অনলাইন ডেস্কঃ
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে দেশের সব রাজনৈতিক সংগ্রামে সক্রিয় বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠজন ভাষাসৈনিক খোন্দকার আব্দুল মালেক শহিদুল্লাহর দুর্দিন যাচ্ছে।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে যুক্ত থাকায় ফেরারি আসামি হওয়ায় ছাত্রত্ব হারিয়েছিলেন মুক্তাগাছার এ ভাষাসৈনিক।
১৯৭০-এর গণপরিষদ নির্বাচনে খুব অল্প বয়সে প্রতিদ্বন্দ্বীদের জামানত বাজেয়াপ্ত করে বিপুল ভোটে জয়ী এই ভাষা সৈনিকের অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় দিন কাটছে এখন।
গত ১৩ ডিসেম্বর স্ট্রোক করার পর ছিয়াশি বছর বয়সী এ প্রবীণ নেতার ডান হাত ও পা অবশ হয়ে যায়; কথাও অস্পষ্ট তার। হৃদরোগের সমস্যাসহ নানা রোগেও ভুগছেন তিনি। কাউকে দেখলে তাকিয়ে থাকেন, আর হাউমাউ করে কাঁদেন।
তার ঘনিষ্ঠজনরা অভিমান করে বলেন, সারা জীবন সততা আর আদর্শ ধরে রেখে মানুষের জন্য রাজনীতি করে যাওয়া এ নেতা অসুস্থতায় বিছানায় শুয়ে অনেকটাই একাকিত্বে জীবন কাটাচ্ছেন।
কেউ তার খবরও নেন না; টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতেও পারছেন না বলে স্বজন শুভানুধ্যায়ীরা জানান।
সাবেক ছাত্রনেতা আইনজীবী ইদ্রিস আলী আকন্দ বলেন, একদিন যার ডাকে হাজার হাজার তরুণ এগিয়ে আসত, আজ কেউ তার খবর নেয় না।
৬৬-র শিক্ষা আন্দোলন, ৬ দফা, ৬৯-এর গণআন্দোলনের এ তুখোড় নেতা স্বাধীনতার পর ও স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনসহ দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকায় ছিলেন।
মালেকের সার্বক্ষণিক সঙ্গী তার স্ত্রী সুরাইয়া বলেন, বঙ্গবন্ধু তাকে ‘আমার প্রিয় মালেক’ বলে সম্মোধন করতেন।
বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি। তৎকালীন বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগে সৈয়দ নজরুল ইসলামের কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন তিনি। রাজনীতিতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখায় বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ ছিলেন।
তার স্ত্রী বলেন, পরিবারের জন্য তিনি জীবনে কিছুই করতে পারেননি। ব্যাংকে জমানো কোনও টাকা নেই। অর্থাভাবে তার সঠিক চিকিৎসা করাতে পারছেন না।
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর খন্দকার মোস্তাক ও জিয়াউর রহমানের আমলে জেল খাটা এ নেতা জীবনে বহুবার রাজনৈতিক কারণে কারাবাস করতে বাধ্য হয়েছেন।
মুক্তাগাছা পৌরসভার এক মেয়াদে নির্বাচিত চেয়ারম্যান থাকা এই রাজনীতিবিদ সারা জীবন মানুষের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন; মানুষের সেবায় বিলিয়েছেন পৈত্রিক সম্পত্তি।
জীবদ্দশায় জাতিরপিতার বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত ছিল এই নেতার।
এ বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা সম্পর্কে মুক্তাগাছার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আবুল কাশেম বলেন, “ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আব্দুল মালেক সারা জীবন মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন।
“নিজের ও পরিবারের কথা ভাবেননি।
“শেষ জীবনে এসে চিকিৎসা করানোর টাকাও নেই তার।”
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার আব্দুল মালেকের চিকিৎসায় এগিয়ে আসবে বলে প্রত্যাশা করছেন তিনি।
জীবনের শেষ প্রান্তে তার এই চরম অসহায়ত্বে বাবার চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই বেকার সন্তানদের। মুক্তিযোদ্ধা ভাতার টাকায় কোনোরকমে চলছে তার খাওয়া-পরা ও চিকিৎসার খরচ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ বলেন, ভাষা সৈনিক খোন্দকার আব্দুল মালেকের বিষয়ে আমি অবগত রয়েছি।
“তার চিকিৎসার জন্য অচিরেই সহযোগিতা করা হবে।”
সূত্রঃ বিডিনিউজ