ক্রীড়া ডেস্কঃ
জাতীয় ক্রিকেট দল কিংবা বয়সভিত্তিক পর্যায়- যেকোনো টুর্নামেন্টের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে প্রতিপক্ষ দল ভারত হলেই যেনো ভড়কে যায় বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে শুরু করে ২০১৯ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ- মাঝের সময়ে শুধু ভারতের কাছে হেরেই অনেক সাফল্য হাতছাড়া হয়েছে বাংলাদেশের।এর মধ্যে জাতীয় দল ও অনূর্ধ্ব-১৯ দলের এশিয়া কাপ অন্যতম।
২০১৮ সালের এশিয়া কাপে জাতীয় দল এবং ২০১৯ সালের যুব এশিয়া কাপে অনূর্ধ্ব-১৯ দল ফাইনালে হেরেছে ভারতের কাছে। এছাড়া ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কার মাটিতে নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে শেষ বলে ছক্কা খেয়ে শিরোপা খোয়ানোর দুঃখ এখনও পোড়ায় টাইগার ভক্ত-সমর্থকদের।
বড়দের দেখাদেখি ছোটরাও যেনো ভারতীয় দলের বিপক্ষে পড়ে যায় অদ্ভুত দোলাচালে। তাই তো ২০১৯ সালের যুব এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতীয় অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে মাত্র ১০৬ রানে অলআউট করেও শিরোপা জিততে পারেননি আকবর আলি, তৌহিদ হৃদয়রা। ১০৭ রানের ছোট লক্ষ্যে নিজেরা থেমেছে ১০১ রানে।
যে দলের বিপক্ষে অতীত ইতিহাস এমন বিভীষিকাময়, সে দলের বিপক্ষেই এবার নিজেদের ইতিহাসের অন্যতম বড় ম্যাচে খেলতে নামছে বাংলাদেশ দল। জাতীয় দল না হলেও, যুব ক্রিকেটের ইতিহাসে নিজেদের সবচেয়ে বড় ম্যাচ, বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতীয় অনূর্ধ্ব-১৯ দলের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশের যুবারা।
আগামীকাল (রোববার) দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রুমে বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায় মাঠে গড়াবে যুব বিশ্বকাপের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ। এই একই মাঠে সেমিফাইনাল ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের যুবাদের হারিয়ে ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ ভারতের সেমিফাইনাল ম্যাচটিও হয়েছিল একই মাঠে। যার ফলে ভেন্যু সম্পর্কে বেশ ভালো ধারণাই রয়েছে এ দুই দলের।
যোগ্য দল হিসেবেই ফাইনালে এসেছে টুর্নামেন্টের দুই অপরাজিত দল বাংলাদেশ ও ভারত। ফাইনালে ওঠার পথে গ্রুপ পর্বে জিম্বাবুয়ে ও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জিতেছে বাংলাদেশ। বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়েছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি। পরে কোয়ার্টার ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা ও সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠেছে আকবর আলির দল।
অন্যদিকে গ্রুপপর্বের তিন ম্যাচেই দাপুটে জয় পেয়েছে ভারতীয় যুবারা। শ্রীলঙ্কা, জাপান ও নিউজিল্যান্ড অনূর্ধ্ব-১৯ দল পাত্তাই পায়নি ভারতের কাছে। এমনকি কোয়ার্টার ফাইনালে শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়া এবং সেমিফাইনালে চির প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকেও হেসেখেলে হারিয়েছে প্রিয়ম গার্গের দল। যার ফলে ফাইনালের আগে আত্মবিশ্বাসে টইটুম্বুর দলটি।
অবশ্য আত্মবিশ্বাসের কমতি নেই বাংলাদেশ শিবিরেও। ব্যাটিংয়ে তানজিদ হাসান তামিম, তৌহিদ হৃদয়, শাহাদাত হোসেন, মাহমুদুল হাসান জয়রা আছে দুর্দান্ত ফর্মে আর বোলিংয়ে আলো ছড়াচ্ছেন তানজিম হাসান সাকিব, রাকিবুল হাসান, শরীফুল ইসলাম, হাসান মুরাদ, শামীম হোসেনরা। এদের নৈপুণ্যে অধিনায়ক আকবর আলিকে এখনও তেমন কঠিন পরীক্ষায় পড়তে হয়নি।
তবে বরাবরের মতোই অতীত ইতিহাস রয়েছে ভারতের পক্ষে। এখনও পর্যন্ত যুব বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ চারবারের চ্যাম্পিয়ন তারাই। অন্যদিকে প্রথমবারের মতো কোনো আইসিসি ইভেন্টের ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশের কোনো দল। যার ফলে ফাইনালের চাপ সামাল দেয়ার ক্ষমতা স্বাভাবিকভাবেই টাইগার যুবাদের চেয়ে বেশি থাকবে বিরাট কোহলি, শুভমান গিলদের উত্তরসূরীদের।
মহাগুরুত্বপূর্ণ ফাইনালের আগে অবশ্য আকবর-তৌহিদদের অনুপ্রেরণা জোগাতে পারে তাদের অগ্রজ মেহেদি হাসান মিরাজ, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনদের শুভকামনা। ২০১৬ সালে মিরাজের নেতৃত্বেই বিশ্বকাপে তৃতীয় হয়েছিল বাংলাদেশ। যা ছিলো বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা সাফল্য। সেটিকে ছাপিয়ে গেছে আকবরের দল।
এবারের মিরাজের চাওয়া, যেনো শিরোপাটাই ঘরে আনতে পারে তার উত্তরসূরীরা। আজ (শনিবার) মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে তিনি বলছিলেন, ‘ভারতের বিপক্ষে অনেক টানটান উত্তেজনার ম্যাচ কাছে গিয়ে হেরেছি। আমাদের দুর্ভাগ্য। তবে কালকের দিনটা আমাদের করতে হবে। অবশ্যই আমরা ভালো ক্রিকেট খেলব। ছেলেরা যেকরম খেলছে আশা করি ওরাও অনেক আত্মবিশ্বাসী। যেভাবে খেলেছে, একইরকম খেললে হয়তো আমরা ভারতকে হারাতে পারব।’
২০১৬ সালের যুব বিশ্বকাপে মিরাজের অন্যতম সেরা অস্ত্র, দলের আরেক সদস্য মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন মনে করছেন, প্রতিপক্ষ নিয়ে না ভেবে নিজেদের দক্ষতায় মন দিলে জয় সম্ভব। তার ভাষ্যে, ‘শ্রীলঙ্কায় গত অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে খুব কাছে গিয়েও আমরা হেরে গিয়েছিলাম। ম্যাচটি দেখে অনেক খারাপ লেগেছিল। বিশ্বকাপে যেহেতু একই প্রতিপক্ষ পেয়েছে, ভালো একটি সুযোগ আমাদের হাতে। প্রতিপক্ষ না ভেবে যদি ওরা স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারে, তাহলেই জেতা সম্ভব।’
তবে খেলার আগে আলোচনা যতোই হোক, সবকিছু ভেস্তে দিতে প্রস্তুত বেরসিক বৃষ্টি। কেননা আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে ম্যাচের দিন রোববার এবং রিজার্ভ ডে সোমবার- দুইদিনই রয়েছে জোর বৃষ্টির সম্ভাবনা। আর এমনটা হলে বিশ্বকাপ শিরোপা ভাগাভাগি হবে দুই দলের মধ্যে। অন্যথায় মাঠের লড়াইয়ের পরই নিষ্পত্তি হবে শিরোপার।
ফাইনাল ম্যাচের আগে দুই দলের কেউই নিজেদের দলে পরিবর্তন আনার কথা ভাবছে না। এছাড়া কোনো ইনজুরি সমস্যাও নেই কোনো দলে। যার ফলে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে অপরিবর্তিত একাদশেই মাঠে দেখা যেতে পারে দুই দলকে। বিশ্বকাপের সবশেষ পাঁচ ফাইনালের মধ্যে চারবারই জিতেছে পরে ব্যাট করা দল। যা হয়তো বড় ভূমিকা রাখতে পারে টসের সিদ্ধান্তে।
বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ: পারভেজ হোসেন ইমন, তানজিদ হাসান তামিম, মাহমুদুল হাসান জয়, তৌহিদ হৃদয়, শাহাদাত হোসেন, আকবর আলি, রাকিবুল হাসান, শরীফুল ইসলাম, তানজিম হাসান সাকিব ও হাসান মুরাদ।
ভারতের সম্ভাব্য একাদশ: যশস্বি জাসওয়াল, দিব্বংশ সাক্সেনা, তিলক ভার্মা, ধ্রুব জুয়েল, প্রিয়াম গার্গ, সিদ্ধেশ বীর, অথর্ব আঙ্কোলেকার, রবি বিষ্ণু, সুশান্ত মিশ্র, কার্তিক ত্যাগী এবং আকাশ সিং।
সূত্রঃ জাগোনিউজ