অনলাইন ডেস্কঃ
করোনায় জাতীয় ও বৈশ্বিক মহাদুর্যোগ মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছে বিএনপি।
শনিবার (০৪ এপ্রিল) করোনা সংকট মোকাবিলায় অর্থনৈতিক প্যাকেজ প্রস্তাবনা ঘোষণার জন্য আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ডাক দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘জাতীয় ও বৈশ্বিক মহাদুর্যোগ মোকাবিলায় যে কোনো গঠনমূলক ও কল্যাণমুখী উদ্যোগে শামিল হতে বিএনপি প্রস্তুত। এ দুর্যোগ পরিস্থিতিতে দম্ভ, অহংকার ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পরিহার করে সরকারকেই ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা এই মহাদুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবো।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কাশি, জ্বর হলেই তা করোনা নাও হতে পারে। তাই এখন প্রয়োজন পরীক্ষা পরীক্ষা আর পরীক্ষা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে সরকারের রোগ পরীক্ষা এবং আক্রান্তের পরিসংখ্যানের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। অথচ কোরিয়া, সিঙ্গাপুরসহ যেসব দেশ স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করেছে তারাই সুফল পেয়েছে।’
‘অপরদিকে বাংলাদেশে বেশিরভাগ মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেষ্টা করেও আইইডিসিআর’র হটলাইনে ফোন করে সেবা পাচ্ছে না। বাংলাদেশে গত দুই মাসে আট লাখ মানুষ করোনা হটলাইনে ফোন করেন। ২৮ মার্চ পর্যন্ত মাত্র ১১০০ জনকে টেস্ট করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৮টি কেস করোনা পজেটিভ পাওয়া গেছে’— বলেন মির্জা ফখরুল।
দেশে মৃত্যুর হার করোনা বিধ্বস্ত ইতালির তুলনায় অনেক বেশি দাবি করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যুর হার ১০.৪ শতাংশ অথচ ইতালিতে মৃত্যুর হার ১০.২ শতাংশ। নিঃসন্দেহে রোগ পরীক্ষার স্বল্পতাই এই হিমশীতল মৃত্যুহারের কারণ। প্রতি হাজারে কোরিয়া যেখানে টেস্ট করেছে ছয়জন, সেখানে বাংলাদেশ প্রতি ১০ লাখে টেস্ট করেছে মাত্র ছয়জন। এটা কি উদাসীনতা না উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তা আমাদের বোধগম্য নয়।’
‘এ মহাদুর্যোগের সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ তথ্যের অসচ্ছতার কারণে জাতিকে কোনো চড়া মূল্য দিতে হয় কিনা সেটাই আশঙ্কা’ — বলেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনা পরীক্ষা কিট নিতান্তই অপ্রতুল। হাসপাতালে পিপিই ও পরীক্ষা কিটের অভাবে সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্তদের চিকিৎসা করছে না। এমনকি অন্যান্য রোগে আক্রান্তদের হাসপাতালে ভর্তি করছে না। এক কথায় সারাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।’
বিএনপির পক্ষ থেকে নেয়া পদক্ষেপগুলোর কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল জানান, স্থানীয় পর্যায়ে করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ এবং শাটডাউনের কারণে কর্মহীন দুস্থ জনগণের মুখে দু’মুঠো খাবার তুলে দিতে দলীয় নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের জনগণ ও বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে। মহামারির ভয়াবহতা অনুভব করে বিএনপিই প্রথম জনগণের মধ্যে গণসচেতনতামূলক সচিত্র লিফলেট ও মাস্ক বিতরণ শুরু করে।
দিনমজুর শ্রেণির কষ্ট লাঘবের জন্য বিএনপি সারাদেশে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি পালন করছে। জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন ও ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) হেল্পলাইনের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা ও সহযোগিতা প্রদান শুরু করেছে। প্রতিদিন এ কার্যক্রমের পরিধি বৃদ্ধি করা হচ্ছে। ক্ষুদ্র পরিসরে স্থানীয় নেতাকর্মীরা এলাকাভিত্তিক দরিদ্র জনগণের ঘরে ঘরে খাদ্য সামগ্রী ও সাহায্য পৌঁছে দিচ্ছে। যতদিন প্রয়োজন সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে— জানান মির্জা ফখরুল।
বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত যারা মারা গেছেন তাদের বিদেহী আত্মার শান্তি ও মাগফেরাত কামনা করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যেসব চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনায় আক্রান্তদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন এবং যেসব সংবাদকর্মী মহামারির নিউজ/তথ্য/চিত্র কভার করছেন জাতির পক্ষ থেকে আমরা তাদের অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশপ্রেমিক সামরিক বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন তাদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা।’
বিশ্বব্যাপী যেসব বিজ্ঞানী, রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ ও গবেষক মানব সভ্যতা বাঁচিয়ে রাখতে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বিএনপির মহাসচিব।
সূত্রঃ জাগোনিউজ