খালেদ শহীদ, রামুঃ
কক্সবাজারে করোনা প্রতিরোধ সচেতনতায় কঠোর অবস্থান নিয়েছে রামু সেনানিবাসের ১০ পদাতিক ডিভিশন। স্থানীয় জনসাধারণকে সামাজিক দূরত্ব ও হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে বৃহস্পতিবার (২ এপ্রিল) সকাল থেকে মাঠ পর্যায়ে হার্টলাইনে অবস্থান নিয়েছে সেনাবাহিনীর টহলদল। সড়ক, ষ্টেশন, বাজারে অযথা চলাফেরা করা জনসাধারণকে বাড়িতে ফিরে যেতে সর্তকতামূলক প্রচারণা চালানো হয়েছে। পাশাপাশি কর্মহীন শতাধিক দুস্থ-গরিব মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছে রামু সেনানিবাস।
বৃহস্পতিবার (২ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে কক্সবাজার শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে কঠোর সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করা হয়। জনসচেতনতায় নানাবিধ এ কর্মকান্ড তদারকি করেন, রামু সেনানিবাসের ১০ পদাতিক ডিভিশন জিওসি ও কক্সবাজার এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মো. মাঈন উল্লাহ চৌধুরী। বৃহস্পতিবার সকালে জনসচেতনতামূলক কর্মসূচিতে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্ণেল (অব.) ফোরকান আহমদ, পদাতিক ব্রিগেডের ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আলীমুল আমীন, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন, ২ পদাতিক ব্রিগেডের ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আলীমুল আমীন, পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেনসহ সামরিক ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে কক্সবাজার সাগরপাড়ে আর্মি ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্টের জলতরঙ্গে সামরিক ও স্থানীয় প্রশাসনের ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে অনুষ্ঠিত করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ সংক্রান্ত কনফারেন্সে সভাপতিত্ব করেন, রামু সেনানিবাসের জিওসি মেজর জেনারেল মো. মাঈন উল্লাহ চৌধুরী।
জানা গেছে, জনসচেতনতা মূলক কর্মকান্ডের পাশাপাশি রামু সেনানিবাসের জিওসি’র নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন স্থানে অসহায় ও দরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। ত্রাণ বিতরণের পর তাদেরকে ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়। কক্সবাজার শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, কলাতলী এলাকা ও ফিশারিঘাট এলাকায় করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে জনসচেতনতামূলক প্রচারণা করার পারশাপাশি ওই এলাকায় শতাধিক দুস্থ ও খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষকে ১০ কেজি চাল, ২ কেজি আলু, আধা কেজি তেল, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি লবণ, ৫ কেজি আলু, ১ কেজি পেঁয়াজ ও ২ টি করে সাবান দিয়েছে সেনাবাহিনী। এ সময় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সেনাবাহিনীর ত্রাণ পেয়ে আবেগাফ্লুত হয়ে যান কক্সবাজার ডিসি অফিস এলাকার জুতা সেলাই-পালিশকারী নির্মল শীল। তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশনা মেনে গত ছয়দিন বাসায় থেকেছি। জমানো টাকা ও খাবার শেষ হয়ে যাওয়ায় পরিবারের সদস্যদের কথা চিন্তা করে কাজে বের হয়েছি। সকালে জেলা প্রশাসন ও সেনা সদস্যদের ঝটিকা ত্রান বিতরনের সময় এক প্যাকেট ত্রাণ পেয়েছি। অশ্রুসজল চোখে নির্মল শীল জানায়, তার মতো হতদরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষদের এভাবে সহযোগিতা করলে, তারা দূর্যোগ কেটে না যাওয়া পর্যন্ত আর ঘরের বাইরে আসবেন না।
একই অভিপ্রায় ব্যক্ত করল রিকশাচালক মজনু আলী। কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের গ্রামের বাড়িতে তার সংসারে স্ত্রী ও তিন ছেলেমেয়ে রয়েছে। কক্সবাজার শহরে রিকশা চালিয়ে সংসার চলে তার। কক্সবাজার শহরের একটি মেসে কষ্ট করে রাতযাপন করে, কষ্টকরা আয়-রোজগারের ঠাকা স্ত্রী সন্তানদের জন্য পাঠায়। জমানো টাকা গত ৬-৭ দিনে শেষ হয়ে যায়। পেটের তাগিদে বাধ্য হয়ে রিক্সা নিয়ে বের হয়েছি। সড়কে যাত্রী না থাকায় যখন হতাশ হয়ে বসেছিলেন, মজনু আলী। এ সময় সেনাবাহিনী তার হাতে ত্রাণ সামগ্রী তোলে দেন। ত্রান পেয়ে তার মুখে খুশির হাসি বয়ে যায়। তিনি জানান, আগামী দশ দিন বাসার বাইরে বের হবো না।
বৃহস্পতিবার সকালে রামু চৌমুহনী ষ্টেশনে করোনা প্রতিরোধ সচেতনতায় সামাজিক দূরত্ব ও হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে কঠোর অবস্থান নেয়, রামু সেনানিবাসের সেনা টহলদল। এ সময় গণপরিবহণ চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। চৌমুহনী ষ্টেশনে অযথা চলাফেরা করা মানুষদের সর্তক করে ঘরে ফেরত পাঠাতে দেখা যায়। ‘আপনার সুস্থতাই আমাদের কাম্য’ এই মূলমন্ত্রে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ২৪ মার্চ থেকে কক্সবাজার জেলা ও বৃহত্তর চট্টগ্রামের আটটি উপজেলায় রামু সেনানিবাসের ১০ পদাতিক ডিভিশন সদস্যরা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে জনসচেতনতামূলক কর্মকান্ডে স্থানীয় প্রশাসনকে সহযোগিতা করে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন।
এ সব এলাকায় রামু সেনানিবাসের উদ্যোগে জনসাধারণকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বাসায় অবস্থান নিশ্চিত করা, বিনা প্রয়োজনে বাইরে চলাচলরত ব্যক্তিদের ফুল দিয়ে ঘরে ফেরানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। শহর-গ্রামের বিভিন্ন স্থানে হাত ধোয়ার বেসিন স্থাপন এবং করোনা প্রতিরোধে নানা ধরনের সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেন, সেনা সদস্যরা। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে জনসচেতনতামূলক কর্মকান্ড পরিচালনা ও অসচ্ছল, খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষদের গ্রাণ বিতরণ করায় কক্সবাজারের সাধারণ মানুষের মাঝে ভালোবাসা ও আস্থা অর্জন করেছে রামু সেনানিবাসের ১০ পদাতিক ডিভিশন। ভবিষ্যতেও জনকল্যাণে সেনাবাহিনীর এ ধরনের কর্মকান্ড অব্যাহত থাকবে বলে জানান, রামু সেনানিবাসের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।