অনলাইন ডেস্কঃ
রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার দুর্গম সাজেক ইউনিয়নে হাম রোগে আক্রান্ত পাঁচ ভাইকে হেলিকপ্টার যোগে বুধবার (২৫ মার্চ) বিকেলে চট্টগ্রামে নেয়া হয়েছে। হাম রোগের প্রাদুর্ভাবে দুর্গম সাজেকের দুটি গ্রাম অরুণপাড়া ও লংথিয়ানপাড়ায় এ পর্যন্ত মৃত শিশুর সংখ্যা সাতজন। বর্তমানে সাজেক ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামের ১২৩ জন শিশু হামে আক্রান্ত রয়েছে।
বিকেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামে নেয়া শিশুরা হচ্ছে শিয়ালদহ মৌজার লংথিয়ানপাড়ার বাসিন্দা অনীল মোহন ত্রিপুরার সন্তান প্রহিত ত্রিপুরা (৭), রখেন ত্রিপুরা (৮), রকেট ত্রিপুরা (৯), নহেন্দ্র ত্রিপুরা (১০) ও দিপায়ন ত্রিপুরা (১১)।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গেল ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত সাজেকের অরুণপাড়ায় হাম রোগে আক্রান্ত হয়ে পাঁচ শিশুর মৃত্যু হয়। এছাড়া ইউনিয়নের লংথিয়ানপাড়ায় গত রোববার (২২ মার্চ) একজন ও মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) আরও এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সবমিলিয়ে সাজেকের দুই গ্রাম অরুণপাড়া ও লংথিয়ানপাড়ায় সাত শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
এখনও এই ইউনিয়নের অরুণপাড়া, লংথিয়ানপাড়া, কমলাপুরপাড়া, তারুংপাড়া ও হাইচপাড়ায় আরও ১২৩ জন শিশু হামে আক্রান্ত রয়েছেন। তবে মেডিকেল টিম সেখানে চিকিৎসা সেবা শুরু করার পর নতুন করে কেউ হাম রোগে আক্রান্ত হয়নি বলে দাবি করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। তাদের চিকিৎসা সেবায় কাজ করছে স্বাস্থ্য বিভাগের তিনটি মেডিকেল টিম। অন্যদিকে সেনাবাহিনী ও বিজিবির মেডিকেল টিমও সেখানে রয়েছে বলে জানা গেছে।
১৬৯ নং শিয়ালদহ মৌজার হেডম্যান যুপিইথাং ত্রিপুরা বলেন, সাজেকের পাঁচ গ্রামে এখনও শতাধিক শিশু হামে আক্রান্ত। বুধবার বিকেলে আশঙ্কাজনক অবস্থায় একই পরিবারের পাঁচ ভাইকে সেনাবাহিনীর সহায়তায় হেলিকপ্টারে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
যতটুকু জানতে পেরেছি গুরুতর আক্রান্ত পাঁচ ভাই এখন সুস্থ আছে। এছাড়া সাজেকের ৫ গ্রামের আক্রান্তদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার সেনাবাহিনীর ও বিজিবির তত্ত্বাবধানে আরও একটি চিকিৎসক দল লংথিয়ানপাড়ায় পাঠানো হয়। ওই মেডিকেল টিমের সঙ্গে প্রয়োজনীয় খাবার এবং ওষুধ সামগ্রীও আনা হয়েছে। আক্রান্ত শিশুদের মাঝে পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।
বাঘাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইফতেখার আহমদ জানান, সাজেকে হামে আক্রান্ত একই পরিবারের পাঁচ শিশুর শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় বুধবার বিকেলে তাদেরকে সেনাবাহিনী ও বিজিবির হেলিকপ্টারে করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে (চমেক) নেয়া হয়েছে। এর আগে তাদের পাঁচজনকে দীঘিনালা নিয়ে আসা হয়। পরে দীঘিনালা থেকে তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। বর্তমানে তারা পাঁচজনই অসুস্থ আছে। এখনও সাজেক ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ১২৩ জন শিশু হামে আক্রান্ত রয়েছে। আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসায় তিনটি মেডিকেল সেখানে কাজ করছে। এছাড়াও সেনাবাহিনী ও বিজিবির মেডিকেল টিম কাজ করছে।
প্রসঙ্গত, আয়তনে দেশের সবচেয়ে বড় উপজেলা রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি। এই উপজেলার সবচেয়ে বড় ও দুর্গম ইউনিয়ন সাজেক। এই ইউনিয়নে সাজেক পর্যটন কেন্দ্র ছাড়া বাকি এলাকাগুলো অত্যন্ত দুর্গম। সেখানকার শিয়ালদহ এলাকাটিকে সবচেয়ে বেশি দুর্গম বলে বিবেচনা করা হয়। প্রায়ই সেখানে দুর্গমতার কারণে খাদ্যাভাব ও স্বাস্থ্য ঝুঁকির ঘটনা ঘটে। ৬০৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের সাজেক ইউনিয়নে লোকসংখ্যা প্রায় ৫২ হাজার। কিন্তু দুর্গম এলাকা হওয়ায় সরকারি জরুরি চিকিৎসা সেবা সেখানে নিয়মিত পৌঁছায় না।
সূত্রঃ জাগোনিউজ