অনলাইন ডেস্কঃ
বাংলাদেশে নভেল করোনাভাইরাসের ব্যাপক বিস্তার ঠেকাতে বিদেশ ফেরতদের মধ্যে যারা হোম কোয়ারেন্টিনে থাকবেন না, তাদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হবে।
এজন্য সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮ এর ২৪, ২৫ ও ২৬ ধারাকে মোবাইল কোর্ট আইনের তফসিলে যুক্ত করে মঙ্গলবার গেজেট জারি করেছে সরকার।
এর ফলে এই আইনের আওতায় সরকার যেসব বিধি-নিষেধ আরোপ করবে, কেউ তা না মানলে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে তাৎক্ষণিক সাজা দেওয়া যাবে।
কী আছে আইনের ওই ধারায়
সংক্রামক রোগের বিস্তার এবং তথ্যগোপনের অপরাধ ও দণ্ড
২৪। (১) যদি কোনো ব্যক্তি সংক্রামক জীবাণুর বিস্তার ঘটান বা বিস্তার ঘটিতে সহায়তা করেন, বা জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও অপর কোনো ব্যক্তি সংক্রমিত ব্যক্তি বা স্থাপনার সংস্পর্শে আসিবার সময় সংক্রমণের ঝুঁকির বিষয়টি তাহার নিকট গোপন করেন তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।
(২) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনূর্ধ্ব ৬ (ছয়) মাস কারাদণ্ডে, বা অনূর্ধ্ব ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
দায়িত্ব পালনে বাধা প্রদান ও নির্দেশপালনে অসম্মতি জ্ঞাপনের অপরাধ ও দণ্ড
২৫। (১) যদি কোনো ব্যক্তি-
(ক) মহাপরিচালক, সিভিল সার্জন বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তাহার উপর অর্পিত কোনো দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বাধা প্রদান বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন, এবং
(খ) সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলের উদ্দেশ্যে মহাপরিচালক, সিভিল সার্জন বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কোনো নির্দেশ পালনে অসম্মতি জ্ঞাপন করেন,
তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।
(২) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনূর্ধ্ব ৩ (তিন) মাস কারাদণ্ডে, বা অনূর্ধ্ব ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
মিথ্যা বা ভুলতথ্য প্রদানের অপরাধ ও দণ্ড
২৬। (১) যদি কোনো ব্যক্তি সংক্রামক রোগ সম্পর্কে সঠিক তথ্য জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা বা ভুল তথ্য প্রদান করেন তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।
(২) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনূর্ধ্ব ২ (দুই) মাস কারাদণ্ডে, বা অনূর্ধ্ব ২৫ (পঁচিশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
উচ্চ আদালতের নির্দেশে গত সোমবার নভেল করোনাভাইরাসকে সংক্রামক ব্যাধির তালিকাভুক্ত করে গেজেট প্রকাশ করে সরকার।
প্রায় তিন মাস আগে চীনের উহান থেকে নভেল করোনাভাইরাস বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে মহামারী আকার ধারণের পর বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের অন্তত ১৪ দিন নিজেদের ঘরে আবদ্ধ থাকার নির্দেশনা দেয় সরকার।
সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নে স্থানীয় প্রশাসনের গলদঘর্ম হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার থেকে বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরগুলোতে নামানো হয়েছে সেনা।
বাংলাদেশে ইতোমধ্যে ৩৯ জন কভিড-১৯ রোগী ধরা পড়েছেন; এর মধ্যে চারজন মারা গেছেন। ব্যাপক সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ইতোমধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করেছে।
বিদেশ ফেরতদের হাতে সিলও দিয়ে দেওয়া হচ্ছে
বিদেশ ফেরতদের হাতে সিলও দিয়ে দেওয়া হচ্ছে
এই পরিস্থিতিতে হোম কোয়ারেন্টিনের নির্দেশনা মেনে চলতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
মঙ্গলবার সাংবাদিকদের পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, “বিদেশ থেকে যারা এসেছেন, তারা সেলফ কোয়ারেন্টিন রক্ষা করে চলুন। আর আপনাদের যদি কোনো ধরনের অস্বাভাবিকতা ধরা পড়ে, তবে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
“আমরা মনে করি, আপনাদের সাময়িক কষ্ট হবে। কষ্ট হলেও এই জায়াগা থেকে উত্তরণের জন্য আর কোন উপায় নেই।”
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমরা যে কোনো মূল্যে এখান থেকে দেশ এবং সবাইকে পরিত্রাণের জন্য কাজ করছি। প্রশাসনকে সহযোগিতা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীকে আহ্বান করেছেন।
“আমরা মনে করি, সবাই মিলে দেশবাসী ও দেশকে রক্ষা করার জন্য বিশেষজ্ঞরা যেভাবে বলছেন আমরা সেভাবে পালন করবো এবং আমরা ঘরে বসে থাকব, যাতে অন্য কেউ আক্রান্ত না হন।”
সূত্র: বিডিনিউজ