ধর্ম ডেস্কঃ
আমল বা ইবাদতের উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। এমন কিছু আমল রয়েছে যেগুলো করার সময় আল্লাহ তাআলা বান্দার জন্য আসমানের দরজা খুলে দেন। আসমান থেকে রহমত বা অনুগ্রহ নাজিল করেন। আবার বান্দার আমল আসমানে তুলে নেয়া হয়। আর তাহলো-
>> সুন্নাত নামাজ
মুমিন মুসলমানের জন্য প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা ফরজ। এসব ফরজ নামাজের আগে ও পরে অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ ১০/১২ রাকাআত সুন্নাত নামাজ রয়েছে। এ সুন্নাত নামাজগুলো পড়ার সময় বান্দার জন্য আসমানের দরজা খুলে দেয়া হয়। হাদিসে এসেছে-
– হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আস-সায়েব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূর্য ঢলে পড়ার পর জোহরের (ফরজের) আগে চার রাকাআত নামাজ পড়তেন। তিনি বলেন, এটা এমন একটা সময় যখন আসমানের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়। আর আমি ভালোবাসি যে এ সময় আমার নেক আমল উঠানো হোক।’ (তিরমিজি)
অন্যত্র রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই যখন সূর্য (পশ্চিমাকাশে) ঢলে পড়ে, তখন আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। অতপর জোহর নামাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত কোনো দরজাই বন্ধ করা হয় না। আর আমি পছন্দ করি যে, এই সময় আমার আমল উঠিয়ে নেয়া হোক।’
জোহরের ফরজ নামাজের আগের ৪ রাকাআত সুন্নাত নামাজকে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুবই গুরুত্ব দিতেন। কখনো কখনো জোহরের আগে তা আদায় করতে না পারলে জোহরের পরে পড়ে নিতেন।
যারা জোহরের ফরজের আগে ৪ রাকাআত নামাজ পড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরেও ৪ রাকাআত সুন্নাত নামাজ আদায় করে তাদের জন্য জাহান্নাম হারাম হয়ে যায়। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- ‘যে ব্যক্তি জোহরের আগে ৪ রাকাআত এবং পরে ৪ রাকাআত সুন্নাত নামাজের ব্যাপারে যত্নশীল হয়, আল্লাহ তার উপর জাহান্নামের আগুন হারাম করে দেন।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি, নাসাঈ)
>> নামাজের জন্য অপেক্ষার সময়
এক ওয়াক্তের ফরজ নামাজ আদায় করার পর অন্য ওয়াক্তের ফরজ নামাজ আদায়ের জন্য অপেক্ষায় থাকা বান্দাকে নিয়ে আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের সঙ্গে গর্ববোধ করেন। তাদের জন্য আসমানের বিশেষ একটি দরজা খুলে রাখা হয়।
– হজরত আব্দুল ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘একদিন আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে মাগরিবের নামাজ আদায় করলাম। তারপর যার চলে যাওয়ার চলে গেল, আর যার থাকার তারা (মসজিদে) থেকে গেল। একটু পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এত দ্রুতবেগে ফিরে এলেন যে, তাঁর দীর্ঘ উর্ধ্বশ্বাস বের হতে লাগল।
তিনি তাঁর দুই হাঁটুর উপর ভর করে বসে বললেন, ‘তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ করো। তোমাদের প্রতিপালক আকাশের একাটি দরজা খুলে দিয়েছেন এবং ফেরেশতাদের সামনে তোমাদেরকে নিয়ে গর্ব করে বলছেন, ‘তোমরা আমার বান্দাদের দিকে তাকিয়ে দেখ, তারা এক ফরজ (নামাজ) আদায়ের পর পরবর্তী ফরজ (নামাজ) আদায়ের জন্য অপেক্ষা করছে।’ (ইবনু মাজাহ)
>> মজলিসে কুরআনের আলোচনা
মুমিন বান্দা যদি আল্লাহ তাআলা সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কুরআন মাজিদের আলোচনায় সময় ব্যয় করে এবং দ্বীনের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে নিয়োজিত থাকে তাহলে ফেরেশতারা আসমানের দরজা খুলে জমিনে অবতরণ করে ওই বান্দাকে ঘিরে রাখেন এবং আসমানের খোলা দরজা দিয়ে তারে ওপর রহমত ও প্রশান্তি আসতে থাকে।
– রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন কোনো সম্প্রদায় আল্লাহর কোনো ঘরে সমবেত হয়ে আল্লাহর কিতাব তেলাওয়াত করে এবং পরস্পর তা নিয়ে আলোচনা করে, তখন তাদের উপর প্রশান্তি বর্ষিত হয়, (আল্লাহর) রহমত তাদেরকে ঢেকে রাখে, ফেরেশতাগণ তাদেরকে ঘিরে রাখে এবং আল্লাহ তাঁর (সামনে উপস্থিত) ফেরেশতাদের কাছে তাদের প্রশংসা করেন।’ (মুসলিম, আবু দাউদ)
– একবার হজরত উসাইদ বিন হুযায়ের রাদিয়াল্লাহু আনহু তার তার বাড়িতে বসে রাতের বেলা সুরা বাকারা তেলাওয়াত করছিলেন। হঠাৎ তার পাশে বেঁধে রাখা ঘোড়াটি লাফাতে শুরু করে। তিনি যখন কুরআন তেলাওয়াত বন্ধ করলেন, তখন ঘোড়াটি শান্ত হয়ে যায়। পুনরায় যখন তেলাওয়াত শুরু করলেন, ঘোড়াটিও (আবারও) লাফাতে শুরু করে। আর ঘোড়াটির পাশে তার শিশু পুত্র ইয়াহইয়া শুয়েছিল। তিনি ভয় পেয়ে গেলেন, না জানি ছেলের গায়ে আঘাত লেগে যায়। তখন তিনি পুত্রকে টেনে আনলেন এবং আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছু দেখতে পেলেন।
অতঃর পরের দিন সকালে তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে উপস্থিত হয়ে রাতের ঘটনাটি জানালেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন-
‘হে ইবনু হুযায়ের! তুমি পড়তেই থাকতে! হে ইবনু হুযায়ের! তুমি পড়তেই থাকতে!
তখন সে বলল- হে আল্লাহর রাসুল! ছেলেকে ঘোড়ার পায়ের আঘাত লাগার ভয়ে আমি তেলাওয়াত বন্ধ করেছিলাম। আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে ছায়ার মত এক জ্যোতির্ময় জিনিস দেখতে পেয়েছিলাম এবং তা দেখতে দেখতে উপরের দিকে উঠে শূন্যে মিলিয়ে গেল।
তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তুমি কি জান, সেটা কি ছিল? তাঁরা ছিল ফেরেশতা। তোমার তেলাওয়াত শুনে তোমার কাছে এসেছিল। যদি তুমি তেলাওয়াত করতেই থাকতে, তাহলে তাঁরা সকাল পর্যন্ত এভাবেই থাকত এবং লোকেরা তাদেরকে দেখতে পেত। একজন ফেরেশতাও তাদের দৃষ্টির অন্তরাল হতো না।’ (বুখারি)
এ হাদিস থেকে প্রমাণিত যে, কুরআনের মজলিসকে বরকতমন্ডিত করার জন্য ফেরেশতারা কল্যাণের বার্তা নিয়ে জমিনে নেমে আসেন এবং ওই মজলিসে বসা ব্যক্তিদের ওপর আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়ে যান।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উল্লেখিত আমলগুলো যথাযথ আদায় করার তাওফিক দান করুন। ব্যক্তি পরিবার সমাজে কুরআনের মজলিস ও সুন্নাত নামাজ আদায় এবং নামাজের অপেক্ষায় থাকার ও তা বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
সূত্রঃ জাগোনিউজ