাইট অ্যান্ড ফ্লাইট রেসপন্স’ রক্তনালীকে সংকুচিত হতে বাধ্য করে। তাই মানসিক চাপ যত বেশি, হৃদরোগের ঝুঁকিও ততই বেশি।
শরীরচর্চা বাড়ানোর আরেকটি কারণ হল মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ। ধ্যানে মগ্ন হওয়াও এক্ষেত্রে অত্যন্ত উপকারী।
বংশগত সমস্যা:
পরিবারে উচ্চ রক্তচাপের রোগী থাকলে আপনারও তাতে আক্রান্ত হওয়া সম্ভাবনা বাড়ে। জিনগত বৈশিষ্ট্যের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ। জিন যেহেতু পরিবর্তন করা সম্ভব নয় তাই বংশগত ঝুঁকি থাকলে আগেভাগেই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সাবধান থাকতে হবে।
ধূমপান:
নিয়মিত ধূমপানে করলে তো কথাই নেই, এমনকি কালেভদ্রে ধূমপান করলেও তা রক্তচাপ বাড়ায়। মাত্র একটি সিগারেটে থাকা ‘নিকোটিন’ই রক্তনালীকে সাময়িক সময়ের জন্য সংকুচিত করে রাখে। এছাড়াও যে কোষ দিয়ে রক্তনালী তৈরি হয় সেগুলোরও ক্ষতি করে তামাক। তাই ধূমপান পুরোপুরি বর্জণ করতে হবে।
ফল ও সবজি না খাওয়া:
ফল ও সবজি না খেলে শরীরে নানান রোগ বাসা বাঁধবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ এই ফল ও সবজিতে থাকা ‘অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট’ অনেক রোগ দুরে রাখে। তাই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চলতে হবে।
সূত্রঃ বিডিনিউজ