নিজস্ব প্রতিবেদক, রামুঃ
রামুতে মহাদূর্যোগ করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে জনসচেতনতায় ও কর্মহীন খেটে খাওয়া মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া হাফিজুল ইসলাম চৌধুরী। জন্মস্থান গর্জনিয়ায় করোনায় অসহায় স্বল্প আয়ের মানুষকে সহায়তা দিতে ও সংক্রমণ প্রতিরোধে জনসচেতনতায় এগিয়ে এসেছেন তিনি। রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের তিন শত পরিবারকে নিজ উদ্যোগে নগদ টাকা ও খাদ্য সামগ্রী দিয়ে সহায়তা করেছেন। জনসমাগম এড়িয়ে দিনে ও রাতে হতদরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে পৌঁছে দিয়েছেন এসব সহায়তা।
কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে আইন বিভাগে অধ্যয়নরত হাফিজুল ইসলাম চৌধুরী, পড়ালেখার পাশাপাশি সাংবাদিকতা ও সামাজিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে আছেন। কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ছাত্রলীগের উপপ্রচার সম্পাদক ও গর্জনিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, গর্জনিয়া ইউনিয়নের পোয়াঙ্গেরখিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এবং গর্জনিয়া ইউনিয়ন বীট পুলিশিং ফোরামের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন হাফিজুল ইসলাম চৌধুরী।
জানা গেছে, রামু উপজেলার সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন গর্জনিয়া ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ কৃষক, দিনমুজুর, ক্ষুদ্রব্যবসায়ী, রিকশাচালক। তারা দিনের আয়-উপার্জনের টাকায় খেয়ে-পরে কোনোমতে বেঁচে থাকেন। গর্জনিয়ার বেশির ভাগ মানুষ কেউই এই দুর্যোগে কাজ করতে পারছেন না। খেটে খাওয়া মানুষগুলো কাজ না থাকায় চরম অসহায় হয়ে পড়েছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সরকারি বরাদ্ধ পেলে, শুধুমাত্র তালিকাভূক্ত উপকারভোগীদের চাল দিচ্ছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ব্যক্তিগতভাবে কিছুই দিচ্ছেন না গর্জনিয়া ইউনিয়নে। কর্মহীন এসব মানুষের অনেকে সামাজিক আত্মসম্মানের ভয়ে কারো কাছে সাহায্যের জন্য যাচ্ছেন না। এই অবস্থায় নিজ এলাকার প্রায় তিন শতাধিক পরিবারকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন হাফিজুল ইসলাম চৌধুরী। ঘরবন্দি মানুষের দ্বারে দ্বারে চাল, ডাল, আলুসহ নিত্যপন্য সামগ্রী পৌছে দিচ্ছেন তিনি। যে বাড়িতেই যাচ্ছেন সে পরিবারে ঘরবন্দি স্কুলপড়ুয়া শিশুদের খোঁজ নিয়ে তাদের নানা পরামর্শ ও সহায়তা করেছেন। জনপ্রতিনিধি না হয়েও তার এই মানবিক উদ্যোগ ও ভূমিকাকে স্বাগত জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।
কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’র ছাত্র হাফিজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমি গ্রামের ছেলে। গর্জনিয়ার গ্রামাঞ্চলেই আমি বড় হয়েছি। ছোটকাল থেকেই আশপাশের গ্রামের মানুষের সঙ্গে আমার ভালো সুসম্পর্ক। তাঁরা সবাই আমাকে ভালোবাসেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই আছেন দিনমজুর-খেটেখাওয়া মানুষ। করোনা পরিস্থিতিতে কর্মহীন অসহায় মানুষের অসহায়ত্ব দেখে, তাদের পাশে দাঁড়াতে চেষ্টা করেছি। অনেকের ঘরে খাবার নেই। তখনই সিদ্ধান্ত নিই এই দুঃসময়ে গ্রামের খেটেখাওয়া মানুষের পাশে দাঁড়াবো। আমার প্রচেষ্টায় গর্জনিয়ার মানুষকে যতটুকু ভালো রাখা যায়, তার চেষ্টা করবো। কর্মকহীন এ সব মানুষের জন্য মন কাঁদে, এ জন্যই গ্রামের মানুষের সেবায় এগিয়ে এসেছি।
গর্জনিয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি মোহাম্মদ ইউছুপ মেম্বার জানান, বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র হাফিজুল ইসলাম চৌধুরী দুর্যোগে কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। ত্রাণ সহায়তা দেয়ার পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব, হোম কোয়ারেন্টাইন ও সরকারি বিধি নিষেধ মেনে চলতে সচেতনতামুলক কার্যক্রম চালাচ্ছেন। গর্জনিয়া ইউনিয়নে ব্যাক্তিগত উদ্যোগে ও প্রশাসনের সহায়তায় মাদক বিরোধী অভিযান, স্বেচ্ছাশ্রমে সড়ক নির্মাণ, সামাজিক দাবী আদায়ে তার ভূমিকা রয়েছে।
গর্জনিয়া ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি হাফেজ আহমদ জানান, দেশের এই দূর্যোগ সময়ে আমাদের গ্রামের অনেকের পক্ষে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকাই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সরকারিভাবেও দেয়া হচ্ছে, তাও অপ্রতুল। এই দুর্যোগের সময়ে যাঁরা দিন এনে দিন খায়, তাঁদের চলার কোনো উপায় নেই। কেউ একবেলা খাচ্ছে, কেউ খাচ্ছে না, তাঁদের পাশে যে হাফিজ ভাই দাঁড়িয়েছেন এটাকে সাধুবাদ জানাই।
ছাত্রলীগ নেতা হাফিজুল ইসলাম চৌধুরী জানান, করোনা পরিস্থিতিতে গর্জনিয়া ইউনিয়নের খেটে খাওয়া মানুষের জীবিকা সংকীর্ণ হয়ে এসেছে। অনেক পরিবার লোকলজ্জায় কারো কাছে গিয়ে সহায়তা নিচ্ছেন না। সমাজের এসব মানুষসহ অসহায় দরিদ্রদের ত্রাণ নয়, উপহার দেওয়ার চেষ্টা করছি মাত্র। প্রথমবারে ১০০ জনকে পাঁচ কেজি করে চাল এবং দ্বিতীয় বারে ২০০ জনকে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছি। এ সবের মধ্যে ছিল, চাল, ডাল, তেল, আলু, পেয়াঁজ, ছোলা ও সাবান। তার মধ্যে শতাধিক শিক্ষার্থীর পরিবার ছিল।
তিনি বলেন, সরকারের একার পক্ষে এই দুর্যোগ মোকাবেলা করার সম্ভব নয়। তাই বিত্তবানদের উচিত যার যার মতো করে মানুষের পাশে দাঁড়ানো। তিনি বলেন, লকডাউনের কারনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এই অবস্থায় স্কুল জীবনের হঠাৎ ছন্দপতনের কারনে ঘরবন্দি ছাত্রছাত্রীদের মাঝে যাতে প্রভাব না পড়ে এই বিষয়ে খবরাখবর ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়ার চেষ্টা করেছি।
তিনি আরও বলেন, ‘কিভাবে শুরু করবো, কার কাছে যাবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। ঠিক সে সময়ে আমার বাবা-মায়ের উপদেশ ও অনুপ্রেরণা পেয়ে আমার মনোবল ও সাহস বেড়ে যায়। কঠিন এ সময়ে পথ খুঁজে পাই নিজ গ্রামের কর্মহীন খেটে খাওয়া মানুষদের পাশে দাঁড়াবার। শিক্ষায় পিছিয়ে জনপদের শিক্ষার্থীদের পরিবারের জন্য কিছু করার। তাদের উপদেশ ও অনুপ্রেরণা পেয়ে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
‘মানুষ মানুষের জন্যে’ এ কথা বুকে ধারণ করে গত ২০ মার্চ থেকে গর্জনিয়া ইউনিয়নের প্রায় ৪৪ গ্রামের হতদরিদ্র মানুষের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। নিজের জমানো টাকা, পারিবারিক কৃষি জমির লাগিয়তের টাকায় এই ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। চাচাতো ভাই শাহরান চৌধুরী মারুফ, ছোট মামা আমিন উল্লাহ চৌধুরী জিকু ৩০ পরিবারের জন্য ৫ কেজি করে চালের টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। এ ছাড়াও বিদেশ থেকে অনেকে ফোন করেছেন। দশ প্রবাসী পরিবারকেও খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছি। আমেরিকা প্রবাসী বড় মামা সাইফুল্লাহ চৌধুরী লেবু’র সঙ্গে আলাপ করে পবিত্র রমজানে অন্তত ৩০০ পরিবারকে ইফতার সামগ্রী দেয়ার চেষ্টা করছেন বলেও জানান তিনি।
সাংবাদিক হাফিজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, করোনা সচেতনতায় উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করছি। শুরু থেকেই নিজেই মাইক হাতে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণয় চাকমা, গর্জনিয়া পুলিশ ফাঁড়ির আইসি পুলিশ পরিদর্শক মো. আনিছুর রহমান ও এনএসআই প্রতিনিধি আবু হানিফ ভাইয়ের সাথে সার্বিক সমন্বয় রেখে হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত ও সরকারিভাবে খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করতে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।