অনলাইন ডেস্কঃ
বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাব রুখতে কক্সবাজারে প্রথম লকডাউন ঘোষণা আসে ৮ এপ্রিল। এর আগে ১৮ মার্চ থেকে কক্সবাজারে পর্যটক আগমন বন্ধ করে দেয়া হয়। গন্তব্যে পৌঁছে দেয়া হয় অবস্থানরত পর্যটকদের। ধীরে ধীরে জনশূন্য এলাকায় পরিণত হয় কোলাহলপূর্ণ পর্যটন নগরী কক্সবাজার। সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ থাকায় ৩০ মে পর্যন্ত দীর্ঘ সোয়া দুই মাস আয়-রোজগার শূন্যের কোটায় এসে দাঁড়ায়। এখন লক্ষকোটি টাকার আবাসন প্রতিষ্ঠান নিয়ে চোখে ‘সরষে ফুল’ দেখছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
কক্সবাজার ট্যুরস অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের (টুয়াক) সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, এত প্রচেষ্টার পরও সারাদেশের মতো কক্সবাজারেও করোনার প্রাদুর্ভাব থামানো যায়নি। এসবের মাঝেও ৩০ মে লকডাউন শিথিল করা হলে একটা আশা জেগেছিল ধীরে ধীরে প্রাণ ফিরে পাবে পর্যটন নগরী। কিন্তু করোনার তীব্র আক্রোশে শনিবার থেকে ‘করোনা রেড জোন’ কক্সবাজারে আবারও লকডাউন শুরু হয়েছে। এতে পর্যটনের আশার গতি আবারও শ্লথ হয়ে গেছে। করোনাদুর্যোগের এই সময়ে পর্যটনেই শুধু কয়েকশ কোটি টাকার লোকশান হয়েছে। পর্যটনকেন্দ্রিক বিভিন্ন সেক্টরে বেকার হয়েছেন প্রায় অর্ধলাখ কর্মী।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, এত প্রচেষ্টার পরও কক্সবাজারে করোনার থাবা থামানো যায়নি। ৫ জুন পর্যন্ত প্রায় আট হাজার সন্দেহজনক রোগীকে পরীক্ষার আওতায় আনা গেছে। এদের মাঝে করোনা পজিটিভের সংখ্যা হাজার ছুঁই ছুঁই। করোনায় মারা গেছেন প্রায় ২০ জন। করোনা উপসর্গ নিয়েও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে করোনা ঠেকাতে সংক্রমণ পরিসংখ্যান বিবেচনায় কক্সবাজার শহরের ১০টি ওয়ার্ডকে পক্ষকালের জন্য ‘রেড জোন’ ঘোষণা করা হয়েছে । ‘রেড জোন’ এলাকার বাসিন্দারা অন্য এলাকায় যেমন যেতে পারবেন না, তেমনি অন্য এলাকার বাসিন্দারাও করতে পারবেন না ‘রেড জোনে’ চলাচল।
জেলা প্রশাসক আরও জানান, শনিবার সকাল থেকে ২০ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত কক্সবাজার শহর পক্ষকালের জন্য লকডাউন থাকবে। এমনকি বাজারও খুলবে সপ্তাহের রবি ও বুধবার দুই দিনের জন্য। তবে কেবল ওষুধের দোকানগুলো পূর্বের নিয়মে খোলা থাকবে। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে শহরের ১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডকে ইয়োলো জোন হিসেবে ভাগ করা হয়েছে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং জনপ্রতিনিধি-সচেতন যুবসমাজের সমন্বয়ে গড়া টিম কঠোরভাবে লকডাউন বাস্তবায়ন করছে। মাঠে রয়েছেন একাধিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
এদিকে জেলার দ্বিতীয় করোনাপ্রবণ এলাকা চকরিয়ায় জনগণকে নিরাপদে রাখতে পৌরসভা ও ডুলহাজারা ইউনিয়নের ২, ৩ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড আংশিক ‘রেড জোন’ ঘোষণা করা হয়েছে। এসব এলাকায় ১৪ দিনের জন্য কঠোর লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, করোনা পর্যটন নগরীর অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে বিনিয়োগকারী ব্যবসায়ীরা দেউলিয়াত্বের ঘানি টানবে। আবার করোনা রোধ করা সম্ভব না হলে জীবন সংকটাপন্ন অবস্থায় পতিত হবে সবপেশার মানুষের।
অপরদিকে, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের (কমেক) পিসিআর ল্যাব বুধবার থেকে সংস্কার কাজের জন্য বন্ধ রাখা হয়। সংস্কার শেষে শনিবার (৬ জুন) ফের চালু হওয়া ল্যাবে একদিনে ৩৪৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে ১০৮ জনের পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। এদের মাঝে সদরে ৪২ জন, টেকনাফে ৭ জন, উখিয়ায় ১৯ জন, চকরিয়ায় একজন, পেকুয়ায় দুইজন, মহেশখালীতে একজন ও রামু উপজেলায় ২২ জন রয়েছেন। এছাড়াও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে একজন, বান্দরবান সদরে ৫ জন ও রুমা উপজেলায় ৩ জন এবং চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় দুইজন রয়েছেন। বাকি ২৪০ জনের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে বলে জানিয়েছেন কমেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. অনুপম বড়ুয়া।
গত ২৪ মার্চ কক্সবাজারে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী ধরা পড়ার পর এ পর্যন্ত ৯ শতাধিক জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। যার মধ্যে মারা গেছেন ২১ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন দেড় শতাধিক এবং বাকিরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
করোনা আক্রান্তের সংখ্যার দিক দিয়ে দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে কক্সবাজারের অবস্থান সপ্তম। দেশে প্রথম অবস্থানে রাজধানী ঢাকা, দ্বিতীয় অবস্থানে চট্টগ্রাম, তৃতীয় অবস্থানে নারায়ণগঞ্জ, চতুর্থ অবস্থানে কুমিল্লা, পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে গাজীপুর, ষষ্ঠ মুন্সিগঞ্জ।
সূত্রঃ জাগোনিউজ