অনলাইন ডেস্কঃ
দেশে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তাণ্ডবে মোট এক লাখ ৭৬ হাজার ৭ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেছেন, ‘এসব জমিতে থাকা বিভিন্ন ফসলের ৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতি হয়েছে।’
বৃহস্পতিবার (২১ মে) ঘূর্ণিঝড় আম্ফান পরবর্তী কৃষির ক্ষয়-ক্ষতি বিষয়ে অনলাইন প্রেস ব্রিফিং তিনি এ কথা বলেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘ইতিমধ্যে অধিকাংশ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। তাছাড়া গত ১৫ মে আমরা জানতে পারি যে, এ ঘূর্ণিঝড় আসবে। তাই আমরা প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পেরেছিলাম। তাই ক্ষতির পরিমাণটা অনেকাংশে কম হয়েছে। তবে এর পরও দেশের ৪৬ জেলায় এক লাখ ৭৬ হাজার ৭ হেক্টর জমির ফসল বিভিন্ন হারে ক্ষতি হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ে কৃষিতে ক্ষতি কমিয়ে আনার জন্য কৃষককে দেয়া হয়েছিল প্রয়োজনীয় পরামর্শ। তাই আম্ফানের ফলে কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়নি। কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতি না হলেও অল্প কিছু কৃষিজ ফসলের বিশেষ করে ফলের মধ্যে আম, লিচু, কলা এছাড়া সবজি তিল, অল্প কিছু বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘ইতিমধ্যে হাওরের শতভাগ ধান কাটা হয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলের ১৭টি জেলার শতকরা ৯৬ ভাগসহ সারা দেশে ইতিমধ্যে ৭২ শতাংশ বোরো ধান কাটা হয়েছে। খুলনা অঞ্চলে প্রায় ৯৬ থেকে ৯৭ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। সাতক্ষীরাও ৯০ ভাগের বেশি ধান কাটা হয়েছে। পটুয়াখালীরও প্রায় সব ধান কাটা হয়েছে। তবে ভোলাতে ধানের ক্ষতি হয়েছে, তবে সেটা খুব বেশি নয়। এছাড়া চট্টগ্রাম পর্যন্ত সব এলাকাতে ধানের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘আমের মধ্যে সাতক্ষীরা জেলার আমগুলো একটু বেশি ক্ষতি হয়েছে। সাতক্ষীরার ৬০ থেকে ৭০ ভাগ আম নষ্ট হয়েছে। ওই এলাকার ৪ হাজার হেক্টর জমির আমের মধ্যে ইতিমধ্যে এক হাজার হেক্টর জমির আম নামিয়ে নিয়েছে। বাকি ৩ হাজার হেক্টরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ জন্য আমরা ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছি যে, এ আমগুলো কিনে আমরা ত্রাণের মাধ্যমে দিতে পারি কি না।’
বিভিন্ন ফসলের শতকরা হার তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘৪৭ হাজার হেক্টরের বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে শতকরা ১০ ভাগ। ৩ হাজার ২৮৪ হেক্টর জামির ভুট্টার ক্ষতি হয়েছে ৫ শতাংশ। ৩৪ হাজার ১৩৯ হেক্টর জমির পাটের ক্ষতি হয়েছে শতকরা ৫ ভাগ। পানের ক্ষতি হয়েছে গড়ে শতকরা ১৫ ভাগ ভাগ তবে কোনো কোনো এলাকা এ ক্ষতি বেশি হয়েছে।’
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘৪১ হাজার ৯৬৭ হেক্টর জামির সবজির ক্ষতি হয়েছে ২৫ শতাংশ। এক হাজার ৫৭৫ হেক্টর জমির চিনা বাদামের ক্ষতি হয়েছে ২০ শতাংশ। ১১ হাজার ৫০২ হেক্টর জমির তিলের ক্ষতি হয়েছে ২০ শতাংশ। ৭ হাজার ৩৮৪ হেক্টর জমির আমের ক্ষতি হয়ে ১০ ভাগ। ৪৭৩ হেক্টর জমির লিচুর ক্ষতি হয়েছে ৫ শতাংশ। ৬ হাজার ৬০৪ হেক্টর জমির কলার ক্ষতি হয়ে শতকরা ১০ ভাগ। এক হাজার ২৯৭ হেক্টর জমির পেঁপের ক্ষতি হয়েছে ৫০ ভাগ। ৩ হাজার ৩০৬ হেক্টর জমির মরিচের ক্ষতি হয়েছে শতকরা ৩০ ভাগ। ৬৪০ হেক্টর জমির সয়াবিনের ক্ষতি হয়েছে ৫০ শতাংশ। ৭ হাজার ৯৭৩ হেক্টর জমির মুগ ডালের ক্ষতি হয়েছে ৫০ শতাংশ। মোট এক লাখ ৭৬ হাজার ৭ হেক্টর জমির ফসল বিভিন্ন হারে ক্ষতি হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বিভিন্নভাবে কৃষকদের এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করবে সরকার। কারোনাভাইরাসের কারণে সরকার খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্ব দিচ্ছে। তাই টাকার কোনো সমস্যা হবে না। অনেক পান চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের আমরা লিস্ট করে ক্ষতিপূরণ দিব। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের যারা আমন চাষ করবে তাদের বিনা মূল্যে বীজ সারসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ দেয়ার চেষ্টা করব। আগেও দেয়া হয়েছে এবারও দেয়া হবে।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘যেসব এলাকায় বাঁধ ভেঙে জোয়ারে পানি চলে এসেছে এগুলো লবণাক্ত পানি। তাই এসব জমিকে আবাদযোগ্য করার জন্য আরও দুই বছর সময় লাগবে। সেখানেও আমাদের সহযোগিতা দেয়া হবে। টাকাতে ক্ষতিটা নির্ধারণ করে একদম গ্রামভিত্তিতে চাষিদের নিকট ক্ষতিপূরণ দেয়ার চেষ্টা করব। প্রতিবছর সরকার কৃষকদের ভর্তুকি দেয়ার জন্য ৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। কিন্তু আমাদের এত টাকা লাগে না। বেঁচে যাওয়া এসব টাকা এক্ষেত্রে ব্যবহারও করা হবে।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেখছিলাম যে, ঘূর্ণিঝড় আম্ফান নিয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় রিপোর্ট হচ্ছে। কিন্তু সেখানে কিছু অসংগতি ছিল। তাই আমরা প্রাথমিক একটা রিপোর্ট আজকে তুলে ধরছি। মাঠ পর্যায় থেকে নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট হয়তো দু’দিন পরে পাবেন।’
তিনি বলেন, ‘বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়সহ যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষিই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে ঘূর্ণিঝড়ে মানুষের অনেক সম্পদের ক্ষতিও হয়, অনেক সময় অনেক মানুষ মারাও যায়। আমাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে ঘূর্ণিঝড়ে ১০ লাখ মানুষ মারা গেছে।’
সূত্রঃ জাগোনিউজ