ক্রীড়া ডেস্কঃ
করোনা মহামারির কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সব ধরনের খেলাধুলা। ইউরোপ তো বলতে গেলে পুরো ঘরবন্দি হয়ে গিয়েছিল। গত দুই মাস স্টেডিয়ামমুখো হয়নি কোনো খেলোয়াড়, দর্শক-সমর্থক। দুই মাস পুরোপুরি লকডাউনে থাকার পর করোনাভাইরাসকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে অবশেষে ইউরোপের মাটিতে গড়াতে যাচ্ছে ফুটবল লিগ।
করোনাকে পেছনে ঠেলে দিয়ে সবার আগে ইউরোপে ফুটবল লিগ চালু করতে যাচ্ছে জার্মানি। দেশটিতে এখনও প্রতিদিন শত শত করোনা রোগি সনাক্ত হচ্ছে। মৃত্যুও বরণ করছে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক। এখনও পর্যন্ত জার্মানিতে করোনা আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজারের বেশি মানুষ। মৃত্যুবরণ করেছে প্রায় ৮ হাজার মানুষ।
তবে ইউরোপের অন্যদেশগুলোর তুলনায়, জার্মানিতে করোনা আক্রান্তের চেয়ে মৃত্যুর হার অনেক কম। তারওপর, বেশকিছুদিন ধরে দেশটিতে করোনা সংক্রমণও অনেক নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দেশের সব নাগরিকের ব্যাপকহারে টেস্ট এবং করোনারোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ফলেই ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স কিংবা ইংল্যান্ডের চেয়েও দ্রুততার সঙ্গে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম হয়েছে তারা।
ইউরোপের সেরা ৫টি লিগের অন্যতম জার্মান বুন্দেসলিগা। সবগুলোর মধ্যে সবার আগে করোনা সত্ত্বেও পূনরায় ফুটবল লিগ শুরু করতে যাচ্ছে তারা। পুরোপুরি দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে খেলাগুলো। যদিও সরাসরি সম্প্রচার হবে টিভিতে। যদিও এখনও এই লিগ শুরু কার নিয়ে অনেক অনিশ্চয়তা এবং উদ্বেগ রয়েছে।
জার্মান সেকেন্ড ডিভিশনের ক্লাব ডায়নামো ড্রেসডেনের পুরো দলকেই এরই মধ্যে দুই সপ্তাহের কোয়ারেন্টাইনে যেতে হয়েছে। কারণ, দলটিতে বেশ কয়েকজনকে করোনা পজিটিভ হিসেবে পাওয়া গেছে। তবুও বুন্দেসলিগা কর্তৃপক্ষ তাদের লিগের বাকি ৯টি ম্যাচ শেষ করার জন্য পুনরায় শুরু করতে যাচ্ছে।
যদিও পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে খেলা আয়োজনের চেষ্টা করছে তারা। এমনকি জার্মানির জাতীয় দলের কোচ জোয়াকিম লো’কে পর্যন্ত গ্যালারিতে বসার অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। জাতীয় দলের জন্য ফুটবলার বাছাই করতে বুন্দেসলিগার বহু ম্যাচে তিনি গ্যালারিতে থেকেছেন।
শনিবার বুন্দেসলিগা শুরু হলেও, আজ থেকে শুরু হচ্ছে শুক্রবার জার্মান ফুটবল লিগ। বুন্দেসলিগার জন্য ৫২ পাতার নির্দেশিকা তৈরি হয়েছে। সেখানে বিস্তারিতভাবে লেখা হয়েছে, ২১৩ জনের বেশি লোক মাঠে থাকবে না। গ্যালারিতে একজনও নয়। টিভি কর্মীরা কোথায় বসবেন, তাও পরিষ্কার করে বলা হয়েছে। ম্যাচের মাঝে মাঝে বল সানিট্যাইজড করতে হবে।
কোনো সংবাদ সম্মেলন হবে না। মিক্সড জোনে কাউকে দাঁড়াতে দেওয়া হবে না। ম্যাচের পর টিভি সাংবাদিকদের জন্য সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা থাকবে; কিন্তু টিভি ক্যামেরা ও সংশ্লিষ্ট ফুটবলারের মাঝের পাতলা স্ত্রিন থাকবে।
গোলের সেলিব্রেশন করা যাবে, শুধু পায়ে পায়ে ঠেকিয়ে। অথবা কনুই দিয়ে। ম্যাচের আগে ও পরে হ্যান্ডশেক বন্ধ। বন্ধ ম্যাচের আগে গ্রুপ ছবি তোলাও। তবে ফিফার নতুন পরিবর্তিত নিয়ম মানা হবে। অর্থ্যাৎ বদলি খেলোয়াগ পাঁচজন করতে পারবে ক্লাবগুলো।
মিডিয়া প্রবেশ বলতে হাতেগোনা। চারজন ফটোগ্রাফার। সাংবাদিক সব মিলিয়ে দশের বেশি নয়। তা নিয়ে ব্যাপক অশান্তি জার্মানি মিডিয়াগুলোতে। ম্যাচের আগে ফুটবলাররা হোটেল রাত কাটিয়ে নামবে মাঠে। প্রতি দু’সপ্তাহ অন্তর কোভিড-১৯ টেস্ট করাতে হবে ফুটবলারদের। এরমধ্যে যদি কোনও ফুটবলার কোভিড টেস্ট পজেটিভ আসে। তাহলে সংশিষ্ট ফুটবলারকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। পুরো দলকে নয় দিনের জন্য কোয়ারান্টিনে চলে যেতে হবে।
প্রথম দিনই ৬টি ম্যাচে মোট ১২টি দল মাঠে নামবে বুন্দেসলিগায়। বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মুখোমুখি হবে বরুশিয়া ডর্টমুন্ড এবং শাল্কেজিরোফোর, এফসি অগসবার্গ মুখোমুখি হবে উলফসবার্গের, ফরচুনা ডুসেলড্রপ মুখোমুখি হবে এসপি প্যাডারবর্নের, আরবি লেইপজিগ মুখোমুখি হবে এসসি ফ্রেইবার্গের, হফেনহেই মুখোমুখি হবে হার্থা বার্লিনের। এছাড়া রাত সাড়ে ১০টায় এইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্ট মুখোমুখি হবে বরুশিয়া মনচেনগ্ল্যাডবাখের।
সূত্রঃ জাগোনিউজ