অনলাইন ডেস্কঃ
করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সামনে থেকে যারা লড়াই করছেন সেই স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষায় ‘জীবাণুমুক্তকরণ চেম্বার’ তৈরি করেছেন বুয়েটের একদল সাবেক শিক্ষার্থী।
রোগীর কাছ থেকে আসার পর চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা এই চেম্বারের ভেতর ৩০ সেকেন্ড অবস্থান করলেই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিমুক্ত হবেন বলে দাবি করেছেন তারা।
বুয়েটের ১৯৯৭ ব্যাচের বিদেশফেরত ১১ জন প্রকৌশলী, স্থাপত্যবিদ ও পরিকল্পনাবিদ ‘SAFE2DOFF’ নামের এই জীবাণুমুক্তকরণ চেম্বার তৈরি করেছেন। এই কাজে যুক্ত ছিলেন বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এ বি এম তৌফিক হাসান।
বুধবার কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে প্রথমবারের মতো সফলভাবে এই চেম্বার বসানো এবং এর ব্যবহার শুরু হয়েছে বলে অধ্যাপক তৌফিক হাসান জানিয়েছেন।
এক বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে অনেক চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন। এই দুর্যোগের শুরু থেকেই বুয়েটের ’৯৭ ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থীরা মিলে ডাক্তারদের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ শুরু করা হয়েছিল। অবশেষে সফলভাবে কাজটি করা গেছে।
“প্রথমে আমরা এটি কুয়েত মৈত্রী হসপিটালে ইনস্টল করেছি। আজকে থেকে সেখানে ব্যবহার শুরু হয়েছে।”
হাসপাতালগুলোকে বিনামূল্যে এই চেম্বার দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী কিছু দিনের মধ্যে আরও দুটি চেম্বার তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে।
অধ্যাপক তৌফিক হাসান বলেন, বুয়েটের মেকানিক্যাল ল্যাবে পাম্প ব্যবহার করে জীবাণুনাশকের মিশ্রণে ‘মিস্ট’ তৈরি করে চেম্বারের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়েছে।
“এই সেন্সর-বেসড অটোমেটিক চেম্বার ব্যবহারে চিকিৎসক/স্বাস্থ্যকর্মীদের সংক্রমিত হওয়ার কোনো ঝুঁকি থাকবে না।”
বিভিন্ন গবেষণার তথ্য-উপাত্ত এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, সিডিসি, এফডিএ, ইপিএ’র নির্দেশনা অনুসারে এই চেম্বারের অপারেশনাল প্রোটোকল তৈরি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
চেম্বার তৈরিতে সম্পৃক্ত প্রকৌশলী সামিউন নবী বলেন, “ডাক্তারদের সাথে যোগাযোগকালে আমরা জানতে পারি যে, অনেক স্বাস্থ্যকর্মীই দ্রুত পিপিই ছাড়তে গিয়ে জীবাণু সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েন। এই ঝুঁকি কমানোর জন্য পিপিই ছাড়ার আগে প্রাথমিকভাবে জীবাণুমুক্ত করার কাজে একটি সিস্টেম ডেভেলপ করতে পারলে স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা বেশ কিছুটা উন্নত হতে পারে।
“এই প্রয়োজন মেটানোর জন্যই এই চেম্বারটি তৈরি করা হয়েছে।”
শুধু পরিপূর্ণ পিপিই (গাউন, এন-৯৫ মাস্ক, গগলস ও গ্লাভস) পরিধানরত অবস্থায় এই চেম্বার ব্যবহার করা যাবে বলে জানান তিনি।
বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থী এবং সিলেটের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কিটেকচার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইফতেখার রহমান চেম্বারটির নকশা করেছেন।
এই চেম্বার চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের আইসিইউ প্রধান ডা. মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান।
বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় এই চেম্বার প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়া বিসিএল ফ্লুইড সিস্টেম ও সামুদা কেমিকেলস থেকে যথাক্রমে মটর ও রাসায়নিক সরবরাহ করা হয়েছে।
সূত্রঃ বিডিনিউজ