আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের বিস্তার বাড়ছেই। মহামারি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন সাড়ে ৬ লাখের বেশি মানুষ। আক্রান্তের দিক দিয়ে সবার উপরের স্থানটি যুক্তরাষ্ট্রের। এক ইতালিতেই ১০ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে। স্পেনে সেই সংখ্যাটা ৫ হাজারের বেশি। সবশেষ হিসাব অনুযায়ী, করোনায় বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
প্রতিদিন বিশ্বব্যাপী হাজারো মানুষ মারা যাচ্ছে। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে হু হু করে। বৈশ্বিক এই মহামারি সামলাতে বেকায়দায় পড়েছে বিশ্বের সব দেশ। চীনে প্রাদুর্ভাব শুরু হলেও ভাইরাসটিতে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে ইতালিতে; ১০ হাজার ২৩ জন। এরমধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৮৯। এদিকে ৫ হাজার ৯৮২ মৃত্যু নিয়ে স্পেনের অবস্থাও বিপর্যস্ত। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৭৩ হাজারের বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ ১ লাখ ২২ হাজার আক্রান্ত মানুষের মধ্যে ২ হাজার ৪৭ জন ইতোমধ্যে মারা গেছে। করোনায় প্রাণহানিতে চীনকে অনেক আগেই ছাড়িয়ে গেছে ইতালি এবং স্পেন। স্পেনে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছে ৮৩২ জন। ফ্রান্সের অবস্থাও বেশ নাজুক। মৃত্যু ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে দেশটি। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ৩১৯ জন কোভিড-১৯ রোগী মারা গেছে।
ইউরোপের প্রায় সব দেশ লকডাউন। যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধেকের বেশি মানুষ ঘরবন্দী। এরকম লকডাউন চলছে এশিয়া ও আফ্রিকাসহ অন্যানা মহাদেশেও। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন আর স্বাস্থ্যমন্ত্রীও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ব্রিটিশ রাজপরিবারের উত্তরাধিকার প্রিন্স চার্লসও।
অবস্থা খুবই মারাত্মক। কোনো ভৌগলিক সীমানা মানছে না এই ভাইরাস। যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ইরান, স্পেনসহ আরও অসংখ্য দেশের অর্ধশতাধিক প্রথম সারির নেতা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। খোদ যুক্তরাষ্ট্র হাসপাতালের ডেব, মাস্ক আর ভেন্টিলেটর সংকটে পড়েছে। জাহাজকে হাসপাতাল বানিয়ে আজ নিউইয়র্কে পাঠিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। দেশটিতে সবচেয়ে বাজে অবস্থা জনবহুল নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের।
এশিয়ার অবস্থাও নাজুক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যে এশিয়াকে সতর্ক করে দিয়েছে। ইরানের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩৯সহ সেখানে মৃত্যু হয়েছে আড়াই সহস্রাধিক মানুষের। প্রতিদিন আরও হাজার হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্টসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। দেশটির অনেক আইনপ্রণেতা করোনায় আক্রান্ত। এরমধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রীও রয়েছেন।
তবে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব চীনের মধ্যাঞ্চলের প্রদেশ হুবেইয়েল রাজধানী উহানে শুরু হলেও সেখান থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হচ্ছে।দেশটিতে নতুন করে স্থানীয়ভাবে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা টানা কয়েকদিন ছিল না। যারা আক্রান্ত হচ্ছিলেন, তারা সবাই বিদেশ ফেরত। তবে বিদেশফেরতদের মাধ্যমে আবারও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করায় সেখানে দ্বিতীয় দফা করোনা ‘বিষ্ফোরণের’ শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ব্যাপকভাবে বিস্তার ছড়ানো দেশগুলোর তালিকায় রয়েছে জার্মানির নামও। দেশটিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৫৭ হাজার ৬৯৫ জন। তবে আক্রান্তদের মধ্যে ৪৩৩ জন মারা গেছেন। যা ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ৮২ জনের মৃত্যু হওয়ার পর আশঙ্কা করা হচ্ছে সেখানেও ভালোই মহামারি আকার ধারণ করবে করোনা।
যুক্তরাজ্যে করোনায় গত একদিনে ২৬০ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে করোনায় সেখানে মৃত্যুর সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গেছে। ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে নেদারল্যান্ডসে কোভিড-১৯ রোগে ৬৩৯ জন মারা গেছেন। এরমধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় মৃত্যু হয়েছে ৯৩ জনের। বেলজিয়ামে ৩৫৩ এবং সুইজারল্যান্ডে করোনায় ২৬৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। শতাধিক মৃত্যু হয়েছে ইউরোপের আরও অনেক দেশে।
প্রতিবেশী ভারতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা হাজার ছুঁই ছুঁই। দেশটিতে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে ২৪ জন মারা গেছেন। করোনার বিস্তার ঠেকাতে ২১ দিন দেশ লকডাউন করে রেখেছে মোদি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার। পাকিস্তানে আক্রান্তের প্রায় ১৫শ পেড়িয়েছে। মারা গেছেন ১২ জন। বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৮; এরমধ্যে ৫ জন মারা গেছেন। এছাড়া সুস্থ হয়েছেন ১৫ জন। চিকিৎসা চলছে ২৮ জনের।
সূত্রঃ জাগোনিউজ