অনলাইন ডেস্কঃ
বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি ঘনীভূত হয়ে পরিণত হয়েছে ঘূর্ণিঝড়ে, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘আমফান’।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চয় করে এ ঘূর্ণিঝড় এগিয়ে যাচ্ছে ভারতের ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের দিকে।
বর্তমান প্রবণতা বজায় থাকলে এ ঝড়ের উপকূলের কাছাকাছি পৌঁছাতে তিন থেকে চার দিন সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার সাইক্লোন সংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থা এসকাপে নির্ধারিত তালিকা থেকে ধারাবাহিকভাবে এ অঞ্চলের ঝড়ের নাম দেওয়া হয়। ‘আমফান’ নামটি নেওয়া হচ্ছে থাইল্যান্ডের প্রস্তাবিত নামের তালিকা থেকে।
আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন বলেন, দক্ষিণ পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি শনিবার রাত ৯টার দিকে ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নেয়।
সে সময় এটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে; কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে; মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৯০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।
ওই সময় ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল।
মনোয়ার হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড় আমফান আরও ঘণীভূত অগ্রসর হবে উত্তর পশ্চিম দিকে। ১৯ অথবা ২০ মে ভারতের ওড়িশা বা পশ্চিমবঙ্গ এলাকা দিয়ে এ ঝড় উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এর প্রভাবে পড়তে পারে বাংলাদেশেও।”
ভারতের আবহাওয়া অফিস বলছে, বাংলাদেশ সময় রোববার সকাল নাগাদ সেটি প্রবল ঘূর্ণিঝড় (সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম) এবং মধ্যরাতে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে (ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম) পরিণত হতে পারে। তখন বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার।
পরে শক্তি আরও বাড়িয়ে তা প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের রূপ পেতে পারে সোমবার মধ্যরাত নাগাদ। তখন বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১৯০ কিলোমিটার বা তার বেশি।
ঘূর্ণিঝড়টি প্রাথমিকভাবে উত্তর-উত্তর পশ্চিম দিকে এগোনোর পর সোমবার সামান্য উত্তর-উত্তর পূর্ব দিকে মোড় নিতে পারে। ১৮ থেকে ২০ মের মধ্যে সেটি পশ্চিমবঙ্গ উপকূল এবং তৎসংলগ্ন ওড়িশা উপকূলে পৌঁছাতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ভারতের আবহাওয়া অফিস।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর বিক্ষুব্ধ থাকায় বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস এখন প্রতি ছয় ঘণ্টা অন্তর বিশেষ বুলেটিনে সর্বশেষ অবস্থা জানাচ্ছে। পরিস্থিতি পযবেক্ষণ করে সময় সময় সতর্কতার মাত্রা বাড়ানো হবে বলে জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান জানান।
এদিকে মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, রাঙ্গামাটি, রাজশাহী, পাবনা এবং পটুয়াখালী অঞ্চলসহ খুলনা বিভাগের উপর দিয়ে এখনও মৃদু তাপ প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তা রোববারও অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
শনিবার যাশোরে দেশের সর্বোচ্চ ৩৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। রাজধানীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রোববারের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া এবং বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র আকাশ আংশিক মেঘলা এবং আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় প্রস্তুতিও থাকছে
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর মহাপরিচালক মো. মোহসীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “করোনাভাইরাসের দুর্যোগের মধ্যেই আমরা ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে আমাদের।”
ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতির পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠকও চলছে বলে জানান তিনি।
মোহসীন বলেন, “লোকজনকে সরাতে হলে তখন করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধের বিষয়েও সজাগ রয়েছি আমরা। উপকূল সম্পৃক্ত ১৯ জেলায় যথাসময়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে; আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যাও বাড়াতে হবে।”
নাম কেন ‘আমফান’
আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয় বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার সাইক্লোন সংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থা এসকাপ। এ অঞ্চলের ১৩টি দেশের দেওয়া নামের তালিকা থেকে পর্যায়ক্রমে নতুন নতুন ঘূর্ণিঝড়ের নাম ঠিক হয়।
ঘূর্ণিঝড়ের গতিপ্রকৃতি, তীব্রতা সহজে মানুষের কাছে তুলে ধরতে দেড়যুগ আগে এ অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেওয়ার প্রচলন শুরু হয়। কোনো নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে তখন তালিকার ক্রম মেনে নাম বরাদ্দ হয়।
সে অনুযায়ী এ অঞ্চলে সাড়রে সৃষ্ট নতুন ঘূর্ণিঝড়টির নাম হয়েছে আমফান; এটি থাইল্যান্ডের দেওয়া নাম।
২০০৪ সালে সদস্য দেশগুলোর প্রস্তাবিত নাম নিয়ে ৬৪টি নামের যে প্রথম তালিকাটি বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা দিয়েছিল, আমফান তার ৬৪তম, অর্থাৎ সর্বশেষ নাম।
আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস জানিয়েছেন, এসকাপের সর্বশেষ সভায় ১৩টি দেশের দেওয়া ১৬৯টি নাম নিয়ে ঘূর্ণিঝড়ের নামের নতুন তালিকা অনুমোদন করা হয়েছে। আমফানের পর বাংলাদেশের ‘নিসর্গ’ দিয়েই সেই তালিকার শুরু হবে।
এসকাপভূক্ত আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের দেশগুলো হল- বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, আরব আমিরাত ও ইয়েমেন।
সূত্রঃ বিডিনিউজ