ধর্ম ডেস্কঃ
মহান আল্লাহ তাআলার কৃপায় পবিত্র মাহে রমজানের দিনগুলো সুস্থতার সঙ্গে রোজা রাখার তাওফিক লাভ করছি। এখন মাগফেরাতের দশকের প্রায় শেষ প্রান্তে আমরা রয়েছি। এরপরই শুরু হবে নাজাতের দশক।
রোজা পালন সম্পর্কে যেমন রয়েছে মহান আল্লাহ তাআলার নির্দেশ আবার রোজা পালনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন হয়। অপদিকে এই রোজা আমাদের অসংখ্য পার্থিব-কল্যাণেও ভূষিত করে। যেভাবে হাদিসে উল্লেখ আছে- ‘তোমরা রোজা রাখ, তাহলে সুস্থ্য থাকতে পারবে।’
এছাড়াও রোজা যে মানব জাতির রোগমুক্তির কারণ, তাও বহু হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। চিকিৎসাবিজ্ঞানও আজ এ বিষয়ে রোজার অপরিহার্যতা স্বীকার করছে।
আমরা জানি, মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, তার দৈহিক গঠন-প্রকৃতি ও স্থিতিশীলতায় অবদান রাখে সত্য, কিন্তু এই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর কাজের একটা সীমাবদ্ধতা আছে। যেমন সীমাবদ্ধতা আছে মানুষের দৈহিক কাজ-কর্মে। উদাহরণস্বরূপ-
‘কোনো মানুষ যখন অনেক সময় পর্যন্ত কাজ করতে থাকে, তখন সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। সে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিতে পারে, তাহলে আবার কাজে উৎসাহ-উদ্দীপনা ও সতেজতা ফিরে পায়। ঠিক তেমনিভাবে মানুষের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, যেমন- জিহ্বা, লালাগন্থি, হৃদপিণ্ড, কিডনি, পাকস্থলী, কোষ, লিভার, মূত্রথলি, প্রভৃতিরও কাজের একটা নির্দিষ্ট প্রকৃতি, পরিমাণ ও সীমাবদ্ধতা আছে।
অর্থাৎ মানুষ যখন সকাল ও বিকালের নাস্তাসহ দুপুর ও রাতে খাবার খায়, তখন স্বভাবতই সর্বাবস্থায় তার উদর পূর্ণ থাকে বা উদরে খাদ্যকণা অবস্থান করে থাকে। আর এই খাদ্যকণাগুলোকে হজম করার জন্য মানবদেহের অভ্যন্তরীণ সামান্য লালাগ্রন্থি থেকে শুরু করে পাকস্থলী পর্যন্ত অনবরত কাজ করে থাকে।
এমনকি পেটে যদি একটি সরিষা পরিমাণ খাদ্যকণাও অবশিষ্ট থাকে, তাহলেও এই সামান্য খাদ্যকণাকে হজম করার জন্য অভ্যন্তরীণ সবকিছুই একসঙ্গে কাজে লেগে যায়। ফলে এগুলো কখনও ন্যূনতম বিশ্রামের সুযোগও পায় না বরং ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ে।
ফলশ্রুতিতে বদহজম থেকে শুরু করে উচ্চ-রক্তচাপ, বহুমূত্র, পিত্তথলিতে পাথর, বাত, হাঁপানি, পেপটিক আলসার, করোনারি হৃদরোগ ও মাইগ্রেইনসহ অনেক জটিল রোগ হতে পারে।
তবে এক্ষেত্রে রমজান মাসজুড়ে রোজা পালন এমন একটি মাধ্যম, যা মানবদেহের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সামঞ্জস্য রক্ষাসহ সব ধরনের রোগ প্রতিরোধে সক্ষম। কারণ পূর্ণ এক মাস রোজা রাখার সময় ওই সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিদিন বেশ কয়েক ঘণ্টা বিশ্রামের সুযোগ পায়।
ফলে রমজান পরবর্তী সময়ে এগুলো আরও শক্তি নিয়ে মানবদেহে কাজ করতে পারে। এমনকি অনবরত খাদ্যগ্রহণে মানবদেহের পেটে এক ধরনের বিষাক্ত বর্জ্য-পদার্থের সৃষ্টি হয়, যা পানাহার বা রোজা ব্যতিত পরিহার সম্ভব নয়। চিকিৎসক ও গবেষকগণ অত্যন্ত সূক্ষ্ণভাবে রোজার ওপর গবেষণা করে দেখেছেন যে, রোজা মানবজীবনের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সুস্থতা, মানসিক-শান্তি ও প্রবৃদ্ধির অপরিহার্য নিয়ামক।
আজ বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এ দাবি খুবই যৌক্তিক। মানবদেহের যকৃতের অবসর গ্রহণের সময়কাল বছরে কমপক্ষে এক মাস হওয়া একান্ত বাঞ্ছনীয়। আর যেহেতু উপবাস ব্যতিত যকৃতের অবসর সম্ভব নয়, তাই পুরো এক মাস রোজাই এর সর্বোৎকৃষ্ট মাধ্যম। রক্তের বিশুদ্ধতা অর্জনে ও রক্তনালীতে চর্বি জমানো থেকে বিরত রাখতে রোজার ভূমিকা অপরিহার্য।
এছাড়াও রোজা দেহের অণুকোষ ও প্রজনন অঙ্গগুলোয় নব জীবনীশক্তি প্রবাহিত করে। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘তোমরা যদি অনুধাবন কর, তাহলে তোমাদের জন্য এটা উত্তম যে, তোমরা রোজা রাখবে।’ (সুরা বাকারা: আয়াত ১৮৪)
সাধারণত আমরা দেখতে পাই, রমজান মাসে হাসপাতাল, ক্লিনিক ও প্রাইভেট প্র্যাকটিসে রোগীর উপস্থিতি তুলনামূলক অনেক কম হয়। এতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, বরকত ও কল্যাণময় রমজান মাসে রোগব্যাধি কম প্রকাশ পায়।
তাই বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, রোজা রাখার ফলে আমরা যেভাবে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভ করতে পারি অপর দিকে দৈহিকভাবেও আমরা সুস্থ থাকতে পারি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রমজানের অবশিষ্ট দিনগুলোতে বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগিতে রত থেকে রোজার শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক উপকারিতা লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
সূত্রঃ জাগোনিউজ