অনলাইন ডেস্কঃ
খিদার যন্ত্রণায় শিশুদের চিৎকার করে কান্না সইতে না পেরে মাথার চুল বিক্রি করে দুধ কিনে এনেছেন বলে জানিয়েছেন দরিদ্র এক মা।
সাভার পৌর এলাকার ব্যাংক কলোনি মহল্লার নান্নু মিয়ার টিনশেড ঘরে ভাড়া থাকেন দুই সন্তানের জননী সাথী বেগম নামে ওই নারী।
মহামারীর আকারে হানা দেওয়া নতুন করোনাভাইরাস পরিস্থিতির অবনতিতে রাজধানী ঢাকার পাশের এলাকা সাভারেও চলাচলে কড়াকড়ি নজর প্রশাসনের। এতে বন্ধ হয়ে গেছে ‘দিন আনে দিন খায়’ মানুষের সামান্য রোজগারের পথটিও।
সরকার সারা দেশের দুস্থদের মাঝে ত্রাণ বিলি করলেও, তবে সব অসহায়ের ঘরে তা পৌঁছেনি বলে খবর আছে। তেমন এক পরিবারের সন্ধান পেয়েছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, ওই ব্যাংক কলোনিতে সাথীদের ভাড়া করা ছোট্ট টিনের ঘরে কাঁথা বিছানো একটা চৌকি পাতা। মেঝেতে ২/৩টা পাতিল। ঘরের এক কোণে টানানো দড়িতে ঝুলছে ক-খানা মিলন জামা-কাপড়। ঘরে একটা বিজলি বাতি থাকলেও নেই কোনো ফ্যান। সে সময় তার স্বামী ছিলেন না ঘরে। তার আড়াই বছরের ছেলেটি চৌকিতে বসা।
আর এক বছর বয়সী বাচ্চাকে কোলে নিয়ে কথা বলেন সাথী। তিনি জানান, গত শনি-রোববার তাদের ঘরে রান্নার করার মতো কিছুই ছিল না। ত্রাণের সন্ধানে অনেকের কাছে গিয়েছেন, তবে মেলেনি কোনো সহায়তা।
অভাবের তাড়ায় মাস চারেক আগে ময়মনসিংহের এক গ্রাম থেকে প্রথমে রাজধানীর মিরপুরে এসে ওঠে এ পরিবারটি। দেড় মাস আগে সেখান থেকে ব্যাংককলোনির এ টিন শেড বাড়িতে এসে ওঠেন তারা।
সাথী বেগমের স্বামী মানিক মাটি কাটার কাজ করতেন। পরে রিকশা চালাতে শুরু করেছেন। সামাজিক দূরত্ব রক্ষায় সব বন্ধ থাকায় তার রিকশাচালানো বন্ধ।
এতে দুটি শিশু নিয়ে রোজগারহীন এ পরিবার বিপদে পড়েছে। এ মহল্লায় নতুন আসায় কারো সাথেই তাদের পরিচয় হয়নি। ফলে ছিটেফোঁটা ত্রাণও জুটছে তাদের বলে জানান সাথী।
গত সোমবার দুপুরে ত্রাণের সন্ধানে গিয়ে একজনের সাথে তার পরিচয় হয়; যিনি চুল কেনাবেচার কাজ করেন। তার সাথে আলাপের এক পর্যায়ে সাথী তার মাথার চুল দেখালে হকারটি শ-চারেক টাকা মিলবে বলে আশ্বাস দেন তাকে। তবে চুল কেটে দেওয়ার পর ১৮০ টাকা ধরিয়ে দিয়ে চম্পট দিয়েছেন সেই হকার বলে জানান তিনি।
সেই টাকায় শিশুর জন্য দুধ, দুই কেজি চাল কিনে আনেন বললেন সাথী।
সাথী বেগম বলেন, “বাড়ির মালিক এখানে থাকেন না। এখানে নতুন আসার কারণে তেমন কারো সাথে পরিচয়ও নেই। প্রতিবেশী ভাড়াটিয়ারা বাসা বাড়িতে কাজ করেন, তাদেরও একই অবস্থা।”
তাদের প্রতিবেশী আরেক ভাড়াটিয়া রিকশা চালক সুমন জানান, লকডাউন হয়ে যাওয়ার পর সড়কে কোনো যাত্রী নেই। তারাও কোনো রকমে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ওই নারীকে সহযোগিতা করার সামর্থ তাদেরও নেই।
এ বিষয়ে সাভার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, “গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে ঘটনাটি শুনেছি। ঘটনাস্থল গিয়ে ভুক্তভোগী পরিবারটিকে সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হবে।”
হতদরিদ্রদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণে ব্যস্ত সময় কাটানো সাভার পৌর মেয়র হাজী আব্দুল গনি এই নারীর চুল বেচে বাচ্চার দুধ কেনার খবর জানেন না বলে জানিয়েছেন।
সূত্রঃ বিডিনিউজ