অনলাইন ডেস্কঃ
মহামারীর রূপ নেওয়া নভেল করোনাভাইরাসসৃষ্ট রোগ কভিড-১৯ এর সাধারণ লক্ষণ হিসেবে এতদিন জ্বর, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্টের কথা বলা হলেও আরও দুটি উপসর্গ ভাবিয়ে তুলেছে চিকিৎসকদের।
কভিড-১৯ এ আক্রান্ত ব্যক্তির ঘ্রাণশক্তি লোপ এবং খাবারের স্বাদ বুঝতে না পারার উপসর্গ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ইতালিসহ বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক নিবন্ধে কয়েকটি দেশের নাক, কান, গলা বিষেজ্ঞদের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, এই দুটিও নতুন এই ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাব্য লক্ষণ হতে পারে।
তারা বলছেন, এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে আপাতদৃষ্টিতে সুস্থ মনে হলেও কিংবা তার মধ্যে অন্য কোনো উপসর্গ না থাকলেও ঘ্রাণশক্তি লোপ পাওয়া এবং খাবারের স্বাদ বুঝতে না পারার লক্ষণ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে অন্তত সাতদিনের জন্য আলাদা করে রাখতে হবে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সহকর্মীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাতে শুক্রবার ব্রিটেনের একদল নাক, কান গলা বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, বয়স্ক যাদের মধ্যে ঘ্রাণশক্তি লোপ পাওয়ার লক্ষণ দেখা দেবে, এমনকি অন্য কোনো লক্ষণ না থাকলেও, তাকে সাতদিনের জন্য আলাদা করে রাখতে হবে, যাতে রোগটি দ্রুত ছড়াতে না পারে।
নতুন এই উপসর্গ নিয়ে খুব বেশি তথ্য-উপাত্ত পাওয়া না গেলেও সতর্ক হওয়ার মতো যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।
ব্রিটিশ রাইনোলজিক্যাল সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ক্লেয়ার হপকিন্স বলেন, “আমরা সত্যিই বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করতে চাই, কারণ এটি সংক্রমণের একটি লক্ষণ। কারও ঘ্রাণশক্তি লোপ পেলে তার উচিত স্বেচ্ছায় আলাদা থাকা। এর ফলে (ভাইরাসের) বিস্তারের গতি কমবে এবং প্রাণও বাঁচবে।”
যেসব রোগীর ঘ্রাণশক্তি লোপ পেয়েছে, এমন রোগীদের চিকিৎসার সময়ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রয়োজনীয় সুরক্ষা উপকরণে (পিপিই) ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন হপকিন্স এবং ব্রিটেনের নাক, কান, গলার চিকিৎসকদের সংগঠন ইএনটি ইউকের প্রেসিডেন্ট নির্মল কুমার।
বিভিন্ন দেশ থেকে পাওয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে যুক্তরাজ্যের চিকিৎসকরা বলছেন, ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা নেহায়েৎ কম না। দক্ষিণ কোরিয়ায় ২০০০ রোগীর ৩০ শতাংশের মধ্যেই এই উপসর্গ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন তারা।
রোববার আমেরিকান একাডেমি অফ অটোলারিঙ্গোলজির (হেড অ্যান্ড নেক সার্জারি বিষয়ক) ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, ঘ্রাণশক্তি হারানো কিংবা খাবারের স্বাদ বুঝতে না পারা যে কভিড-১৯ এর উপসর্গ, অকল্পনীয়ভাবে তার অনেক তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। তারা এমন রোগীও পেয়েছেন যাদের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত না হলেও এই দুটি ছাড়া অন্য কোনো উপসর্গ ছিল না।
চীনের পর সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ইতালিতেও রোগীদের মধ্যে এই ধরনের উপসর্গ পাওয়ার কথা জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
জার্মানির হেইন্সবার্গের ঘরে ঘরে গিয়ে কেরানাভাইরাসে আক্রান্তদের সঙ্গে কথা বলেছেন বন ইউনিভার্সিটির ভাইরোলজিস্ট হেনড্রিক স্ট্রিক। তিনি বলেছেন, শতাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে তাদের দৃই তৃতীয়অংশের কাছ থেকে ঘ্রাণশক্তি এবং মুখের স্বাদ হারিয়ে ফেলার তথ্য পেয়েছেন।
সূত্রঃ বিডিনিউজ