অনলাইন ডেস্কঃ
পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বাস্থ্য নির্দেশিকা কঠোরভাবে মেনে শ্রমিকদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে পারলে রোজার মাসের মধ্যে সীমিত আকারে কিছু গার্মেন্টস ও শিল্প কারখানা চালু করা যেতে পারে বলে মত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, “সামনে রোজা, আমরা সবাইকে একেবারে বন্ধ করে রাখতে পারব না। আমাদের কিছু কিছু জায়গা আস্তে আস্তে উন্মুক্ত করতেই হবে।”
সোমবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকা বিভাগের কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর ও মানিকগঞ্জ এবং ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি কারখানা মালিকদের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বলেন।
ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ থেকে বাংলাদেশের সব অফিস আদালত বন্ধ রেখে নাগরিকদের ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। সব ধরনের যানবাহন চলাচলও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বন্ধ রয়েছে অধিকাংশ পোশাক কারখানাও।
কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে লকডাউনের মেয়াদ নেওয়া হয়েছে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত। সেই সময়সীমা শেষ হলে কিছু কারখানা চালু করার জন্য ময়মনসিংহ, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, মানিকগঞ্জ, রংপুর ও বগুড়া অঞ্চলের শ্রমিকদের নিরাপদে কর্মস্থলে নিয়ে আসতে পরিবহনের ব্যবস্থা করতে বিআরটিসির চেয়ারম্যানকে চিঠি লিখেছিলেন বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক।
সেই প্রেক্ষিতে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ভিডিও কনফারেন্সে আলোচনার সূত্রপাত করলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “একটা কাজ করতে পারেন, যদি ইন্ডাস্ট্রি তারা খুলতেও চায় বা কাজ করতে চায়, সেখানে স্বাস্থ্য নির্দেশিকা মেনে কীভাবে শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানো যেতে পারে… ।
“তাদের সুরক্ষিত রেখে বা তাদের থাকার জায়গাগুলো… এখানে যদি কোনো ফাঁকা জায়গা থাকে… সেখানে যদি তাদের থাকার ব্যবস্থা করা যায়, যেখানে তারা সম্পূর্ণভাবে সুরক্ষিত থাকবে….. বা ইন্ডাস্ট্রিগুলো তাদের নিজস্ব জায়গা অনেকের আছে, সেখানেও তারা একটা ব্যবস্থা করতে পারে। সেভাবে যদি তারা করতে পারে, তাহলে কিছু কিছু ইন্ডাস্ট্রি তো চালু করতেই হবে।”
কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের স্বার্থে ওষুধশিল্পের পাশাপাশি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য পিপিই ও মাস্ক তৈরিকারী প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা রাখতে হচ্ছে বলে জানান শেখ হাসিনা।
“বিশেষ করে আমাদের ওষুধশিল্প, করোনাভাইরাসের জন্য অ্যাপ্রন থেকে শুরু করে পিপিই, মাস্ক, হেড ক্যাপ, তারপরে শু ক্যাপ- এগুলো যারা তৈরি করছে, তাদের জন্য তো খোলা রাখতে হচ্ছে। এটা ওইভাবে আলোচনা করে, তারা কত পারসেন্ট আছে…।”
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম জানান, আগামী ২৬ এপ্রিল বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানা চালু করার জন্য পাঁচটি জেলা থেকে শ্রমিকদের আনতে বিআরটিসির বাস চেয়ে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে।
তবে শ্রমিক আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী গুরুত্ব আরোপ করেন, তাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে। এর আগে একবার কারখানা খোলার কথা থাকায় বিপুল ভোগান্তির মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিকদের ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরে আসার কথাও তিনি মনে করিয়ে দেন।
“গতবার যেমন হঠাৎ সুপারভাইজর দিয়ে শ্রমিকদের ডেকে নিয়ে আসল, আমি মনে করি যে এটা কোনোমতে ঠিক হয়নি। তাদের আসা যাওয়ায় যে কষ্টটা তারা পেয়েছে, কারণ তার পরের দিনই বলছে, চলে যাও। যেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বন্ধ, মাইলের পর মাইল হেঁটে, এই মেয়েরা পর্যন্ত তাদের গার্জিয়ানকে সাথে নিয়ে হেঁটে হেঁটে এসেছে। তো এভাবে যেন তাদের কোনোরকম কষ্টে পড়তে না হয়।”
গার্মেন্ট খোলার আগে শ্রমিকদের বিষয়ে করণীয় কী হবে, তাও জানিয়ে দেন শেখ হাসিনা।
“তাদেরকে আনতে হলে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। আবার তাদের থাকার ব্যবস্থাও করতে হবে। তারা যেন সুরক্ষিত অবস্থায় থাকতে পারে… তাহলে তারা কারখানা চালু করতে পারবে। এ জিনিসটা বোধ হয় আপনাদের দেখা উচিৎ, আলোচনা করা উচিৎ এবং ওইভাবে রাখা উচিৎ।”
আক্রান্ত রোগী বাড়তে থাকায় ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের পরে গাজীপুরকে করোনাভাইরাসের বিস্তারের নতুন ‘এপি সেন্টার বলছে আইইডিসিআর। সোমবার সকাল পর্যন্ত সেখানে ২৭৯ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
এমন পরিস্থিতিতেও কিছু গার্মেন্ট মালিকের অমানবিক সিদ্ধান্তের কারণে হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিৎ করা যাচ্ছে না বলে বৈঠকে জানান গাজীপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার।
তিনি বলেন, বেশকটি পোশাক কারখানার মালিকপক্ষ বেতন দেওয়ার কথা বলে শ্রমিকদের ডেকে এনে এখন দিচ্ছে না। পিপিই তৈরির কথা বলে অন্য সামগ্রী তৈরি করছে। শ্রমিকরা চাকরির দায়ে ঘর থেকে বের হয়ে আসছে। ওইসব কারখানায় স্বাস্থ্যবিধিও ঠিকমত মানা হচ্ছে না।
প্রধানমন্ত্রী তখন বলেন, “যেহেতু গাজীপুরে দেখা দিচ্ছে রোগের প্রাদুর্ভাবটা, এখানে আমাদের চিন্তা করতে হবে যে এটা (পোশাক কারখানা) ২৪ বা ২৫ তারিখে চালু করা ঠিক হবে কি না।
“সেখানে কী পরিমাণ রোগী আছে, বা পরীক্ষা করে কত জন শনাক্ত হয়েছে, সে বিষয়গুলি আগে জানতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ডব্লিউএইচওর যে নিয়ম… সে নিয়ম মেনে পরীক্ষা করতে হবে।
“এটা বুঝে নিয়ে তারপর ইন্ডাস্ট্রি খোলার কথা, তারপর তাদের সুরক্ষার কথা… আমি বলব না যে একদম বন্ধ থাকুক, তাহলে সীমিত আকারে সে পরিমাণ শ্রমিক আসতে হবে এবং তা ওভাবে চালু করতে পারবে। এটা আমার মনে হয়, মালিকদের সঙ্গে কথা বলে তারপর আপনারা ঠিক করবেন।”
পুলিশ কর্মকর্তা শামসুন্নাহারে কথার জবাবে পোশাক শ্রমিকদের বিষয়ে আশ্বস্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা এটা ব্যবস্থা নেব। গার্মেন্টসের কিছু নেতাদের সাথে আমি এরপরেই বসব। তাদের সাথে কথা বলব এ বিষয়ে।”
গাজীপুরের শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতাল ও নার্সিং কলেজে ৩০ জন ডাক্তার-নার্স করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় হাসপাতালটির কার্যক্রম ‘বন্ধ করা হচ্ছে’ বলে জানান শেখ হাসিনা।
ওই হাসপাতাল এখন কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য ‘ডেডিকেটেড’ করার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি যাদেরকে প্রস্তাব দিয়েছি, যদি প্রয়োজন হয় ওখানে চিকিৎসার ব্যাপারে আলাপ করে…. ওদের সাথে একটা চুক্তি আছে আমাদের। আমরা কিন্তু ওই হাসপাতালটা ব্যবহার করতে দিতে পারি।… মালয়েশিয়ানরা যেহেতু চালাচ্ছে, আপনারা ওদের সাথে আলাপ করে দেখতে পারেন।”
সূত্রঃ বিডিনিউজ