খালেদ শহীদ, রামুঃ
রামুতে বিশ্ব দূর্যোগ করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে জনগণকে সচেতন করতে ও কর্মহীন হতদরিদ্র পরিবারকে খাদ্য সামগ্রী সহ অর্থ বিতরণে গ্রাম অঞ্চল থেকে দূর্গম পাহাড়ী পল্লীতে ছুটছেন ইউএনও প্রণয় চাকমা। এ সময় তিনি করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ সম্পর্কে করণীয় বিষয়ে সাধারণ জনগণকে অবহিত করছেন। ইউএনও রামুবাসীকে সচেতন করতে সর্তকতা উচ্চারণে বলেন, আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। বাংলাদেশে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোগীর সংখ্যা। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সতর্কতা ও সচেতনতা হোন। ঘরে থাকুন, নিরাপদে থাকুন। আপনি বাঁচুন, আপনার পরিবারকে বাঁচতে দিন।
সোমবার (১৩ এপ্রিল) বিকালে রামু উপজেলার ঈদগড় ইউনিয়নের দূর্গম এলাকা চাইজ্ঞা বাজার বৈদ্যপাড়ার রাখাইন পল্লীর কর্মহীন ও হতদরিদ্র ৩৭ পরিবারকে খাদ্য সামগ্রী ও অর্থ প্রদান করেন ইউএনও প্রণয় চাকমা। এর আগে দুপুরে রশিদনগর ইউনিয়নে খাদ্য সামগ্রী ও অর্থ প্রদান করেন তিনি। কর্মহীন মানুষকে খাদ্য সামগ্রী ও অর্থ প্রদান কালে উপস্থিত ছিলেন, রামু রাবার বাগান ব্যবস্থাপক নন্দী গোপাল রায়, ঈদগড় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ ভূট্টো, রশিদনগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এমডি শাহ আলম, অগ্রযাগ্রা’র চেয়ারম্যান নীলিমা আকতার চৌধূরী, রামু থানার এসআই সেলিম, এএসআই মিঠন মহাজন, এনএসআই আবু হানিফ, ঈদগড় ইউপি সদস্য শাহজাহান, রামু রিপোর্টাস ইউনিটির সাবেক সভাপতি সোয়েব সাঈদ, সাংবাদিক কামাল শিশির ও এম এইচ আরমান প্রমুখ।
ইউএনও’র খাদ্য সামগ্রী ও অর্থ সহায়তা পাওয়া ঈদগড় বৈদ্যপাড়ার রাখাইন পল্লীর বাসিন্দাদের বলেছেন, আপনারা ঘরে থাকবেন। সামাজিক দূরত্ব মেনে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন। প্রতিদিনই বাড়ছে করোনা ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা। কখন কিভাবে কোথায় করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে আমরা জানি না। কাজেই সতর্কতা অবলম্বন করুন, সচেতন হোন।
ঈদগড় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ ভূট্টো বৈদ্যপাড়ার রাখাইন পল্লীর বাসিন্দাদের সর্তক করে বলেন, করোনা ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণ হচ্ছে। করোনা ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসলে একজন থেকে আরেকজনে ছড়ায়। বৈদ্যপাড়ায় এলাকার বাইরের লোকজন আসা-যাওয়া করছে। কারও মাধ্যমে যদি বৈদ্যপাড়ায় করোনা ভাইরাস ছড়ায়, তাহলে শুধু ঈদগড় ইউনিয়ন নয় উপজেলা থেকে জেলায় ছড়িয়ে যাবে। আমরা কেউ রক্ষা পাবোনা। এই দূর্যোগ সময়ে বাইরের কোন লোককে বৈদ্যপাড়ায় ঢুকতে দিবেন না। আপনারাও এলাকা ছেড়ে কোথাও যাবেন না।
রামু রিপোর্টাস ইউনিটির সাবেক সভাপতি সোয়েব সাঈদ জানান, সোমবার দুপুরে রামুর রশিদনগরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে বিধিনিষেধ অমান্যকারী এক সিএনজি অটোরিক্সা চালককে থামিয়ে কোন দন্ড না দিয়ে, দিয়েছেন অর্থ সহায়তা। এ সময় ইউএনও প্রণয় চাকমা ওই সিএনজি অটোরিক্সা চালককে বলেছেন, ‘এই নেন টাকা। চাল, ডাল, তেল নিয়ে এক্ষুনি বাড়িতে চলে যান। গাড়ি নিয়ে আপাতত রাস্তায় বের হবেন না। করোনা থেকে নিজে বাঁচেন, অন্যকে বাঁচান।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণয় চাকমা বলেন, এই দূর্যোগ মুর্হুতে ঈদগড় বৈদ্যপাড়ার রাখাইন পল্লীর বান্দিারা সরকারি ত্রাণ পায় নি। যখন এ ব্যাপারে জেনেছি, তখনই স্থানীয় চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ তাৎক্ষণিক খাদ্য সামগ্রী বিতরণের ব্যবস্থা করি। তিনি বলেন, আমাদের ত্রাণ সহায়তা আমরা প্রত্যেকটা ঘরে ঘরে সরাসরি নিজে গিয়ে পৌঁছে দিচ্ছি। ত্রাণ বিতরণে কাজ করছেন উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী। স্থানীয় চেয়ারম্যান ও উপজেলা প্রশাসনের ট্যাগ অফিসারের মাধ্যমে প্রত্যেকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রাণ দেয়া হচ্ছে। ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত থাকবে জানিয়ে ইউএনও আরও বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে বর্তমানে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। যারা কর্মহীন মানুষ, যাদের উপার্জন নাই, তাদেরকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে আমরা ত্রাণ সহায়তা দিয়ে আসছি।
অর্থনৈতিকভালে সচ্ছল ব্যক্তিদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে ইউএনও বলেন, যারা অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম, যাদের অর্থনৈতিক কিছুটা সংগতি রয়েছে আপনাদের প্রতি অনুরোধ, আপনারা খেটে খাওয়া মানুষজনের পাশে দাঁড়ান। তাহলে তারা প্রত্যেকে উপকৃত হবে। আমরা যদি একজন পাঁচজনের দায়িত্ব নিতে পারি, অন্তত সেটা পাঁচশত টাকা হয়, তাহলে কাউকে না খেয়ে থাকতে হবে না। যারা সক্ষম আছেন, আপনারা এই দুর্যোগকালীন সময়ে প্রত্যেকে প্রত্যেকের পাশে দাঁড়ান।