লাইফস্টাইল ডেস্কঃ
শরীরের বর্জ্য অপসারনের কাজে নিয়োজিত বৃক্ক বা কিডনি ভালো রাখতে চাই সঠিক পর্যবেক্ষণ।
মার্চের ১২ তারিখ ছিল বিশ্ব বৃক্ক দিবস। আর এই বছরের বৃক্ক দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ‘কিডনি হেলথ ফর এভ্রিওয়ান এভ্রিহোয়্যার – ফ্রম প্রিভেনশন টু ডিটেকশন অ্যান্ড ইকুইটেবল অ্যাক্সেস টু কেয়ার।”
এই দিবস উপলক্ষে স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে জানানো হল বৃক্কের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে করণীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে।
প্রতিরোধই মূলমন্ত্র: বৃক্কের রোগ সম্পর্কে প্রথম যে তথ্যটি জানা উচিত তা হল এই রোগ তেমন কোনো নিশ্চিত উগসর্গ দেখায় না, নীরবে প্রাণ নিয়ে যায়। বৃক্কের কার্যকারিতা প্রায় ৯০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যাওয়ার পরই এর ইঙ্গিতগুলো সামনে আসে। ফলে একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে রোগী জানতে পারেন তার বৃক্কের রোগ হয়েছে।
এই পরিস্থিতে দেথা দেওয়া উপসর্গগুলোর মধ্যে পায়ের গোড়ালি ফুলে যাওয়া, অকারণেই ক্লান্তি বা অবসাদ, মনযোগ ধরে রাখতে সমস্যা, খাওয়ার রুচি হারানো, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া এবং ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ পাওয়াও বৃক্কের রোগের লক্ষণ, তবে তা খুব কম দেখা দেয়।
আপনার ঝুঁকি কতটা?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বৃক্কের রোগের কারণ সুনিশ্চিত কারণ খুঁজে পাওয়া যায়না। তবে ধূমপান, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, এমনকি বংশে যাদের এই রোগ আছে তাদের ঝুঁকি বেশি। বিশ্বব্যাপি প্রতি দশজনের মধ্যে একজনের ‘ক্রনিক কিডনি ডিজিজ’য়ে আক্রান্ত, এমনটাই বলে পরিসংখ্যান।
দীর্ঘমেয়াদে বৃক্কের রোগকে বলা হয় ‘ক্রনিক কিডনি ডিজিজ (সিকেডি)’, যেখানে কয়েক মাস কিংবা কয়েক বছরের পরিক্রমায় রোগী বৃক্কের কার্যক্ষমতা নষ্ট হতে থাকে। তাই যাদের ঝুঁকি বেশি তাদের উচিত নিয়মিত বৃক্ক পরীক্ষা করানো।
বৃক্কের যত্ন
স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা অনুসরণ করাই বৃক্কের যত্ন নেওয়ার সবচাইতে কার্যকর উপায়। এরমধ্যে থাকবে স্বাভাবিক শারীরিক ওজন বজায় রাখা, সুষম খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা, নিয়মিত শরীরচর্চা ইত্যাদি।
– পর্যাপ্ত পানি পানের গুরুত্ব এখানে বেশি। প্রতিদিন দেড় লিটার মুত্র তৈরি হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানি শরীরকে যোগাতে হবে। এজন্য প্রতিদিন কমপক্ষে আড়াই থেকে তিন লিটার পানি পান করতে হবে।
– প্রয়োজনের অতিরিক্ত প্রোটিন বৃক্কের রোগ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায় বলে দাবি করেন বিশেষজ্ঞরা। অপরদিকে যারা প্রোটিন শেইক, প্রোটিন পা্উডার ইত্যাদি কৃত্রিম প্রোটিনের মাধ্যমে চাহিদা মেটাচ্ছেন তারা অনেক সময় প্রয়োজনের চাইতে বেশি গ্রহণ করে ফেলেন। মনে রাখতে হবে, উচ্চতা অনুযায়ী একজন মানুষের আদর্শ ওজনের প্রতি কেজির জন্য এক গ্রাম প্রোটিনও হল দৈনিক প্রোটিন গ্রহণের আদর্শ মাত্রা।
– সামান্য শারীরিক সমস্যায় ওষুধ সেবন করা দোষে কমবেশি সবাইকেই দোষারোপ করা সম্ভব। যা বৃক্কের জন্য প্রচণ্ড ক্ষতিকারক। এদের মধ্যে ব্যথানিয়ামক বড়ি বা ‘পেইন কিলার’ বৃক্কের জন্য বেশি ক্ষতিকর। ব্যথার যন্ত্রণা থেকে দ্রুত আরাম পেতে দুই থেকে তিন বছর ধরে ‘পেইন কিলার’ খাওয়া বৃক্কের রোগ বাধানোর অন্যতম প্রধান কারণ।
– বৃক্কের রোগ থেকে নিরাপদ থাকতে রক্তচাপের ওপর কড়া নজর রাখা উচিত। কারণ অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপের কারণে বৃক্কের চারপাশে রক্তনারী সরু, শক্ত ও দূর্বল হতে থাকে ক্রমেই।
– উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, একধিকবার মুত্রনালীর সংক্রমণ, বৃক্কে পাথর ইত্যাদিতে যারা ভুগেছেন বা ভুগছেন তাদের বিশেষ সাবধান থাকতে হবে। যাদের বংশে কারও বৃক্কের রোগ আছে তাদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। বিশেষ করে রক্তে শর্করা মাত্রা যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে সেদিকে কড়া নজর রাখা উচিত।
পরীক্ষা
সাধারণ রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তে ‘ক্রিয়েটিনিন’য়ের মাত্রা জেনে নিতে পারবেন। বৃক্কের নিয়মিত ছেঁকে আলাদা করা উপাদানগুলোর মধ্যেই ‘ক্রিয়েটিনিন’ অন্যতম। তাই রক্তে এর মাত্রা বেশি থাকলে বুঝতে হবে বৃক্ক তার কার্যক্ষমতা হারাচ্ছে।
আরেকটি উপায় হল প্রস্রাবে ‘অ্যালবুমিন’ নামক প্রোটিনের উপস্থিতি পরীক্ষা করা। প্রোটিন থাকবে রক্তে, প্রস্রাবে নয়। তাই প্রস্রাবে তা পাওয়া গেলে বোঝা যাবে বৃ্ক্ক দুর্বল হয়ে পড়েছে।
সূত্রঃ বিডিনিউজ