খালেদ শহীদ, রামুঃ
সকলের সুস্থতাই আমাদের কাম্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এ অঙ্গীকারে করোনায় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ব দূর্যোগ করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। সরকারি নির্দেশনায় কক্সবাজারেও স্থানীয় প্রশাসনের সাথে কঠোর অবস্থানে রয়েছে রামু সেনানিবাসের ১০ পদাতিক ডিভিশন। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে জনগণকে সচেতন করতে গত ৮ এপ্রিল থেকে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। পর্যটন নগরী কক্সবাজারকে লকডাউন ঘোষণার পর সেনাবাহিনীর কার্যক্রম আরো বহুগুণে বৃদ্ধি করা হয়। জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট স্থাপন সহ জেলা ও উপজেলায় টহল কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হয়েছে। কোথাও মানুষের সমাগম করতে দেয়া হচ্ছেনা। জনসাধারণকে দ্রæত স্থান ত্যাগ করে, ঘরে থাকার নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হতে এবং নির্দিষ্ট দোকানপাট ছাড়া সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও।
টহলরত সেনা কর্মকর্তারা জানান, করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের উপর যে দায়িত্ব অর্পিত হয়ে, তা শতভাগ পালনে সচেষ্ট রয়েছেন সেনাসদস্যরা। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানবতার সেবায় যুদ্ধকালীন সময়ের মতোই তারা প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। দেশের স্বার্থে সকল প্রকার কর্মকান্ডে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে এবং ভবিষ্যতেও এই সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
রামু সেনানিবাসের সূত্রে জানা গেছে, মানুষকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বিষয়ে সচেতন করা, চিকিৎসা সহায়তা প্রদান, জীবাণুনাশক কার্যক্রম পরিচালনা ও লকডাউন বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় কাজ করছে রামু সেনানিবাসের ১০ পদাতিক ডিভিশনের জোয়ানরা। পাশাপাশি প্রান্তিক মানুষের কাছে নিজেদের রেশন বাঁচিয়ে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছেন। সংকটময় এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে হতদরিদ্র মানুষের পাশে থাকার সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছে সেনাবাহিনী। জনসচেতনতায় স্বাস্থ্য সম্মত মাক্স ও সেনিটাইজার বিতরণ, সেনাবাহিনীর গাড়ি দিয়ে রাস্তায় বিশুদ্ধ পানি ছিটানো, কক্সবাজার প্রবেশ পথে জরুরী প্রয়োজনে প্রবেশকৃত গাড়িসমূহে জীবাণুনাশক ছিটানো হচ্ছে। জনসচেতনতায় মাইকিং করে পথচারীদের ফুল দিয়ে ঘরে ফেরানোসহ নানাবিধ কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে ১০ পদাতিক ডিভিশনের সেনাসদস্যরা।
সেনা সদস্যরা জানান, কক্সবাজার জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে, কর্মহীন হতদরিদ্র মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। প্রকৃত অভাবগ্রস্তদের চিহ্নিত করে সেনাবাহিনী নিজেদের রেশন বাঁচিয়ে চাল, ডাল, আটা, আলু, পিঁয়াজ, তেল, লবণসহ নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছিন্নমূল ও অসহায় মানুষদের হাতে পৌঁছে দেয়া অব্যাহত রেখেছেন। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সম্যক জ্ঞান ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রচারণা, বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের না হতে এবং বেশি বেশি হাত ধোয়া, মাক্স ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে অনুরোধ করা হচ্ছে। কক্সবাজারের রামু ও পেকুয়া উপজেলায় অসহায় মানুষকে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে রামু সেনানিবাসের মেডিকেল টিম। এসময় অসহায় মানুষদের স্যালাইন ও শিশুদের চিপস, চকলেট বিতরণ করেন সেনাসদস্যরা।
রামু সেনানিবাস সূত্রে আরও জানা যায়, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার ৩৪ টি ক্যাম্পের ১১ লক্ষ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মায়ানমার নাগরিকদের করোনা ভাইরাস সচেতনায় কাজ করছে সেনাবাহিসীর ১০ পদাতিক ডিভিশন। রোহিঙ্গা মাঝি ও স্বেচ্ছাসেবকদের সাথে বৈঠক, এনজিও সংস্থার মাধ্যমে বার্মিজ ও ইংরেজি ভাষায় সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ এবং বার্মিজ ও ইংরেজি ভাষায় সচেতনতামূলক মাইকিং কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে সেনাবাহিনী। এছাড়াও নতুন চেকপোষ্ট স্থাপন করে যৌথ টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। সীমিত করা হয়েছে বহিরাগতদের চলাচলও।